ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধনবাড়ী ৫০ শয্যা হাসপাতাল নামেই, বাস্তবে নেই কিছুই

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৭ মার্চ ২০১৭

ধনবাড়ী ৫০ শয্যা হাসপাতাল নামেই, বাস্তবে নেই কিছুই

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৬ মার্চ ॥ ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে ৫০ শয্যা হলেও বাস্তবে হাসপাতালে নেই একটি শয্যাও। বছরখানেক আগে ৫০ শয্যার বেড এলেও এখনও রয়েছে বাক্সবন্দী। এক্স-রে, ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। নেই কোন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী। যার ফলে ইনডোর চিকিৎসা একেবারেই চালু হয়নি। বহির্বিভাগের রোগীদের আসা-যাওয়া আর পরামর্শ নেয়াই হলো ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা জরুরী রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কেউবা আবার দালালের খপ্পরে পড়ছেন। এতে ১৩০ দশমিক ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার সোয়া দুই লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১২ সালের ২৮ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী স্থানীয় এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হককে সঙ্গে নিয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। সরেজমিনে এ হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতাল ভবনের প্রধান ফটকে জটলা দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল। হাসপাতালে ঢোকার পর নিচতলার বারান্দায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড় দেখা যায়। পাশেই দুটি কক্ষে দুজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। স্টাফ নার্স মাসুদুর রহমান জানান, প্রতিদিন ২শ’ থেকে ২৫০ রোগীর এখান থেকে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ইনডোর চালু না থাকায় গড়ে প্রতিদিন ৭-৮ রোগী অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আসিফ জানান, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এখনও ইনডোর চালু হয়নি। চালু করতে যে জনবল দরকার তা আমাদের নেই। কমপক্ষে ২১ ডাক্তার দরকার। অথচ আছে মাত্র ৩ জন। চাহিদামতো ওষুধ নেই। টাঙ্গাইল থেকে যা দেয়া হয় তা দিয়েই বিপুলসংখ্যক রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ইনডোর চালু না থাকায় জরুরী রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নিজবর্ণি গ্রামের আব্দুল জলিল, নতুনবাজার গ্রামের শাপলা বেগম, বানিয়াজান গ্রামের রোজিনা বেগম, সালেহা বেগম, আব্দুস সবুরসহ কয়েকজন রোগীরা জানান, সব ওষুধ এখানে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাত হোসেন জানান, প্রশাসনিক ব্যাপার যে এতো লম্বা তা বুঝতে পারি নাই। ৫০ শয্যা হাসপাতালের ইনডোর চালু করতে যে জনবল ও সাজ-সরঞ্জাম দরকার তার কোনটাই এখানে নেই। নামে ৫০ শয্যা হলেও বাস্তবে একটিও নেই। তার মতে সার্বিক স্বাস্থ্য চিত্রই এখানে নাজুক। ৫ ইউনিয়নের সরঞ্জাম দিয়ে ৭ ইউনিয়ন চলছে। আউটডোরের জিনিসপত্র দিয়েই চালানো হচ্ছে এখানকার চিকিৎসা কার্যক্রম। বহিরাগত ও দালালদের দৌরাত্মের কথাও অকপটে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা। হাসপাতালের স্টোরের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য পরিদর্শক নুরুল ইসলাম জানান, ওটি চার্জার, এক্স-রে মেশিন, এম্বুলেন্স কিছুই নেই। এ হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৫১টি বেড (রোগীর খাট) থাকলেও তা বাক্সবন্দী অবস্থায়ই রয়েছে। জনবল ও অন্যান্য সরঞ্জামের অভাবে মূলতঃ চালু করা যায়নি এ হাসপাতালে ইনডোর চিকিৎসা। হাসপাতালের এ রুগ্নদশা বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আলী বলেন, হাসপাতালে লোকবল ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আরএমও এর পদও খালি রয়েছে। ডাঃ সাজ্জাত হোসেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথাও তিনি জানান। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ সৈয়দ ইবনে সাঈদ জানান, এটা প্রশাসনিক ব্যাপার-স্যাপার। তবে শুনেছি শীঘ্রই এটা চালু হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যন্ত এ এলাকার মানুষের চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে ৫০ শয্যার হাসপাতাল দিয়েছেন এবং তিনি নিজে এসে এ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। দীর্ঘ দিনেও হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। হাসপাতালটি যাতে অনতিবিলম্বে চালু হয় তার জন্য প্রয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলেও জানান।
×