ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার, বিরোধী দল ডান, বাম, যুদ্ধাপরাধী সকল রাজনৈতিক দল সুদৃঢ় ঐক্যের ভিত্তিতে ;###;বিভিন্ন পেশাজীবীরাও জড়িত এ ব্যবসায় ;###;মালিকদের এই ঐক্যই সকল অনাচারের মূলশক্তি

সহাবস্থান বাণিজ্য পরিবহনে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ মার্চ ২০১৭

সহাবস্থান বাণিজ্য পরিবহনে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে দেশের পরিবহন বাণিজ্য। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের লোকজন জড়িত এখন এ পেশায়। স্থলপথ আর নৌপথ উভয় খাতই তাদের দখলে। মাঠপর্যায়ে দলগত মতপার্থক্য থাকলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে একাট্টা সবাই। প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যান্য পেশার লোকেরা গোটা পরিবহন সেক্টরের নিয়ন্ত্রক। সড়ক ও নৌ খাতে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের জিম্মি করা হয়। তাদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন ডজনখানেক নেতা। নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তাদের ভূমিকা প্রাধান্য। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও আছেন পরিবহন ব্যবসায়। ভেতরে ভেতরে শ্রমিক নেতাদের কেউ কেউ মালিক সমিতির সঙ্গেও যুক্ত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের দায়িত্বে থাকায় অনেকে এখন পরিবহন ব্যবসায় নিজের নাম রাখছেন না। পরিবারের কাউকে দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে, তখন সে দলের নেতারাই এ খাত নিয়ন্ত্রণ করেন। পরিবহন ব্যবসার পাশাপাশি শ্রমিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রণও চলে যায় ক্ষমতাসীন দলের হাতে। আবার কখনও কখনও নিজেদের স্বার্থে মিলেমিশে নেতৃত্ব ভাগাভাগি করে নেন তারা। ফলে সাধারণ পরিবহন ব্যবসায়ীরা তাদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকেন সব সময়। শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, প্রভাবশালী নেতাদের সমন্বয়ে খোলা হয় পরিবহন কোম্পানি। তারপর রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন সেক্টরের লোকজনের কাছ থেকে বাস নেয়া হয়। ইচ্ছামত চাঁদাবাজি করা হয় কোম্পানির অন্যান্য বাসগুলো থেকে। এক্ষেত্রে সাধারণ মালিকরা কার্যত অসহায়। পাশাপাশি রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) অনুমোদনের নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মালিক-শ্রমিক পক্ষের শীর্ষ নেতারা। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে লাভজনক রুটে গাড়ি নামানোর অনুমোদন দেয়া হয়। পরিবহন নেতাদের প্রভাব ॥ প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন ১১৭টি সুপারিশ করে। এর মধ্যে ২২টি সুপারিশ একাই করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এর মধ্যে কয়েকটি ছিল আইন ভাঙলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাবিত সাজা কমানোর সুপারিশ। অধিকাংশ সুপারিশ আংশিক বা পুরোপুরি গ্রহণ করা হয়। শাজাহান খান সরকার সমর্থক শ্রমিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন’-এর কার্যকরী সভাপতি। আইনে মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ৩৮টি সুপারিশ করে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, যার সবই ছিল মালিকদের স্বার্থরক্ষায়। এ সংগঠনের সভাপতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। শুধু শাজাহান খান এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা নন, অন্তত ২০ জন এমপি পরিবহন ব্যবসায়ী অথবা পরিবহন শ্রমিক নেতা। সরকারী দলের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ, হাবিবুর রহমান হাবিব ও মিজানুর রহমান সড়ক পরিবহন সমিতির সহ-সভাপতি। মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আগে ছিলেন রংপুরে পরিবহন মালিকদের সভাপতি। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর হয়ে যান সারাদেশের পরিবহন মালিকদের নেতা। হাবিবুর রহমান হাবিব ও মিজানুর রহমানও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষেই ভূমিকা রাখেন। অতীতেও দেখা গেছে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের এমপি-মন্ত্রীরাই হয়ে ওঠেন পরিবহন সেক্টরের নিয়ন্ত্রক। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সরকারী দলের নেতা হিসেবে তিনি এখন পরিবহন খাতের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে এ ভূমিকায় ছিলেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, এ্যাঙ্গেল ও হুক ক্ষতিকর নয়। বিআরটিএ বলছে, পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত করা এ্যাঙ্গেল ও হুকের বৈধতা নেই। তাদের দাবির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে গত জানুয়ারিতে কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ কমিটির প্রধান করা হয় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে, যিনি নিজেই মালিক সংগঠনের শীর্ষ নেতা। তবে এ দ্বৈত ভূমিকাকে দোষণীয় মনে করেন না তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবহন খাতে দীর্ঘ সংশ্লিষ্টতার কারণে যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা কাজে লাগছে সরকারের। সম্প্রতি আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে নৌমন্ত্রীর বাসা থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ধর্মঘট সফল করতে সড়ক পরিবহন সমিতি কার্যালয়ে আরেকটি পৃথক বৈঠকে মালিক-শ্রমিকদের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বাস্তবতা হলো, দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সেই শীর্ষ পরিবহন নেতাদের আহ্বানেই ৩৬ ঘণ্টা পর ফের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শীর্ষ নেতাদের পরিবহন ॥ পরিবহন সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কনক পরিবহন ও সার্বিক পরিবহন হলো নৌপরিবহনমন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সমস্য মসিউর রহমান রাঙ্গার মালিকানাধীন সঞ্চিতা পরিবহনের বাস চলাচল করে রংপুরে। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের ভাই মমতাজুল ইসলামের বাস চলে ঢাকা-ময়মনসিংহ গন্তব্যে শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে। পিরোজপুরের সংসদ সদস্য আবদুল আউয়ালের ভাই মশিউর রহমানের বাস চলাচল করে ওই জেলার বিভিন্ন রুটে। পরিবহন ব্যবসায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। বিহঙ্গ পরিবহনের ব্যবসায় যুক্ত তিনি। মিরপুরের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শাহিদা তারেখ দীপ্তি। তিনি প্রজাপতি পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত। ‘সূচনা-বিআরএফ’ পরিবহনে রয়েছে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার ছেলে আরিফুজ্জামান রনির বাস। একই গন্তব্যে চলাচলকারী দ্বীপ বাংলা পরিবহনেও আরিফুজ্জামানের বাস চলত। এমপি নূরে আলম চৌধুরীর চাচাত ভাই মনির চৌধুরীর বাস চলে ‘সূচনা-বিআরএফ’ পরিবহনে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি জিএম সিরাজ ‘এসআর পরিবহন’-এর মালিক। ‘হানিফ পরিবহন’-এর মালিক সাভারের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন ও তার ভাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি হানিফ। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এসএ খালেকের পরিবহনের নাম খালেক এন্টারপ্রাইজ। জামায়াতের নিয়ন্ত্রণাধীন পাঞ্জেরী পরিবহন থাকলেও তা এখন বন্ধ রয়েছে। সরকারী দলের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ও মিজানুর রহমান সড়ক পরিবহন সমিতির সহ-সভাপতি। তাদেরও পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। এর আগে বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তার মালিকানাধীন বাস ছিল ঢাকা পরিবহন, যা এখনও রাজধানীতে চলাচল করছে। বর্তমানে দাপটে আছেন সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি এনা পরিবহনের কর্ণধার। লঞ্চ ফাহিম-তামিমের মালিক ফজলুল হক মুন্সী মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। সুপারসনিকের মালিক মহসীন উদ্দিনও শিবচর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। লিপু খান-১ লঞ্চের মালিক বশির উদ্দিন। তিনি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের সঙ্গেই এ পরিবারের সদস্যরা যুক্ত। জামায়াতের পরিচালনায় রয়েছে একাধিক লঞ্চ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ভাই আলী কবির চাঁন ‘দ্রুতি’ পরিবহনের মালিক। তিনিই আবার বর্তমানে বাংলাদেশ বাস, ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। শাজাহান খানের শ্যালক একটি বাসের সামান্য অংশিদারিত্ব নিয়ে যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের ‘শিখর পরিবহনের’ এমডি সেজে বসে আছেন। বর্তমান সরকারের আমলে রাজধানী ঢাকায় চালু হয় শাজাহান খানের ভাইয়ের মালিকানাধীন ‘কনক’ পরিবহন। প্রভাব নিয়ে পরিবহন বাণিজ্য ॥ নেতারা বলছেন, এক সময় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল পরিবহন সেক্টর। দিন দিন মাফিয়াদের হাতে চলে গেছে এই খাত। যার নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক অঙ্গনের বড় বড় রাঘববোয়ালরা। সরকারী সূত্রগুলো জানায়, প্রভাব-পরিচয় না থাকলে এ খাতে ব্যবসা করা কঠিন। দলীয় পরিচয় ছাড়া বিভিন্ন সময়ে যে দু-একটি নতুন বাস রুটের অনুমতি মিলেছে, সেগুলোর জন্য বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজে বা আত্মীয়স্বজনের নামে দু-একটা বাস কিনে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তির বাস ওই কোম্পানির অধীনে চালানোর জন্য নিয়ে আসেন। বিনিময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তারা প্রতিটি বাস থেকে চাঁদা আদায় করেন। এটাকে তারা নাম দিয়েছেন জিপি (গেট পাস)। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তুষ্ট করা এবং কোম্পানির খরচের নামে এই জিপি আদায় করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবহন সেক্টরের একাধিক নেতা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে বা পরিবহন সেক্টরে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রভাব। দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এভাবেই আস্তে আস্তে গোটা পরিবহন সেক্টর রাজনৈতিক নেতাদের হাতে চলে যায়। এখন তাদের ইশারায় চলে গোটা পরিবহন খাত। তাছাড়া পরিবহন ব্যবসায় ব্যাংক লোন অপরিহার্য। এদিক বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতাদের দাপট যথেষ্ট। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে পরিবহন সেক্টর কেমন চলছে? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠকে বলেন, ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে দেশের সব জায়গায় পরিবহন সেক্টরে নেতৃত্বে পরিবর্তন হয় এমন তথ্য সঠিক নয়। কেন্দ্রীয়ভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয় থাকে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও গোটা সেক্টরে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়ে না। গত ৭/৮ বছর পরিবহন সেক্টর ভালই চলছে বলেও দাবি এই পরিবহন নেতার। শ্রমিক লীগ নেতাদের অভিযোগ ॥ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি মোঃ আজাহার আলী অভিযোগ করে বলেন, পরিবহন সেক্টর নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। একটি মুখোশধারী চক্র সরকারের সমর্থন নিয়ে সরকারবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এই সেক্টরে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি ও খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ট্রাক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়োজিত চাঁদাবাজদের গডফাদার। একাধিক পরিবহনের মালিকও তিনি। আজাহান আলী আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ঢাকা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে বর্তমানে একাধিক বাড়ি ও গাড়ির মালিক। গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাংলাদেশ সড়ক শ্রমিক পরিবহন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান সড়ক পরিহনের চাঁদাবাজির মাধ্যমে একাধিক বাস ট্রাকের মালিক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাসদ নেতা ওসমান আলী অবৈধভাবে চাঁদাবাজির মাধ্যমে নামে বেনামে প্রচুর গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে আছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং-৪৯৪ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ করম আলী দোহার থানা বিএনপির সহ-সভাপতি সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে অবৈধভাবে চাঁদা বাজির মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছেন। সর্বদলীয় পরিবহন বাণিজ্য ॥ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সেবা ট্রান্সপোর্টের মালিক। আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। এই টার্মিনালের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি পদ্মা পরিবহনের মালিক। যুবলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা তিনি। সায়েদাবাদ মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি শাহ আলম কচির রয়েছে গ্রামীণ পরিবহন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার আশ্রয়ে পরিবহন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপর কার্যকরী সভাপতি হাজী শামীম আহমেদ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। ঢাকা সিলেট রুটে মিতালী পরিবহনে তার বাস রয়েছে। সরকার সমর্থক পরিবহন মালিক সংগঠনের সহ-সভাপতি হলেন শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। সরকার সমর্থক বাস ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতা হলেন সোহাগ পরিবহনের মালিক ফারুক তালুকদার সোহেল। ঢাকা-কুমিল্লা রুটের এশিয়া লাইনের মালিক জুলহাস হোসেন বিএনপি সমর্থক। ঢাকা-রামগঞ্জ রুটের আল বারাকা পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা রফিক আহমেদ, আওয়ামী লীগের নেতা জুয়েল দেওয়ান হলেন তুরাগ পরিবহনের মালিক, অনাবিল-ছালছাবিল পরিবহনের মালিক মুক্তার হোসেন মৃধা। তার সরাসরি রাজনৈতিক কোন পরিচয় না থাকলেও সরকার দলের নেতাদের সমর্থনে ভাড়া ডাকাতি চালাচ্ছেন নির্বিচারে। বিএনপি নেতাদের পরিচালনায় চলছে আরেক ভাড়া ডাকাতির পরিবহন লাব্বাইক ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেসের মালিক মোঃ সাইফুল বিএনপি সমর্থক। চাটখিলের ক্ষমতাসীন দলের মেয়র মোহাম্মদ হোসেন হিমালয় এক্সপ্রেসের মালিক। গ্লোরী পরিবহনের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইসমাইল। যুবলীগ নেতা আলী আকবর বাবুলের আছে ইলিশ পরিবহন। কার্পেট বাবুল নামে পরিচিত বিএনপির এই নেতার রয়েছে মনোহরদীর লাক্সারী পরিবহন। বিএনপি নেতা বাদল সরদারের রয়েছে দিঘীরপাড় পরিবহন। ঢাকা মাওয়া রুটে গোধূলী পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন। বিএনপি নেতা ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের রয়েছে ডিপজল পরিবহন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর রয়েছে আজমেরী পরিবহন। তবে এই পরিবহনের রয়েছে একাধিক মালিকানা। জাতীয় পার্টির অপর নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এসএ পরিবহনের মালিক। ঢাকা-ফেনী পথে চলাচলকারী স্টারলাইন পরিবহনের স্বত্বাধিকারী আলাউদ্দিন আগে জাতীয় পার্টি করলেও এখন তিনি আওয়ামী লীগের টিকেটে ফেনীর পৌরমেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আজিমপুর-টঙ্গী পথে চলাচলকারী দুলদুল পরিবহনে একজন মন্ত্রীর বাস আছে বলে জানা গেছে। নূর-ই-আলম চৌধুরীর চাচাত ভাই মনির চৌধুরীর সূচনা বিআরএফ বাস আজিমপুর থেকে আবদুল্লাহপুর পথে চলছে। শ্রমিক নেতারাও পরিবহনের মালিক ॥ পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও একাধিক পরিবহনের মালিক অনেকেই। একারণেই পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাহী কমিটিতেও রয়েছে একাধিক শ্রমিক নেতার নাম। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী একাধিক পরিবহনের মালিক। এছাড়া তিনি অশোক লেল্যান্ডের ডিলারশিপও নিয়েছেন। শ্রমিক সংগঠনের আরেক পরিচিত মুখ করম আলী। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমকি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর এই সংগঠনটি ক্ষমতাসীন দলের দখলে চলে যায়। তখন অন্য নেতাদের সরিয়ে দেয়া হলেও করম আলী ছিলেন বহাল তবিয়তে। আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পরও তার ক্ষমতা বদলায়নি। একই পদে বহাল আছেন। সাবেক ফ্রিডম পার্টির নেতা ও হাল্কা যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমানের রয়েছে একাধিক অটোরিক্সা ও লেগুনা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল ওদুদ নয়নের বলাকা পরিবহনে একাধিক গাড়ি রয়েছে। বাস মালিক হলেও বিএনপি নেতা সাদেকুর রহমান হিরু এবং শ্রমিক লীগ নেতা শহীদুল্লাহ সদু মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে বসে আছেন। গাবতলী টার্মিনালে বিএনপি দলীয় সাবেক এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর আস্থাভাজন নেতা, শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আব্বাস উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সেখানকার পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছেন।
×