ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিন্ন অবস্থানে ভারত-চীন

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ১ মার্চ ২০১৭

অভিন্ন অবস্থানে ভারত-চীন

বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য সত্ত্বেও আফগানিস্তান ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান খোঁজার চেষ্টা করছে ভারত ও চীন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের গত সপ্তাহে চীন সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর হিন্দু অনলাইনের। পরমাণু সরবরাহ গ্রুপ বা এনএসজিতে ভারতের সদস্যপদের চেষ্টা, জাতিসংঘে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী ঘোষণার চেষ্টা এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নিয়ে বেজিং এবং নয়াদিল্লীর মধ্যে প্রবল মতপার্থক্য রয়েছে। এসব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে আফগানিস্তানের বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান নেয়ার বিষয়ে চীন এবং ভারত চিন্তা করছে বলে খবরে বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের বেজিং সফরের সময়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি উপমহাদেশের অন্যান্য অংশ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে বেজিং-দিল্লীর অভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাবনা নিয়ে দেশ দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বেজিং সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার জাং ইয়েসুইের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ‘কৌশলগত সংলাপ’ পুনরায় শুরু হয়েছে বলেও ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এ বৈঠকে উভয়ে চীন-ভারত সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল’ করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ব যখন নতুন করে উত্তেজনা প্রত্যক্ষ করছে তখন এ তৎপরতা চলছে বলে ভারতের পদস্থ কর্মকর্তারা জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য নীতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যে কারণে ভারত ও চীন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চীন ও ভারত উভয়ই অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে, বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় দেশই অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। অনিশ্চয়তা কাটাতে দুই দেশকেই মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে অভিন্ন ইস্যুতে কাজ করতে হবে।’ দুদেশের মধ্যে অভিন্ন ইস্যুও একটি হতে পারে আফগানিস্তান। দুদেশই সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে হেরাতে একটি বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি রয়েছে। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হিন্দু পত্রিকাকে জানিয়েছেন, মাসুদ আজহার এবং এনএসজির মতো ইস্যুগুলোতে মতপার্থক্য দূর করার ক্ষেত্রে সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। মাসুদকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার যে উদ্যোগ জাতিসংঘ নিয়েছিল তার মেয়াদ এ বছর জুলাইতে শেষ হবে। অন্যদিকে পরমাণু সরবরাহ গ্রুপ বা এনএসজিতে ভারতের সদস্যপদের বিষয়ে জুনে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আলোচিত হবে। এই পরিস্থিতিতে চীনের সমর্থন ভারতের প্রয়োজন। আলোচনার আরেকটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় ছিল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ বছরের মেতে ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বি এ্যান্ড আরআই) নামে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছেন তাতে এ বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তানের ভেতর দিয়ে ওই করিডর যাবে। ভারত জানিয়েছে, সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে তারা কোন ছাড় দেবে না। আফগানিস্তান, পরমাণু ইস্যু, জাতিসংঘের ১২৬৭ নম্বর কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ, দ্বিপক্ষীয় বিষয়সমূহ এবং কনমসুলার ও ভিসা- পাঁচটি এজেন্ডা সামনে রেখে দুই দেশের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জয়শঙ্করের নেতৃত্বে ভারতীয় পক্ষে পাঁচজন যুগ্ম সচিব আলোচনায় অংশ নেন। এরা হলেন- প্রদীপ রাওয়াত (পূর্ব এশিয়া), পঙ্কজ শর্মা (পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ), রুদ্রিনা ট্যান্ডন (জাতিসংঘ) এবং গোপাল বাগলে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র)।
×