ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-মার্কিন সম্পর্কে অনিশ্চয়তাই মূল কারণ

আসিয়ানে আগ্রহ ভারতের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আসিয়ানে আগ্রহ ভারতের

চীন ও মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানে বৃহত্তর ভূমিকা রাখার কথা ভাবছে ভারত। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্কে জটিলতা আরও বেড়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। চীন ও মার্কিন সম্পর্ক অনিশ্চয়তার পথে এগোতে থাকায় এশীয় নেতৃবৃন্দ আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছেন। উচ্চাভিলাষী চীন এবং অনিশ্চিত আমেরিকার বিপরীতে তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকেই বেশি মনোযোগী হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের কথা ভাবছে ভারত। চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ ভারত সফর করার কথা রয়েছে। ভিয়েতনামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাম বিনহ মিনহ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভারত সফর করবেন। রাজনৈতিক কারণে কিছুটা চাপের মধ্যে থাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক চলতি বছর আরও পরের দিকে নয়াদিল্লী সফরে গিয়ে সেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্ক টার্নবুলকে স্বাগত জানাবেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এ বছর এপ্রিলে ভারত সফরে যাবেন। অন্যদিকে প্রতিবেশীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শঙ্কর বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও চীন সফর করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এশিয়ার রাজনীতির মাঠে নতুন করে ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করছে। চীন ও মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা আগে থেকেই ছিল। ট্রাম্প সেই পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছেন। দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ ও একতরফা শুল্ক ও বাণিজ্য নীতির মতো ইস্যুগুলোতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই বেজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বেজিংকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে নিয়ে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নামের বাণিজ্য জোট গঠন করেছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই ওই জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর ফলে চীনের জন্য এখন আঞ্চলিক কৌশলগত প্রভাব খাটানোর পথ পরিষ্কার হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য মনে করে না টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসায় চীন কোন বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। কারণে হোয়াইট হাউস এখন মনে করে বেজিংয়ের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে টিপিপি খুব সামান্যই ভূমিকাই রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদিও বলছে ‘এক চীন‘ নীতি অনুসরণ করা হবে, কিন্তু বেজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এ অবস্থায় আঞ্চলিক শক্তিগুলো দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে দোটানায় রয়েছে। তারা বুঝে উঠতে পারছে না চীন অথবা যুক্তরাষ্ট্রকে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষার সহায়ক হবে। ফিলিপিন্স মনে করে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলে বেজিং দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে নিজের সীমানা বাড়িয়ে চলবে। ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেলফিন লরেঞ্জানা গত সপ্তাহে এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তাদের করতে দিলে তারা সেটি করতেই থাকবে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।’ আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ফিলিপিন্স। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভিয়েতনামও। তবে ভিয়েতনাম এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলো এ বিষয়ে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার চীনের আর্থিক প্রভাব বলয়ের মধ্যে চলে যাওয়ায় এ দেশ দুটোও এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। উভয় দেশরই চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
×