ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

শিশুদের রঙিন বই, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিশুদের রঙিন বই, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো

মোরসালিন মিজান ॥ শনিবারও ছুটির দিন যেহেতু, অনেকেই এসেছিলেন। তবে শুক্রবারের মতো ভিড় ছিল না। খোলামেলা পরিবেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন কৌতূহলী পাঠক। একটু নামধাম আছে এমন স্টলগুলোর সামনে মোটামুটি ভিড় লেগে ছিল। অপেক্ষাকৃত তরুণেরা জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের খোঁজ খবর নিয়েছেন। এদিন শিশুপ্রহর হওয়ায় বেশ মজা করে কাটিয়েছে বাচ্চারাও। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টায় খুলে দেয়া হয় মেলার প্রবেশ দ্বার। শিশুদের জন্যই এত আগে শুরু। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় শিশু প্রহরটিও মেলায় প্রাণের সঞ্চার করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত শিশু কর্নারে ছিল শিশুতোষ নানা আয়োজন। বিশেষ করে সিসিমপুরের চরিত্রগুলো বাচ্চাদের মুগ্ধ করে রাখে। এর পাশাপাশি বই দেখা। কেনা। শিশু কর্নারের স্টলগুলো ছোট। বইগুলো আরও ছোট। কয়েক পাতার বই। তাতে কী? খুব আকর্ষণীয়। লেখা যত, তার চেয়ে অনেক বেশি ছবি। পাতায় পাতায় এত রঙ ছড়ানো যে, বাচ্চারা সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছিল। বইয়ের নামগুলোও মজার। ‘বাচ্চা ভূত’, ‘বাঘের গলায় হাড় ঢুকছে’, ‘কুঁজো বুড়ি’ ইত্যাদি নামও খুদে পাঠকদের কৌতূহলী করছিল। অরিন এসেছিল খিলগাঁ থেকে। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সৈয়দা তাহিরা। বললেন, যে বই দেখে সেটাই পছন্দ! আমার নিয়ে যেতে হচ্ছে না। ও নিজের মতো করে ঘুরছে। আমি ওর পিছু পিছু ছুটছি। ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেনস বুক নামের একটি স্টল থেকে পছন্দ করে বই কিনছিলেন আশিকুর রহমান। সরকারী চাকুরে। বললেন, বাচ্চার বয়স ছয়। ওর পছন্দ ও রুচি গড়ে দিতে হবে। সেটি মাথায় রেখে বই কিনছি। শিশু কর্নারেই কথা হয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঘাসফড়িংয়ের কর্নধার শ্যামল কুমার দাসের সঙ্গে। তরুণ প্রকাশক। বললেন, তিন চার বছরের বাচ্চারা বাবা মায়ের সঙ্গে মেলায় আসছে। কম লেখা এবং বেশি ছবির বই খুব পছন্দ। তাদের জন্য আমরা চার রঙের বই ছেপেছি। শিশুদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতেই এমন আয়োজন বলে জানান তিনি। ১৩৯ নতুন বই ॥ মেলায় নতুন বই আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কতগুলো বই আসছে সে তথ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। তবে প্রকাশকরা নতুন বইয়ের একটি করে কপি জমা দেন একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে। সে হিসেব অনুযায়ী, চতুর্থ দিনে শনিবার নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। এসব বইয়ের অনেকগুলো গত মেলার পর প্রকাশিত। সে হিসেবে নতুন বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচিত বই ॥ মেলায় নতুন বই আসতে শুরু করেছে। অসংখ্য বইয়ের মধ্য থেকে ভাল বই নির্বাচন করা মুশকিল বৈকি। তবু খোঁজাখুঁজি করে কিছু বইয়ের নাম পাওয়া যায়। মেলায় সময় প্রকাশন থেকে মেলায় এসেছে মুনতাসীর মামুনের বই ‘ঊনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের থিয়েটার ও নাটক’। ঊনিশ শতক বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সে অধ্যায়টি নিয়ে বইতে লেখা হয়েছে। আছে অজানা অনেক তথ্য। পূর্ব বঙ্গের থিয়েটারের ধারাবাহিক ইতিহাস পাঠে সহায়ক হবে এ বই। অন্যপ্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে রাজনীতিক গবেষক কলাম লেখক মোনায়েম সরকারের প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু।’ হ্যাঁ, সব লেখার একটিই বিষয়Ñ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মোট ১৫টি লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মূল্য ৪০০ টাকা। অনুপম প্রকাশনী থেকে এসেছে মোরশেদ শফিউল হাসানের প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ’। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে লেখা। তথ্য ইতিহাস চেতনা এবং যুক্তির মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন প্রাবন্ধিক। অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে মেলায় এসেছে হরিশঙ্কর জলদাসের উপন্যাস ‘অর্ক’। জেলে পল্লীর এক তরুণের কাহিনী। দিবাকর নামের এই তরুণ জননী এবং দেশমাতার মাঝে কোন পার্থক্য করেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। নিজের ভাষায় অর্ককে বর্ণনা করেছেন হরিশঙ্কর। যেন নিজের জীবনেরই কাহিনী। মোড়ক উন্মোচন ॥ মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এদিন মোড়ক উন্মোচন করা হয় ৯টি নতুন বইয়ের। মেলা মঞ্চের অনুষ্ঠান আজ থেকে ॥ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন নিয়ে বেশি আগ্রহ একাডেমির। মেলার প্রথম দিন থেকেই সেটি দৃশ্যমান হয়েছে। এর ফলে এতকাল ধরে মেলা মঞ্চে যে অনুষ্ঠান হয়ে আসছে তা এবারের মেলায় দেখা যায়নি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে মেলা মঞ্চের অনুষ্ঠান। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘আহসান হাবীব জন্মশতবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি তুষার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. অনু হোসেন ও ড. তারেক রেজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক জুলফিকার মতিন। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
×