ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনামন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে কুমিল্লায় ৪৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ!

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পরিকল্পনামন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে কুমিল্লায় ৪৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ!

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৪ ফেব্রুয়ারি ॥ কুমিল্লার ১৭তম লালমাই উপজেলা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। শনিবার জেলার নবগঠিত লালমাই উপজেলার বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ সহস্রাধিক ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ অংশগ্রহণ করে। বিকেলে ওই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের জামতলী এলাকায় সর্বস্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান করে। এতে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করে। এদিকে পৃথক দুই স্থানে সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই এলাকায় উভয় দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। জানা যায়, সম্প্রতি জেলার ১৭তম লালমাই উপজেলা ঘোষিত হওয়ায় ওই উপজেলা এলাকার সর্বস্তরের জনগণের উদ্যোগে পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপিকে গতকাল শনিবার পৃথকভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সকাল ১০টায় বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মহিলাদের উদ্যোগে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে ওই এলাকার ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা, হাইস্কুল ও কলেজ) প্রায় ৫ সহস্রাধিক ছাত্রী, শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা অংশগ্রহণ করে। এদিকে বিকেলে ওই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের জামতলী এলাকায় আয়োজিত পৃথক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানেও কমপক্ষে ৮ সহস্রাধিক স্কুল ড্রেস পরিহিত ছাত্র ও শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এদিকে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছাত্ররা বাসের ছাদে ওঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সভাস্থলে যায় এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই সকাল থেকে ছাত্ররা বিদ্যালয় মাঠে রোদ উপেক্ষা করে অবস্থান করে। এর মধ্যে বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্কুল মাঠে বসে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে পৃথক এ দুটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। পৃথক এ দুই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে সকল কিছুর উর্ধে রেখে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। অথচ মন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রেখে ছাত্রছাত্রীদের ওই অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয় এবং দিনভর তাদের ওইসব অনুষ্ঠানে রাখা হয়। এতে ছাত্রছাত্রীরা দিনভর ক্ষুধার্ত থেকে অনুষ্ঠানে থাকতে বাধ্য হয়েছে। জানতে চাইলে বাগমারা অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া সুলতানা জানান, মন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে আমার কলেজের ৪ শতাধিক ছাত্রী এবং শিক্ষকদের নিয়ে বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় সমবেত হয়েছি। ছাত্রীরা শাড়ি পরে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ র‌্যালি নিয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করে। নতুন উপজেলা হওয়ায় আমরা আনন্দিত এবং মন্ত্রী মহোদয়কে অভিনন্দন জানাই। বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালমা আক্তার জানান, বিদ্যালয় মাঠে মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে সফল করতে ১০ দিন আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এতে নবগঠিত এ উপজেলার ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়ের ১২শ’ ছাত্রী এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার, সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রূপালী ম-ল প্রমুখ। এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী ফরিদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরাই ভাল বলতে পারবে। এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রূপালী ম-ল সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংরক্ষিত ছুটির আওতায় ছিল কি-না তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, অনুষ্ঠানে আমি পরে গিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত ছুটি ছিল কি-না তা আমার জানা নেই। তবে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ বিষয়টি বলতে পারবে। তিনি বলেন, বাসের ছাদে করে শিক্ষার্থীদের আনা ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার মাননীয় মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আমাদের নিতে হতো। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল।
×