ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর পূর্তি কাল

পাকিস্তানীকরণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা গণজাগরণ মঞ্চের

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পাকিস্তানীকরণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা  গণজাগরণ মঞ্চের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন পাঁচ বছরে পা রাখছে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বানের মধ্য দিয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়, যা একপর্যায়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মঞ্চের সমর্থনে পালিত হয় নানা কর্মসূচী। আগামী রবিবার চার বছরপূর্তি হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অহিংস এ গণআন্দোলনের। মঞ্চের চার বছরপূর্তিতে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সে ইতিহাসেরই গর্বিত উত্তরাধিকার, যে ইতিহাস হাজার বছরের বাঙালীর হার না মানার দৃঢ় সংগ্রামের চিরন্তন ইতিহাস, যে ইতিহাস মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের ইতিহাস। গণজাগরণ মঞ্চ যে মিলনের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে, মুক্তির চিরন্তন আকাক্সক্ষার যে শপথে লাখ লাখ মানুষের শোণিতধারায় বাজিয়েছে যে মহাসঙ্গীত, সেই সঙ্গীতের সুরে বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়েছে ভূগোলকের এই ক্ষুদ্র অথচ আত্মমর্যাদায় সূর্যপ্রতিম এ জনপদটির দিকে। তিনি বলেন, ইতিহাসের কলঙ্ক মোচনের আকাক্সক্ষার শাহবাগ মুক্তির চেতনার যে ফল্গুধারা বইয়ে দিয়েছে, তাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ধুয়ে যাবে পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম কিছু জীব, যারা ঘৃণ্যতম গণহত্যার খলনায়ক হিসেবে আমাদের জাতীয় লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কাদের মোল্লা থেকে শুরু করে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছে শাহবাগ, মুক্তিকামী বাঙালীর হাতে তুলে দিয়েছে বিজয়ের স্মারক। গণমানুষের ঐক্যের শক্তি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে দৃপ্ত শপথে এগিয়ে চলছে গণজাগরণ মঞ্চ। চার বছরপূর্তির বার্তায় ইমরান এইচ সরকার বলেন, সকল মানুষের সমান অধিকার, সকল মত-পথের মানুষের মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ গড়ার পবিত্র প্রত্যয়ে প্রাণ দিয়েছেন এ দেশের ৩০ লাখ মুক্তিকামী মানুষ। সেই শত বছরের সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গণজাগরণ মঞ্চ তার আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আর এ আন্দোলনের চালিকাশক্তি হচ্ছে এ দেশের সর্বস্তরের সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ, যারা জন্মভূমির প্রয়োজনে প্রাণ দিয়েছে বারবার। আমরা বর্তমানে এমন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, যখন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্তম্ভ অসাম্প্রদায়িকতার মূলে বারবার আঘাত করে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণের মাধ্যমে কলুষিত করা হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। অত্যন্ত সচেতনভাবে শিক্ষার্থীদের মনে মৌলবাদের বিষবাষ্প প্রবেশ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন এবং সরকারের প্রত্যেক স্তরে সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের নীলনকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে প্রগতিশীল এবং মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। ইমরান বলেন, শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোতে পাকিস্তানীকরণের এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের আরেকটি গৌরবময় মাইলফলক স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এ আন্দোলনে যে তাজা প্রাণগুলো ঝরে গেছে, তাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা আবারও মিলব গণজাগরণের মিলনমেলায়। যারা এ দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গেছেন, তাদের রক্ত বৃথা যেতে না দেয়ার প্রত্যয়ে আমরা আরও একটিবার শপথের বজ্রমুষ্টি তুলে ধরব, যে বজ্রমুষ্টি একাত্তরের পরাজিত হায়েনাদের অন্তরে আবারও কাঁপন ধরাবে। ৫ ফেব্রুয়ারি আমরা আবারও মিলব সেই স্মৃতিময় প্রজন্ম চত্বরে। আমাদের মেলবন্ধনে ঘোষিত হবে সামনের বন্ধুর পথ অবলীলায় অতিক্রম করার অঙ্গীকার। গণজাগরণ দিবস উপলক্ষে কর্মসূচী ॥ ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ‘রঙ তুলিতে স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বিকেল ৩টায় গণজাগরণ দিবসের র‌্যালি জাগরণযাত্রা, সাড়ে ৩টায় সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, ‘উগ্র মৌলবাদ ও ৭২-এর সংবিধান : কোন পথে বাংলাদেশ?’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
×