ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে অনুমতিহীন ভবনের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

বরিশালে অনুমতিহীন  ভবনের ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ স্বার্থান্বেষী একটি মহলের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিগত ছয় বছর ধরে বরিশাল সদর উপজেলার চরবদনা মৌজার জমি রেকর্ড বন্ধ রয়েছে। ফলে বৃহত ওই মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমির মালিকরা পরেছেন মহাদুর্ভোগে। জমি বিক্রি কিংবা বাটোয়ারা কিছুই করতে পারছেন না। অপরদিকে উচ্চ আদালতের এ নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে অসদুপায়ে ব্যাপক ফায়দা লুটছে কতিপয় ভূমিদস্যুরা। মৌজার আওতাধীন পলাশপুর, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসতি বেশি। ওই ভূমিখেকোরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে রেকর্ড বন্ধ থাকার অজুহাতে জাল দলিলপত্র তৈরি করে অন্যের জমি এবং এক জমি একাধিকবার বিক্রি করে প্রতারণা করছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌজার অন্তর্ভুক্ত সরকারী কিংবা সড়কের জন্য নির্ধারিত হালটের জমিও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চল হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ জমি সরকারী। সামান্য কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানার। সরকারী জমি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এক হাত থেকে অন্য হাতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আর জমি ক্রেতাদের মধ্যে কতিপয় প্রভাবশালী একসঙ্গে বিপুলপরিমাণ জমি ক্রয় করে প্লট আকারে বিক্রি করছেন। এতে করে প্রকৃত মালিক ও সরকারের জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ওই প্রভাবশালীর তালিকায় রয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ী। ওই এলাকায় গত ৩ থেকে ৪ বছরে প্রায় দেড় শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। রেকর্ড বন্ধ থাকায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) থেকে প্লানও পাস করাচ্ছেন না ভবন মালিকরা। সবমিলিয়ে ওই মৌজার কয়েকটি এলাকা এখন জমির ভুয়া মালিক এবং অবৈধ ভবনে সয়লাব হয়ে গেছে। মামলার বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে বরিশাল সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হুসেইন খান বলেন, মামলায় ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত হাজিরা দেয়া হচ্ছে। তবে কার্যকর কোন সুরাহা না হওয়ায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তাই জমি রেকর্ডও করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রসুলপুর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অন্যান্য এলাকার অবৈধ দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হবে। সরজমিনে চরবদনা মৌজাধীন বিসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর এলাকা ঘুরে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন সেখানে বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। ওই এলাকায় প্রবেশ করলে অহরহ দেখা যায় ৫ থেকে ৬ তলা ভবন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রেকর্ড বন্ধ থাকায় বিসিসির অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক ভবন গড়ে উঠছে। অবৈধ ভবন মালিক ও জমি দখলদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলাশপুর ব্রিজ থেকে নামলেই এক ব্যবসায়ী সাত তলা ভবন, মাঠবাড়ি সড়কে বিদ্যুত সাবস্টেশন ও হালটে জমি দখল করে নির্মিত হয়েছে পাঁচতলা ভবন, ইসলামনগরে একাধিক ভবন, ৩ নম্বর ও ৭ নম্বর গলিতে একাধিক ভবনসহ তিন একর জমিতে নির্মিত হয়েছে সীমানা প্রাচীর। এছাড়াও কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় সেখানে আরও প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ভবন নির্মাণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুত সাবস্টেশন ও হালটের জমি দখল করে ভবন নির্মাণকারী এক প্রভাবশালী বলেন, সরকারী জমি কিনা জানি না। আমি জমি ক্রয় করে বাড়ি করেছি। দলিল আছে তবে রেকর্ড হয়নি। যে কারণে বিসিসির প্লান পাস করাতে পারিনি। এ বিষয়ে বিসিসির প্লানিং শাখার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা লোকসান হোসেন বলেন, গত দুই বছরে ওই মৌজার ৬ থেকে ৭টি ভবনের মালিক প্লান পাস নিয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জেনেছি অনেক ভবন উঠেছে। তারা কোন ক্ষমতার বলে এসব ভবন নির্মাণ করছে তা জানা নেই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নগরীর এক কোনে অবস্থিত ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২ বছর আগেও ছিল চরাঞ্চল। সামান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই পুরোচর তলিয়ে যেত। রাস্তাঘাট কিংবা পরিবেশের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। নিম্ন আয়ের মানুষের বসতিস্থল হিসেবে পরিচিত থাকলেও পলাশপুরে এখন অবৈধ দখলদার এবং অনুমতিহীন বহুতল ভবনের ছড়াছড়িতে রূপ নিয়েছে।
×