ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট প্রকাশ

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে টেলিনর

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে টেলিনর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি টেলিনর তাদের প্রথম ‘গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ছয়টি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩টি বাজারে টেলিনর গ্রুপের আর্থ-সামাজিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে এশিয়া অঞ্চলের বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বিবেচিত হয়েছে। কেপিএমজির তৈরি করা এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিনরের আর্থ-সামাজিক প্রভাবের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ -ভারত, মালয়শিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে টেলিনর। এছাড়াও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অসমতা দূর করার ব্যাপারে টেলিনর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সকল লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে টেলিনরের প্রভাব সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’-এ বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। এ প্রতিবেদনে চারটি মূল বিষয়ের ওপর টেলিনরের প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে টেলিনরের প্রভাব, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিসহ অর্থনীতি বিস্তৃতির লক্ষ্যে টেলিনরের প্রভাব, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক সমতার উন্নয়ন, সাপ্লাই চেনের টেকসই উন্নয়নে টেলিনরের প্রভাব এবং সঙ্কটময় অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব। এ নিয়ে টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিগভে ব্রেক্কে বলেন, আমাদের বিশ্বাস, সংযুক্ত সমাজ ব্যবস্থা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক সাথে কাজ করতে হবে, যাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে উন্নত কাঠামো তৈরি করা যায়। আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে বাস্তবায়ন করা এবং এ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনায় অবদান রাখা এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য। গ্রামীণফোনের সিইও পেটার বি ফারবার্গ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে গ্রামীণফোনের কার্যক্রম যেভাবে প্রভাব ফেলছে তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবর্তনে মনোযোগ দেয়ায় আমরা আরও সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন প্রত্যাশা করছি। মোট সংযোজিত মূল্য (গ্রস ভ্যালু এ্যাডেড/জিভিএ) ॥ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১,৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূল্য সংযোজন করেছে টেলিনর, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোট মূল্য সংযোজনের ০.৮ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের ৩০.৮ শতাংশ। অন্যদিকে এশিয়ার অর্থনীতিতে ৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ এবং উল্লেখিত ১৩টি বাজারে ২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ যোগান দিয়েছে টেলিনর। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে টেলিনরের প্রতিটি পূর্ণকালীন কর্মীর সরাসরি মূল্য সংযোজন ছিল ১৬৯,৬২৩ মার্কিন ডলার, যা জাতীয়ভাবে একজন পূর্ণকালীন কর্মীর গড় উৎপাদনশীলতার ২৩ গুণ (৭,৪৯২ মার্কিন ডলার)। কর্মসংস্থান ॥ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের পূর্ণকালীন বা তার অনুরূপ ৪৭২৮ কর্মী ছিল। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৭ শতাংশ নারী এবং ৯৯.৭ শতাংশই বাংলাদেশী। এছাড়া সাপ্লাই চেনে পরোক্ষভাবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ চাকরি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১ লাখ ১৯ হাজার ১০০ প্রবর্তিত চাকরির সূত্র তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টেলিনরের তৈরি করা প্রতিটি চাকরির বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে আরও ৬১টি চাকরির সুযোগ। বিনিয়োগ ॥ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ১৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে টেলিনর, যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে বিনিয়োগ করেছে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী টেলিনরের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এশিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মূলধনী বিনিয়োগ ছিল ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর্থিক অবদান ॥ ২০১৪ সালে কর ও অন্যান্য সরকারী ফি বাবদ ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে গ্রামীণফোন। ২০১৫ সালে সরকারী কোষাগারে অবদান দাঁড়ায় ২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুই বছরে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের ৩.৪ শতাংশই গ্রামীণফোনের অবদান। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ॥ ৫৬ মিলিয়নের বেশি গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে। এটি ইতোপূর্বে উল্লেখিত মোট মূল্য সংযোজনের অতিরিক্ত। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ॥ ২০১৫ সালে দেশজুড়ে গ্রামীণফোনের বিল পে সেবার মাধ্যমে সর্বমোট ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ৮.৮ মিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিনর ওই বছর ৮ হাজার ৪৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোবাইল আর্থিক সেবার লেনদেন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র বীমা সেবানির্ভয় লাইফ ইনসুরেন্স সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে ৫.৭১ মিলিয়ন গ্রাহক যুক্ত করেছে। লৈঙ্গিক ক্ষেত্রে ॥ বাংলাদেশে নারী গ্রাহকদের ডিজিটাল ক্ষেত্রে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধিতে অবদান রাখার মাধ্যমে গ্রামীণফোন ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপেতে ৭ হাজার ৪৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে। টেকসই সাপ্লাই চেন ॥ টেলিনরের সাপ্লাই চেন সাসটেইন্যাবিলিটি নীতিমালার অধীনে বাংলাদেশে ১,০০৬টি সাপ্লায়ার্স বা সরবরাহকারীর মাধ্যমে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেনে ২.১ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
×