ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

গার্মেন্টসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটি

এম শাহজাহান ॥ গার্মেন্টস খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে এবার জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেসব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় পোশাক কারখানা রয়েছে, এমন সব জেলায় গার্মেন্টস কারখানা করতে হলে এ কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি হচ্ছে কি-না তা নিয়মিত তদারকি করবে এ কমিটি। জেলা প্রশাসক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ ভাগ কারখানায় শতভাগ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি হয়নি বলে মনে করে কলকারখানা অধিদফতর। এ বাস্তবতায় জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকিতে গার্মেন্টস খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আগামী বছর ২০১৮ সালে বিদেশী ক্রেতাজোট এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। তাই কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির বিষয়টি সরকারীভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে মনিটরিং করা হবে। জানা গেছে, গত ২০০৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে কো-চেয়ারম্যান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম ফর আরএমজি গঠন করা হয়। এ ফোরাম নিয়মিত সভা করছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, সময়মতো বেতন ও ওভারটাইম প্রদান, অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি বিষয়ে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন সংক্রান্ত গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে এ কমিটি। সম্প্রতি সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সের ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় দেশের গার্মেন্টস খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে তদারকি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তাদের ‘গ্রীন গার্মেন্টস’ কর্মসূচীকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ফোরাম আশা করছে, ’২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে শতভাগ কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, গার্মেন্টস কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ একটি বড় ইস্যু। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিতসহ রফতানিতে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই পোশাক কারখানা করতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। ইচ্ছা হলো আর একটি কারখানা করে ফেললাম, বিষয়টি আর সে পর্যায়ে নেই। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক এ কমিটির প্রধান থাকবেন। তিনি প্রয়োজনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বসে সিদ্ধান্ত দেবেন। কোন রকম ঝুঁকি থাকলে কারখানা করা যাবে না। এ কমিটি নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন করবে। পাশাপাশি সরকারী যেসব সংস্থা এখন কাজ করছে তাদের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। এদিকে কলকারখানা অধিদফতর পরিচালিত সম্প্রতি এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ ভাগ কারখানা নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৬০০টি পোশাক কারখানা রয়েছে। তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানাগুলোতে ক্রেতাদের শর্ত বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার শর্ত রয়েছে। কারখানা অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ৪০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় এখনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। বৈদ্যুতিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই ২৫ শতাংশে। অথচ অগ্নিকা-ের অন্যতম কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত নোটিস দেয়া হয় না ৬৩ শতাংশ কারখানায়। এর মধ্যে বিজিএমইএর ৬৬ ও বিকেএমইএর ৪০ শতাংশ কারখানা রয়েছে। এছাড়া সদস্যহীন কারখানাগুলোর ৮১ শতাংশই কোন নোটিস দেয় না। এছাড়া পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে সেফটি রেকর্ড বুক বা সেফটি বোর্ড থাকার কথা থাকলেও বিজিএমইএর ৬৬ শতাংশ কারখানায় তা নেই। একই ভাবে বিকেএমইএর ৪৯ শতাংশ কারখানায় সেফটি রেকর্ড বুক নেই। এদিকে, কমপ্লায়েন্স বা কর্মপরিবেশ কেবল গার্মেন্টস খাতে নয়, রফতানিমুখী অন্যান্য শিল্পেও নজর দিতে হবে বলে মনে করে ইউরোপ। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউর একটি প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হলে জিএসপি সুবিধা থাকবে না। তখন জিএসপি প্লাসের সুবিধা পেতে হলে শ্রম অধিকার রক্ষায় অগ্রগতি, পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্নয়নের মতো শর্ত পরিপালন করতে হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের পর গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শনকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর এ খাতের সংস্কার দেখভাল করা, কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের হার বৃদ্ধিসহ বেশকিছু বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস খাতের সংস্কারের অগ্রগতিতে ইউরোপের প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২০১৮ সালের পর এ্যাকর্ডের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর গার্মেন্টস খাতের সংস্কারকাজ তদারকিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা বিদেশী ক্রেতারা জানতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পরও ইইউর সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চাই। এ লক্ষ্যে বেসরকারী পর্যায়েও একটি ফোরাম গঠন করা হবে। এতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর পাশাপাশি ক্রেতা প্রতিনিধিরাও থাকবেন। তিনি বলেন, শুধু গার্মেন্টস খাত নয়, রফতানিমুখী অন্যান্য খাতেও কমপ্লায়েন্সের বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। এদিকে শ্রমিক নেতাদের মতে, পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে এখনও অনেক মালিক সচেতন নন। এ বিষয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি জানান, কয়েক বছর ধরে কাজ হচ্ছে। বড় বড় মালিক কারখানার কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে কাজ করলেও ছোট কারখানাগুলো তা এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব কারখানার শ্রমিকরা এখনও নিরাপদ নন।
×