ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র অনড়, হকাররা চায় আগে বিকল্প ব্যবস্থা, পরে উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

মেয়র অনড়, হকাররা চায় আগে বিকল্প ব্যবস্থা, পরে উচ্ছেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্তে অনড় সিটি কর্পোরেশন। হকাররাও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে নারাজ। তাই একদিকে চলছে দখলমুক্ত অভিযান। অন্যদিকে সুযোগ পেলেই ফের দোকান নিয়ে বসার প্রস্তুতি হকারদের। তারা মালামাল সরিয়ে আইল্যান্ডের ওপর নিরাপদ স্থানে রেখেছে। এদিকে মঙ্গলবার ১১টার পর থেকে তৃতীয় দিনের মতো মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন স্থানে হকার উচ্ছেদ অভিযান চলে। তখন কয়েকশ অবৈধ দোকানপাট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সিটি কর্পোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ দিন অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছে হকারদের একাধিক সংগঠন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কমিউনিস্ট পার্টি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ইউনিয়ন নেতারা। সকাল থেকেই অভিযান ॥ রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় হকার উচ্ছেদ অভিযান। হকি স্টেডিয়ামের উল্টো দিক থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকার দুপুর পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকে। এ সময় কয়েকজন হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে মিছিল ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশী ধাওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। এরপর হুইললোডারে করে হকার মার্কেট ভেঙ্গে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। মতিঝিল পর্যন্ত হকারমুক্ত করার কথা জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব, আমরা অভিযান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অনঢ়। যে কোন মূল্যে অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রাস্তা ও ফুটপাথে কেউ দোকান বসাতে পারবেন না। সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ মুক্ত করে দিতে হবে। তিনি বলেন, উচ্ছেদের পরও যেসব হকাররা আবারও বসছেন তাদের দোকান ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। আগামী ১৫ দিন টানা অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও জানান এই ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হকারদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ॥ পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিয়েই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করেছে হকারদের বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হকারদের ১৬ সংগঠনের জোট ‘হকার সমন্বয় পরিষদ’ এর এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হকারদের জন্য পুনর্বাসন নীতিমালা তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। গত দুই দিনে গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদের সমন্বয়ক আবুল হোসেন বলেন, মেয়র সাঈদ খোকন ‘তুঘলকি পদক্ষেপ’ নিয়েছেন। এর ফল ভাল হবে না। আপনার পিতাও এই নগরের মেয়র ছিলেন। তিনি কখনও হকারদের উচ্ছেদ করেননি। আশা করি আপনিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। গত ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, রবিবার থেকে সাপ্তাহিক কোন কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসতে দেয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এরপর রবি ও সোমবার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় চালানো হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। সোমবার উচ্ছেদের পর হকারদের একটি দল মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়ে আসে। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ না করা, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, হকারদের ওপর ‘দমন-পীড়ন’ বন্ধ এবং প্রকৃত হকারদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দেয়াসহ ১০ দফা দাবির কথা সেখানে তুলে ধরেন তারা। অন্যদিকে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে মেয়র সোমবার বলেন, জনগণের চলাচল নির্বিঘœ করতে কর্পোরেশেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মঙ্গলবারের সমাবেশে মেয়রের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হকার সমন্বয় পরিষদের নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হকারদের উচ্ছেদ করতে বলেননি। প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার আলোকে ব্যবস্থা নিন। মেয়র একা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (বিদেশ থেকে) ফিরে আসুন, স্থানীয় সাংসদও বিদেশে আছেন। তারা আইন প্রণেতা। আপনার হকার উচ্ছেদের এ সিদ্ধান্ত অমানবিক। সুইজারল্যান্ড সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার সঙ্গে দেখা করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয় সমাবেশে। কর্মসূচীর এক পর্যায়ে হকার সমিতির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, গুলিস্তান এলাকায় তালিকাভুক্ত হকারের সংখ্যা ১৬শ’। বাকিরা হকার নয়। হকারদের একাধিক সংগঠন থাকাও তাদের দুর্দশার একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার এ বক্তব্যের পর হকারদের একটি অংশ তাকে মারতে উদ্যত হলে অন্য নেতারা নুরুল ইসলামকে সমাবেশস্থল থেকে সরিয়ে দেন। বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নও মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পল্টনের মুক্তি ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। দৈনিক বাংলা, দিলকুশা, রাজউক এভিনিউ, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিরো পয়েন্ট হয়ে পল্টনে এসে শেষ হয় তাদের মিছিল। মিছিল শেষে সমাবেশে হকার্স ইউনিয়ন নেতা হযরত আলী অভিযোগ করেন, সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে হকার উচ্ছেদ না করতে অনুরোধ জানানো হলেও মেয়র তা শোনেননি। উচ্ছেদের কারণে হকাররা কেউ ভাল নেই। আর হকাররা ভাল না থাকলে মেয়রও ‘ভাল থাকবেন না’ বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। মেয়র সাহেব, আপনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের না খাইয়ে রাখলে, আমাদের অনাহারে রাখলে আমরা কাউকে ভাল থাকতে দেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফুটপাথে দোকান করতে না পারব ততক্ষণ আমরা ঘরে ফিরে যাব না। হকারদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ সমাবেশের বক্তারা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পল্টনের মুক্তি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে সমাবেশে বক্তারা জানান। হকারদের মিছিল সমাবেশের কারণে মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বসে সমাবেশ করে তারা। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
×