ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষণের পূর্ণ বিবরণ পৃষ্ঠা-৩;###;টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের তিন বছর পূর্তি দিবসে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ;###;ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর, বাসযোগ্য দেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান ;###;গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্

আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয় ॥ উন্নয়ন মহাসড়কে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয় ॥ উন্নয়ন মহাসড়কে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দিতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা চলতি মেয়াদের তিন বছর অতিক্রম করলাম। আমাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশা করি সকল রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখবেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিবেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তিন বছরপূর্তি দিবসে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা ৮ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে ৯ম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। আপনাদের (দেশবাসী) প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি- সে বিচারের ভার আপনাদেরই ওপরই রইল। তবে আমি এটুকু দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনও জানান। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার এদেশের সম্পদের পরিমাণ সীমিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার এদেশে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। দীর্ঘকাল দেশে কোন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়নি। বহু সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়ে পাহাড়-সমান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোকাবেলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ পরিবেশ। বৈশ্বিক বৈরী অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম। আর ধারাবাহিকভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১১ ভাগ। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ ভাগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে প্রায় ৩৪ মিনিটের জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন-সফলতা তুলে ধরার পাশাপাশি বাকি দুই মেয়াদের পরিকল্পনা, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গী নির্মূলে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো একযোগে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচার করে। একটি গোষ্ঠীর দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি গোষ্ঠী ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের বন্ধু নয়, শত্রু। ইসলাম কখনও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়। হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছেন। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। শেখ হাসিনা দেশের সকল ইমাম, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, স্থানীয় মুরুব্বি, আনসার-ভিডিপি সদস্য এবং অভিভাবককে জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ করে আমার আহ্বান, আপনাদের সন্তানের প্রতি নজর রাখুন। তাদের এমনভাবে পরিচালিত করুন, যাতে তারা ভুল পথে পা না বাড়ায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করেছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কারণ আমরা সব সময়ই সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। সংবিধানের আওতায় আমরা সব ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এমনকি বিএনপি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক, তাও আমরা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বরং উনি সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াবহ নাশকতার কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোলবোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠলেন। শতাধিক মানুষ হত্যা করলেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করলেন। তিনি বলেন, বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত ছিল। সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি বলেন, টানা ৯২ দিন পার্টি কার্যালয়ে আরাম-আয়েশে অবস্থান করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দোলনের নামে বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) আবার জ্বালাও পোড়াও-সন্ত্রাসী কর্মকা- উসকে দেন। এ তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। তারা ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়। ৭০টি সরকারী অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। দেশবাসী তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রত্যাখ্যান করেছেন। জনগণ এ ধরনের কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না। আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী ॥ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা থেকে শুরু করে এ দেশের যত উল্লেখযোগ্য অর্জন, তার সবই এনেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা আমাদের মাথা নত না করতে শিখিয়েছেন। আমরা সকল বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব, ইনশাআল্লাহ। তাই দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, আসুন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দেই। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম। ধারাবাহিকভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার এবং নি¤œ-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের রিপোর্ট তুলে ধরে বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম ও ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে। জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালে ছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ। এখন তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ থেকে ১২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫-১৬ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনা। তিনি বলেন, একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল মাত্র ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা জাতীয় রফতানি নীতি ঘোষণা করেছি এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ শক্তভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও ওপর । বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুত উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে আমরা পরিবেশ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ॥ তাঁর সরকারের গত ৮ বছর মেয়াদে দেশের যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ৪৮টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন চালু হয়েছে। নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম আট লেনের মহাসড়ক চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, ২য় মেঘনা এবং ২য় গোমতি সেতু নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। আওয়ামী লীগ সরকার রেলওয়েকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন ও পাতাল ট্রেনের সম্ভব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। তিনি বলেন, সরকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যাত্রী পরিবহনের জন্য ৪৫ নৌযান নির্মাণ ও চালু করেছে। দুইটি যাত্রীবাহী জাহাজ ও চারটি সি-ট্রাক জাতীয় নৌপরিবহনে সংযুক্ত হয়েছে। নৌ-পথের নাব্য বৃদ্ধি করতে ১৪টি ড্রেজার কেনা হয়েছে। আরও ১৭টি ড্রেজার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এক সময়ের মৃতপ্রায় মংলাবন্দর আমাদের সরকারের সময়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাচ্ছে। পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ বিমানের জন্য ৬টি সুপরিসর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করেছি। ২০১৮ সাল নাগাদ আরও ৪টি উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তে মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের সমীক্ষার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে। আমরা শান্তি এবং সহাবস্থানে বিশ্বাসী ॥ কূটনৈতিক সফলতার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি এবং সহাবস্থানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।’ এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। এর ফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। সেখানে সী এ্যাকুরিয়াম তৈরি করা হবে। আর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি এ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড এবং আইটিইউ-এর ‘ওয়াল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে। আমরা জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমাদের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজি’র ৫৬টি লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ॥ তাঁর সরকারের মেয়াদে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম। আর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। তিনি এ জন্য বিরোধীদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক-অসামরিক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা দেয়া হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৮ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ২শ’ ই-পোস্ট অফিস থেকে জনগণ দুই শ’ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ১৩ কোটির বেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি। চলতি বছরের মধ্যেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এছাড়া ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছি, যা আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ ২২৩ কোটি ডলার ॥ দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পের বিকাশ ও বিস্তৃতির জন্য সবচেয়ে উদার নীতি গ্রহণ করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ২২৩ কোটি ডলার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছরে ২০০৬ সালে যা ছিল মাত্র ৪৫ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, শিল্পায়ন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। এতে এক কোটির বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার মুক্তবৃদ্ধি ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমরা দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। বেসরকারী খাতে ৪৪টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে সরকার থেকে পাঁচ কোটি টাকার সিডমানি, এক কোটি ৫৮ লাখ টাকার অনুদান এবং ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ঘাটতি মিটিয়ে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ বাংলাদেশ ॥ কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। গত আট বছরে দেশে কৃষি খাতের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে। তিনি বলেন, ৮ বছরে প্রায় ৪০ হাজার ৩শ’ কোটি টাকার কৃষি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বর্গা চাষীদের জন্য কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে বিনা জামানতে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছি। ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বয়স্কভাতা, বিধবা ও দুস্থনারী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী চালু করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে চলতি বছর ১৪২টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নিয়েছে। কয়েক ধাপে উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় ॥ শিক্ষা খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১০ সালে আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচী শুরু করি। এ বছর ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। গত আট বছরে সর্বমোট প্রায় ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ১২৮টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্বে বিনামূল্যে বই বিতরণের এমন নজির নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছি। একইসঙ্গে এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারী করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যালয়বিহীন ১ হাজার ১২৫টি গ্রামে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। যেসব উপজেলায় সরকারী স্কুল বা কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারীকরণ করা হবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৯টি এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৬টি। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করা হয়েছে। আর যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সেসব জেলায় একটি করে সরকারী বা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
×