ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহীয়ান দ্বীপ

আর দেখা মিলবে না তার

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

আর দেখা মিলবে না তার

গত এক দশক ধরেই টেনিস কোর্টে আলো ছড়িয়েছেন আনা ইভানোভিচ। টেনিসের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের চূড়াতেও উঠেছেন সার্বিয়ার এই টেনিস তারকা। চোট-ফর্মহীনতা তার নিয়মিত সঙ্গী হলেও কখনোই হাল ছাড়েননি তিনি। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বারবারই সামনের দিকে হেঁটেছেন। তবে গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই টেনিসকে বিদায় বলে দিলেন ইভানোভিচ। জানালেন চোটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এখন তিনি খুব ক্লান্ত। এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন যে, মন-হৃদয় কোনটাই আর টেনিসের জন্য সায় দিচ্ছিল না তাকে। যে কারণেই ভালবেসে হাতে নেয়া র‌্যাকেট তুলে ভিন্ন কিছু নিয়ে জীবনের বাকী সময়টা কাটিয়ে দিতে চান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। গত এক দশক ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন আনা ইভানোভিচ। তবে স্বপ্নের মেলবন্ধন খোঁজে পান ২০০৮ সালে। সেবছরই প্রথম কোন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করলেও স্বপ্নভঙ্গ হয় সার্বিয়ান তারকার। রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে যান তিনি। তারপরও হাল ছাড়েননি ইভানোভিচ। ফ্রেঞ্চ ওপেনে আবারও ফাইনালে জায়গা করে নেন। এবার আর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষ। ফাইনালে দিনারা সাফিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। টেনিস কোর্টে অসাধারণ পারফরমেন্স উপহার দেয়ার সৌজন্যে সে বছরই বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের এক নাম্বার স্থানটি দখল করে নেন ইভানোভিচ। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ আট বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আর কখনোই গ্র্যান্ডসøাম জিততে পারেননি তিনি। তবে কখনোই হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েননি ১৫টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জেতা এই টেনিস তারকা। সবসময়ই কোর্টে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বদা নিজের সেরাটা দিতে মত্ত থেকেছেন ইভানোভিচ। কিন্তু এবার বাধ্য হলেন টেনিসকে বিদায় বলার। অথচ বয়সে পঁয়ত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। টেনিস কোর্টে এখনও অপ্রতিরোধ্য আমেরিকান তারকা। ত্রিশে পা রাখতে যাওয়া শারাপোভার কথাও বলা যায়। এই বয়সেও নতুন করে কোর্টে ফিরতে মরিয়া রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামার গার্ল। কিন্তু ২৯ বছর বয়সেই টেনিসকে বিদায় বলে দিয়েছেন সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচ! এতে বিস্মিত টেনিস বিশ্বের অনেকেই। মূলত ইনজুরির বিপক্ষে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়েই র‌্যাকেট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে নিজের পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট আনা ইভানোভিচ। তাই টেনিস কোর্টে আর ফেরার কোন ইচ্ছে নেই তার। এমনকি কোচ হিসেবেও কোর্টে ফিরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অবসরের পর এক সাক্ষাতকারে আনা ইভানোভিচ নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, চোটের বিপক্ষে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। এক পর্যায়ে হৃদয়-মন আর সায় দিচ্ছিল না তার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই চোটের সঙ্গে লড়াই করেছি আমি। চোট কাটিয়ে ফেরাটা সবসময়ই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কোর্টে কিংবা কোর্টের বাইরে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তারপরও আবার সেই ফ্রেমে ফেরা হয়ে ওঠে না। যে কারণেই আমার শরীর এবং হৃদর আর সামনের দিকে এগুতে সায় দিচ্ছিল না।’ এ সময় টেনিস কোর্টে ফেরার আর কোন আগ্রহ নেই উল্লেখ করে ইভানোভিচ আরও বলেন, ‘একজন কোচ হিসেবেও টেনিসে ফেরার ইচ্ছে আমার নেই। আমার যে ক্যারিয়ার ছিল তাতেই আমি সন্তুষ্ট। এখন ভিন্ন কিছু নিয়ে চেষ্টা করার সময়।’ ইভানোভিচের শুরুর গল্পটাও দারুণ রোমাঞ্চকর। টেলিভিশনে যুগোসøাভিয়ার মনিকা সেলেসের খেলা দেখে বাবা-মায়ের কাছে র‌্যাকেট কেনার বায়না ধরেন আনা ইভানোভিচ। পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট সেই বালিকার আবদার তখন ফেলে দিতে পারেনি তার পরিবার। তখন থেকেই টেনিসের প্রেমে মজেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন ইভানোভিচ। তবে তার স্বপ্নের বছর হলো ২০০৮। সে বছরই প্রথম কোন মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেন। এরপর জিতে নেন গ্র্যান্ডসøামও। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করেছেন তিনি। কিন্তু সবশেষে চোটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে অবসর নিতে বাধ্য হলেন সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা। তবে বিদায় বলার এই সিদ্ধান্তটা খুব সহজ ছিল না ইভানোভিচের, ‘আপনি খুব ভালবাসেন সেরকম কোন কিছু থেকে সরে আসাটা খুবই কঠিন ব্যাপার।’ কোর্টের লড়াইয়ে সার্বিয়ার ইভানোভিচ নিষ্প্র্রভ থাকলেও প্রেমের মাঠে কিন্তু দুর্দান্ত। প্রেমিক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্মান তারকা বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারকে যে গত বছরই জীবন সঙ্গী হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন। দুই জগতের দুই তারকা হয়েও দারুণ উপভোগ্য সময় পার করছেন তারা। একজন টেনিসে আরেকজন ফুটবলে। দুই তারকা দুই দেশের হলেও মনের টানে মিলে গেছেন একই বিন্দুতে। তাদের প্রেমের সূত্রপাত ছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। হাতে-হাত রেখে নিউইয়র্কের রাস্তায় আনা ইভানোভিচ আর বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর গত বছর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। তবে স্ত্রীর অবসরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মান তারকাও। টুইটার বার্তায় তিনি লিখেন, ‘তোমার অবসরের সিদ্ধান্তকে আমার পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তুমি সবসময়ই অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা। নারী এবং স্ত্রী হিসেবেও তোমার তুলনা হয় না।’ এ মাসের মাঝামাঝি সময়েই শুরু হবে মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। যেখানে অনেক স্মৃতি রয়েছে সার্বিয়ান তারকার। কিন্তু এবার আর তাকে দেখা যাবে না মেলবোর্নের কোর্টে। শুধু ইভানোভিচই নন, এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পাবে না সাবেক দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকেও। মা হওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে পারবেন না বেলারুশ সুন্দরী ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। সম্প্রতি নিজের ফ্ল্যাটে ছুরিকাহত হয়েছেন পেত্রা কেভিতোভাও। তাই বছরের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট মিস করতে যাচ্ছেন চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাও। এদিকে পুরুষ একক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা জোয়ান মার্টিন ডেল পোত্রো। তবে চোট কাটিয়ে ফিরছেন সুইজারল্যান্ডের জীবন্ত কিংবদন্তি রজার ফেদেরার।
×