ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচন

কাউন্সিলর পদে ১৭ নতুন মুখ ॥ অবৈধ টাকার প্রভাবে পরাজিত অনেকে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

 কাউন্সিলর পদে ১৭  নতুন মুখ ॥ অবৈধ  টাকার প্রভাবে পরাজিত  অনেকে

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী এছাড়াও ২৭ ওয়ার্ডে ২৭ জন ও ৯ সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৯ জনসহ ৩৬ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে এবার ৫ নারীসহ ১৭ জন নতুন কাউন্সিলর এসেছে। ৪ নারী কাউন্সিলরসহ ১৯ জন কাউন্সিলর পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও সুশীল সমাজ বলছে, ১৯ কাউন্সিলর এবার প্রার্থী হয়েও পরাজিত হওয়ার পেছনে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অবৈধ টাকার প্রভাব, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও নিকটতম লোকজন একই পদে প্রার্থী হওয়া, কাক্সিক্ষত উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়াসহ নানাবিধ কারণ। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর একই বছরের ৩০ অক্টোবর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭ জন ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত বৃহস্পতিবারের সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ১২ জন এবার নতুন মুখ কাউন্সিলর হয়েছেন। এরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে মোঃ ওমর ফারুক, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ইকবাল হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মতিউর রহমান মতি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ইফতেখার আলম খোকন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শফিউদ্দিন প্রধান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নাজমুল আলম সজল, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে মোঃ আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিশ বাবু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কবির হোসাইন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম নবী মুরাদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোঃ সামছুজ্জোহা ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান বাবুল। এদিকে এ নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ১৫ জন দ্বিতীয়বার কাউন্সিলর হয়েছেন। এরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাহজালাল বাদল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আরিফুল হক হাসান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আলী হোসেন আলা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রুহুল আমিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইসরাফিল প্রধান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জমশের আলী ঝন্টু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শওকত হাশেম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে অসিত বরণ বিশ্বাস, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহাম্মেদ সাগর, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে হান্নান সরকার, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান আহম্মেদ ভূইয়া, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আফজাল হোসেন ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এনায়েত হোসেন। সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড থেকে ৫ জন নতুন মুখ কাউন্সিলর হয়েছেন। এরা হলেন-২ নম্বর ওয়ার্ডে (৪, ৫ ও ৬) মনোয়ারা বেগম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (১৬, ১৭ ও ১৮) আফসানা আফরোজ, ৭নং ওয়ার্ডে (১৯, ২০ ও ২১) শিউলী নওশাদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে (২২, ২৩ ও ২৪) শাওন অংকন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে (২৫, ২৬ ও ২৭) হোসনে আরা। দ্বিতীয়বার চার নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হলেন- সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে (১, ২ ও ৩) মাকসুদা মোজাফফর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (৭, ৮ ও ৯) রেহানা পারভীন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (১০, ১১, ১২) মিনোয়ারা বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (১৩, ১৪ ও ১৫) শারমিন হাবিব বিন্নি। সিটি নির্বাচনে নতুন কাউন্সিলররা এলাকার উন্নয়ন, তাদের ওয়ার্ড থেকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, নিচু নিচু রাস্তাগুলো আগে কার্পেটিং করা (ঢালাই করা) ও জলাবদ্ধতা দূর করাই হবে আমার প্রথম কাজ। এছাড়াও আমাদের ওয়ার্ড থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক নির্মূল করব। ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত নতুন কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, আগে এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বৈঠক করে কিভাবে উন্নয়ন করা তাদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নেব। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করব ও ড্রেন নির্মাণ করব। আমার তিনটি ভাষা হলো- আমাদের ওয়ার্ডে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকের কোন স্থান নেই। আমি শপথ নেয়ার পর এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বসে এগুলো নির্মূল করব। রাস্তাঘাটের সমস্যা সমাধান করে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিরসন করব। আমাদের ওয়ার্ডে প্রচুর মহিলা কর্মী আছেন যারা গার্মেন্টস কর্মরত তাদের যাতায়াত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। অপরদিকে ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৫ নারীসহ এবার ১৭ জন কাউন্সিলর একই পদে প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এরা পরাচিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও সুশীল সমাজ বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অবৈধ টাকার প্রভাব, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও নিকটতম লোকজন একই পদে প্রার্থী হওয়া, কাক্সিক্ষত উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়াসহ নানাবিধ কারণে তারা পরিজিত হন। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তবুও তারা অবৈধ পয়সার মালিকদের কাছেই এ সকল কাউন্সিলররা পরাজিত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ভাল লোক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য যেটা দরকার সেটা হলো একেবারে সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন দরকার। ভাল নির্বাচন কমিশন দরকার। ফলে প্রথম থেকেই যারা মাদক ব্যবসায়ী তারা বাদ পড়বেন। যারা অস্ত্র ব্যবসায়ী তারাও বাদ পড়বেন। এ ধরনের খারাপ লোকগুলো প্রথম থেকেই বাদ পড়ে যাবেন। সুতরাং এক সময়ে নির্বাচনে তারা দাঁড়াতে পারবেন না। এ বিষয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করতে পারি তাহলে হয়ত এক সময় বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করব। সেই নির্বাচনে কাউন্সিলররা ভাল লোক আসবেন। এখন কিন্তু ভাল লোক নির্বাচনে আসতে চান না। তিনি আরও বলেন, যারা এবারই নতুন কাউন্সিলর হয়েছেন তারা যে উন্নয়ন করবেন তারা মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই স্ব স্ব এলাকায় উন্নয়ন করবেন।
×