ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শীষে ভোট দিলে বদলে দেব না’গঞ্জ ॥ সাখাওয়াত

আমার কোন বাহিনী নেই, কিছুই নেই ॥ আইভী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

আমার কোন বাহিনী নেই, কিছুই নেই ॥ আইভী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন (নাসিক) যতই এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো মহানগরী। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এর মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার, গণসংযোগ, পথসভা ও উঠোন বৈঠকে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ও এলাকায় প্রার্থীদের পদচারণায় ও মাইকিংয়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা। পোষ্টারের সাজে সেজেছে নগরী। নির্বাচনী উসবের আমেজে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এলাকা। বুধবার সকালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে একটি জাতীয় পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত আশা ও শঙ্কা’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিন হায়াৎ আইভী বলেছেন, আমার কোন বাহিনী নেই, আমার কোন পিস্তল বাহিনী নেই, দলবাজির বাহিনীও নেই, কিছুই নেই। আইভী বুধবার বিকেলে ২৪ ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যদি বিশ্বাস করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়, তবে নারায়ণগঞ্জকে বদলে দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক ও সুন্দর সিটি কর্পোরেশন হিসেবে গড়ে তুলব। সাখাওয়াত হোসেন খানা ৯নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। বুধবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি জাতীয় পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত আশা ও শঙ্কা’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় বিএনপি’র প্রার্থীর উদ্দেশ্যে করে আওয়াম দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আপনার সঙ্গে যে প্রার্থী হয়েছে সে প্রার্থীর কোন বাহিনী নেই, সেই প্রার্থীর পিস্তল বাহিনী নেই, দলবাজি বাহিনী নেই, কিছুই নাই। একজন নিরীহ মানুষের সঙ্গে নির্বাচন করছেন। আপনি হয়তো বলতে পারেন দলগত নির্বাচন বিধায় এখানে দলের লোকজন এসেছে। আমার থেকে কিন্তু আপনার লোকজন আরও বেশি এসেছে। বেশি প্রচার চালাচ্ছে। আমি কিন্তু একা একাই হেটে বেড়াচ্ছি। বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন হোল্ডি ট্যাক্স বাড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, সাখাওয়াত ভাই আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স কত? ও আপনার হোল্ডিং নম্বর কত?। যদি সাখাওয়াত ভাই আমাকে বলেন তার হোল্ডিং ট্যাক্স কত টাকা বাড়ানো হয়েছে ও তার হোল্ডিং নম্বর কত, তাহলে এ ব্যাখাটি আমি এখনই দিয়ে দিতাম। হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়নি যে বাড়াব, তদরূপভাবে বলেওনি যে কমাব। হোল্ডিং ট্যাক্স যা আছে সেটায় ধরা হয়েছে। সরকার এবার যে নিয়ম করেছে সিডিউলে ৩ ভাগ বাড়িয়েছে। সারা বাংলাদেশে হোল্ডিং ট্যা´ ১৭ ভাগ। ১৭ ভাগের সঙ্গে ৩ ভাগ যোগ হয়ে ২০ ভাগ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের সিটি কর্পোনেশনের আইনে স্পৃষ্টভাবে বলা আছে ৭৫ ভাগ ট্যাক্স যদি আদায় না করা হয় সরকার চাইলে যে কোন সময় সেই সিটি কর্পোরেশনের পরিষদ বা পৌর সভার পরিষদ ভেঙ্গে দিতে পারে সরকার। এটা সরকার ক্ষমতা রাখে। আমি বলতে চাই আমি সরকারি দলের হয়ে এখন পর্যন্ত আমি সরকারের কোন সুযোগ সুবিধা নেয়নি। এটা কিন্তু সব প্রার্থীরাই জানেন। আমার জায়গায় কেউ যদি অন্য কোন প্রার্থী হতো আমার সন্দেহ আছে যারা আজকে এখানে কথা বলছেন তারা কথা বলতে পারতেন কিনা। আপনার (সাখাওয়াতের) মতো আমিও শঙ্কিত ছিলাম ২০১১তে যখন আমি নির্বাচন করেছিলাম। আমার শঙ্কা আরও অনেক বেশি ছিল। সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আপনি বলে বেড়াচ্ছেন গতবার আমি সেনবাহিনী চেয়েছিলাম। এবার আমি সেনাবাহিনী চাইনি। হ্যাঁ, গতবার আমি অবশ্যই সেনাবাহিনী চেয়েছিলাম। এবার আমি বলেছি, ইসি যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে সেনাবাহিনী কেন যে কোন বাহিনী দরকার সেই বাহিনী তারা নিয়ে আসুক। আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু চাই, নিরপেক্ষ চাই। এক পেশে কোন নির্বাচন চাই না। এই প্রার্থীর মুখ থেকে সারা বাংলাদেশে কোন দলীয় প্রার্থী ক্ষমতায় থেকে এ রকম কথা বলে না। আমি যা বলছি। এদিকে গোল টেবিল আলোচনায় বিএনপি’র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তিনি (আইভী) তের বছর পারেননি। সে আবার ৫ বছরে পারবেন, সেটা বিশ্বাস করা যায় না। সুতরাং আমি বলতে চাই নারায়ণগঞ্জর মানুষ যদি বিশ্বাস করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়। তবে নারায়ণগঞ্জকে বদলে দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক ও সুন্দর সিটি কর্পোরেশন হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন কর্পোরেশনের এই নির্বাচন এখন আর শুধু নারায়ণগঞ্জের বিষয় নয়। আমি চাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক। সেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে একটি আবহাওয়া তৈরির প্রয়োজন। সেই আবহাওয়াটি তৈরি হোক সেটাই আমি চাই। প্রথমে আমার নিজেকে আমার স্বচ্ছ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় এবং জনগণ যাতে বিনা বাধায় ভোট কেন্দ্র যেতে পারে সেই জন্য আমার পক্ষ থেকে আমি কোন অপকর্ম করব না এবং ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে সেই জন্য আমার যতটুকু সহায়তার প্রয়োজন ততটুকু আমি করব। আসলে কি জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে? আসলে কি ভোটাররা কি বিনা বাধায় ভোট দিতে পারবে কোন প্রভাব ছাড়া? আমি আপনাদের (সাংবাদিকের) মাধ্যমে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করতে চাই যে মানুষ যে ভোটের যে অধিকার গত নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেই ভোট দেয়ার অধিকারটা যেন নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সেনা ছাড়া স্ষ্ঠুু নিয়ে সন্দেহ ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম বলেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া নারায়ণগগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হওয়া ‘সন্দেহ’ রয়েছে। বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের নগরীর শায়েস্তা খান রোডে (পুরাতন কোর্ট এলাকায়) বিএনপি দলীয় মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ও মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধন শেষে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সন্দেহের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ যে সন্ত্রাসীরূপে আর্বিভুত হয়েছে তাতে সেনা বাহিনী ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কীনা এব্যাপারে আমাদের সকলের সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণ নাগরিক ও ভোটারতো দূরের কথা, প্রার্থীদের এজেন্টরা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিবের গণসংযোগ ॥ এদিকে আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র’ ফিরিয়ে আনার নির্বাচন উল্লেখ করে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বন্দরের সিএসডি মোড় এলাকাতে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে পথসভায় ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারে নাই বিগত দিনে। এ কারণে মানুষের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতেই বিএনপির নেত্রী, ২০ দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন খান সাহস ও অন্যায়ের প্রতীক। এটা শুধু মেয়র নির্বাচন না এ নির্বাচন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন। ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ নির্বাচনের দিকে সারা দেশবাসী তাঁকিয়ে আছে। বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জবাসী অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। মানুষ অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছিল। আমি বিশ্বাস করি সত্য ও সুন্দর ন্যায়ের পক্ষে রায় দিবে ভোট দিবে। আইভীর গণসংযোগ ॥ বুধবার বিকেলে আইভী নগরীর বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ডের চৌরাপাড়া, নবীগঞ্জ, কাইতাখালী, ও আমিরাবাদ এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এরআগে মঙ্গলবার তিনি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন, আবদুর রাশেদ রাশু, যুবলীগ নেতা আবু সুফিয়ান, খাজা রহমত উল্লাহ প্রমুখ। সাখাওয়াতের গণসংযোগ ॥ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নগরীর ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তার সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালকুঁড়ি এলাকা, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তল্লা, নগর খানপুর, কিল্লারপুল, এম সার্কাস, পানির কল এবং এসিআই এলাকায় গণসংযোগ করেন। আইভীকে গণফোরামের সমর্থন ॥ এদিকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন জানিয়েছে গণফোরাম। বুধবার বিকেলে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণফোরাম আশা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হলে গণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। মুন্না ও স¤্রাট শাজাহান দায়ী থাকবেন ॥ বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কবির হোসাইন অভিযোগ করেছেন এই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী কামরুল হাসান মুন্না এবং মুন্নার দুলা ভাই তাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন প্রয়োজনে তারা বিশ কোটি টাকা খরচ করবেন তারপরেও তাকে দেখে নেবেন। তাই তিনি আশংকা করছেন তারা হয়তো তাকে এবং তার পরিবারের কাউকে অথবা তার কর্মী সমর্থকদেরকে কাউকে হত্যা করতে পারে। তাই যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে কামরুল হাসান মুন্না আর তার বোন জামাতা স¤্রাট শাজহান দায়ী থাকবেন। বেলা ১১টায় তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করবেন বলেও জানান।
×