ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৮ শতাধিক বাংলাদেশী আটক

মালয়েশিয়ায় ফের অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

মালয়েশিয়ায় ফের অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় আবার বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পোর্ট ডিকসনের জিমাহ এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮শ’র বেশি বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করা হয়। দালাল চক্র ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাদের দেশটিতে রেখে স্বল্প বেতনে কাজ করাত। ওই অভিযানের পর পুলিশ নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের মোট ৯৮০ জন কর্মীকে আটক করেছে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। তবে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নানা দেশের প্রায় এক হাজার নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। এর আগে দেশটিতে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশীসহ ৯৭১ জন বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়েছিল। এর বাইরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বহু বাংলাদেশী আটক করা হয়। আটক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জাল ভিসা ব্যবহার, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বা মেয়াদপূর্তির পরও মালয়েশিয়ায় অবস্থানসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এ বছরের গোড়ার দিকে অবৈধ বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, কোন প্রকার অবৈধ অভিবাসীকে থাকতে দেয়া হবে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে। পাঁচ দফা সুযোগ দেয়ার পরও যারা বৈধ হননি, তাদের জন্য আর কোন সুযোগ নেই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন দেশের প্রায় এক হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের বেশিসংখ্যক নাগরিক রয়েছে। পুলিশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আটককৃতদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অনেক অবৈধ কর্মী আটক হতে পারে বলে টেলিফোনে জানিয়েছে অনেক কর্মী। বাংলাদেশী কর্মী আটকের বিষয়টি মালয়েশিয়ার অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তবে ঠিক কতজন কর্মী আটক হয়েছেন এ বিষয়ে হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা জানাতে পারেননি। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আটককৃতদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। যারা বৈধ তারা যদি কোন কারণে আটক হন তাহলে কর্তৃপক্ষ যাতে ছেড়ে দেয় সেজন্য আলোচনা করা হবে। অবৈধদের বেলায় কি করা যাবে সেটাও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। সাধারণত মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী অবৈধ হয়ে পড়া কোন অভিবাসী দেশটিতে আর বসবাস করতে পারবেন না। তাদের হয় কারাগারে যেতে হবে- না হয় দেশে ফিরে আসতে হবে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা বৈধ হওয়ার সুযোগ দিলেও অনেক অবৈধ কর্মী এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। কেউ হয়তো দালালের কারণে বৈধ হতে পারেন না। আবার কেউ নিজে থেকেই বৈধ হতে চান না। কারণ বৈধ হতে গেলে আড়াই হাজার রিংগিত লাগে। এত টাকা এক সঙ্গে করে বৈধ হওয়াটাই কঠিন তাদের জন্য। এই টাকা কোন কোন কর্মীর তিন মাসের বেতনের সমান। ফলে অনেকেই বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েও বৈধ হতে পারেন না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার সরকার অবৈধ কর্মীদের পাঁচ দফা সুযোগ দেয়ার পরও যারা বৈধ হতে পারেনি এ দায় তাদেরই নিতে হবে। সরকার এ দায় নেবে না। তবে যদি কোন বৈধ কর্মী পুলিশের হাতে আটক হন সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার।
×