ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাভানায় ক্যাস্ট্রো স্মরণানুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

হাভানায় ক্যাস্ট্রো স্মরণানুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি

কিউবার প্রয়াত বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ট্রোর সম্মানে রাজধানী হাভানার রেভল্যুশন স্কয়ারে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে একটি বিশাল স্মরণানুষ্ঠান হয়েছে। মঙ্গলবারের এই স্মরণানুষ্ঠানে ফিদেলের ছোট ভাই কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খবর বিবিসির। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রেখেছেন। নিজ বক্তৃতায় ভাই ফিদেলকে ‘নিপীড়িত মানুষের জন্য নিপীড়িত মানুষের’ বিপ্লবের নেতা বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট রাউল। লাতিন আমেরিকার বামপন্থী সব নেতাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি গ্রিসের বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপরাস এবং আফ্রিকার নেতা রবার্ট মুগাবে ও জ্যাকব জুমা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতায় এসেছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো। গত শুক্রবার ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক দলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে কিউবা শাসন করেন তিনি। তার বিষয়ে পুরো বিশ্বে দুটি বিপরীত মত বিরাজ করছে। সমর্থকরা বলেন, তিনি কিউবাকে তার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার প্রশংসা করেন। অপরদিকে সমালোচকরা তাকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে দেখেন, যিনি বিরোধিতা এবং ভিন্নমত সহ্য করতেন না। রেভল্যুশন স্কয়ারে অনুষ্ঠান শুরু সময় লাখো জনতা মিলিত কণ্ঠে আওয়াজ তোলে ‘বিপ্লব চিরজীবী হউক!’, ‘ফিদেল! ফিদেল!’। এই রেভল্যুশন স্কয়ারেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জ্বালাময়ী ভাষণ শুনতে একসময় তারা জড়ো হতেন। অনুষ্ঠানে মেক্সিকো, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা, পানামা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন গ্রিসের বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী সিপরাস। নিজ ভাষণে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কিউবার রেকর্ডের প্রশংসা করেন এবং আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য কিউবার অবদানের কথা স্মরণ করেন। মঙ্গলবার সকালে হাভানার হোসে মার্তি মেমোরিয়ালে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া ফিদেল ক্যাস্ট্রোর একটি ছবির সামনে রাখা শোকবইতে স্বাক্ষর করেন বলিভিয়া ও ভেনিজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস ও নিকোলাস মাদুরো। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর আরেক অনুসারি ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়াও ওই শোকবইতে স্বাক্ষর করেছেন। এসব নেতারা উপস্থিত থাকলেও অনুষ্ঠানে পশ্চিমা নেতারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। রেভল্যুশন স্কয়ারে সোমবার দুই দিনব্যাপী এই স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা হয় ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে তরুণ ফিদেলের একটি ছবির পাশ দিয়ে হেঁটে যান। সাদাকালো ওই ছবিতে সামরিক পোশাক পরা বিপ্লবী তরুণ ফিদেল পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন, তার পিঠে রাইফেল ও রসদের ব্যাগ। স্প্যানিশ বচনে তাদের কণ্ঠে ছিল সেই বিদায়ের গান- ‘হাসতা সিয়েমপ্রে, কমান্দান্তে!’ অর্থাৎ, চিরকাল, হে কমান্ডার। ফিদেলের মৃত্যুতে নয় দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কিউবা। তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে শনিবার তার মৃতদেহ দাহ করা হয়। তার দেহভস্ম একটি শবাধারে করে সারাদেশ ঘুরিয়ে শেষ গন্তব্য সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিউবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ঘরে রাখা ক্যাস্ট্রোর দেহভস্ম বুধবার সান্তিয়াগোর পথে রওনা হবে।
×