ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১২ নভেম্বর ২০১৬

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ৬ ঘণ্টার হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। জেলা সদরের এই সরকারী হাসপাতালটিতে দুপুরের পর রোগী ভর্তি হয় না বললেই চলে। রাতে থাকছেন না ডিউটি চিকিৎসক। জরুরী প্রয়োজনে শুধু নামমাত্র অনকলে থাকেন চিকিৎসক। দুপুরের পর এটি পরিণত হয় রোগী রেফার্ডের হাসপাতাল হিসেবে। নেই অর্থপেডিক্স ও হৃদরোগের কোন চিকিৎসক। এই দুটি বিভাগের চিকিৎসক পদ সৃজনের চাহিদা বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত থাকছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে চলছে শুধু চিঠি চালাচালি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে হাত পা বা শরীরের অন্য কোন অঙ্গ ভাঙ্গা ও হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাসপাতালে আসা দরিদ্র রোগীরা। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ চালুর পর জেলা সদরের সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সঙ্গে তা প্রকল্প আকারে প্রথমে সংযুক্ত ছিল। দুই হাজার ৬ সালে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যাত্রা শুরুর পর থেকেই বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলেও অর্থপেডিক্স ও হৃদরোগ বিভাগ আর এই ব্যস্ততম হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে সৃজনকৃত চিকিৎসক পদের মধ্যেই বর্তমানে শূন্য রয়েছে ১৮টি পদ। আবার চর্ম ও যৌন রোগের কনসালটেন্ট রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে। এ্যানেসথেলজি পদের বিপরীতে আছেন মানসিক চিকিৎসক। এরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক থাকলেও ইনডোরে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তোষ্ট হতে পারছে না রোগী বা চিকিৎসক কেউই। কারণ জনবল সঙ্কট। দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি করা হলেও এরপর এটি পরিণত হয় রেফার্ড করার হাসপাতালে। ইর্মাজেন্সিতে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বা কর্তৃপক্ষ জনবল সঙ্কটরের কারণে একটু গুরুতর কোন রোগী আসলেই রেফার্ড করেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা বগুড়ার বাইরে। ফলে রাতে ইনডোরে কোন রোগীর সমস্যা হলে শঙ্কায় পড়েন রোগীর স্বজনরা। গাইনি বিভাগেও একই অবস্থা। অথচ দরিদ্র সন্তান সম্ভবাদের কাছে জেলা সদরের এই হাসপাতাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শহরের ভেতরে হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় রোগীরা রাতে এখানেই প্রথম ছুটে আসেন। তবে রাতে হাসপাতালে অনকলে চিকিৎসকের ব্যবস্থা থাকলেও তা নামমাত্র অবস্থায় পৌঁছেছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনে ডিউটি করে একই চিকিৎককে আবার রাতের ডিউটি দেয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য অনকল তালিকায় চিকিৎসক থাকলেও তা কার্যকর থাকছে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করছে অর্থপেডিক্স চিকিৎসক না থাকার কারণে। আগে অন্য পদের বিপরীতে আসা চিকিৎসক দিয়ে এই চিকিৎসা চললেও এখন সেটিও নেই। উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে রোগীর চাপ সব সময় বেশি থাকে। অন্য জেলা থেকেই প্রতিদিন রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনাজনিত অর্থপেডিক্স চিকিৎসায় মাসে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২শ’ অপারেশন হতো। এখন সেটি সম্পূর্ণ বন্ধ। আই ও অর্থপেডিক্স অপারেশন থিয়েটারে আর কোন অপারেশন হয় না চিকিৎসক না থাকায়। এতে শৈল্য বিভাগের অনেক বেডই এখন শূন্য থাকছে। সমস্যা রয়েছে সংক্রামক রোগের বিভাগেও। ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার (আইএমও) পদ না থাকায় ইনডোরের রোগীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের পদায়ন ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও তা একই বৃত্তে ঘুরছে। কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, অর্থপেডিক্স ও কার্ডিওলজি বিভাগের পদ সৃষ্টির গুরুত্বসহ এর বিপরীতে কনসালটেন্ট, সহকারী রেজিস্টার ইনডোর মেডিক্যাল অফিসারসহ প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে গত ৫-৬ বছর ধরে চিঠি দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাতেও এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম দুপুর ২টার পর চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা থাকার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ডিউটি রোস্টার করা যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। তিনি জানান, বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে চিকিৎসক সঙ্কট অনেকটা দূর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×