ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনায় ভূষিত রুনা লায়লা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৬ নভেম্বর ২০১৬

গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনায় ভূষিত রুনা লায়লা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিনিই ছিলেন আয়োজনের মধ্যমণি। সংবর্ধনা গ্রহণ শেষে দর্শকসারিতে বসে শুনছিলেন গান। তাঁরই গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলো গাইছিলেন উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী কোনাল। শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো-গানের সুরে নিজ আসন ছেড়ে উঠে এলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। নিজের তুমূল জনপ্রিয় গানটিকেই আশ্রয় দিলেন আপন কণ্ঠে। আলোড়িত করলেন মিলনায়তনভর্তি শ্রোতা-দর্শককে। এ গানের আগে ঠোঁট মেলান ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না’ শিরোনামের গানে। গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনাপ্রাপ্তির আয়োজনের শেষ মুহূর্তটি এভাবেই রাঙিয়ে দেন কোটি মানুষের ভালবাসায় ধন্য এই শিল্পী। শনিবার বিকেলে সিটি ব্যাংক এন এ প্রবর্তিত গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনায় ভূষিত হন রুনা লায়লা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে। শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং সিটি ব্যাংক এনএর বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাকসুদ। এছাড়াও শিল্পীর হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মানীর চেক ও গোলাম ফারুকের আঁকা শিল্পীর প্রতিকৃতি। সংবর্ধনাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে রুনা লায়লা বলেন, একজন শিল্পীর জন্য তাঁর কাজের স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার কাছে ভক্তদের ভালবাসাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এটার মাধ্যমে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। আজ যে সম্মাননা পেলাম তার একটা অন্যরকম গুরুত্ব আছে। আর ১২ দিন পর ১৭ নবেম্বর আমার জন্মদিন। এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে জন্মদিনের উপহারটাও পেয়ে গেলাম। মজার ছলে মজার ছলেই শিল্পী বলেন, সিটি ব্যাংক আরও অনেককে এ সম্মাননা দিয়েছেন আমার আগে। মনে হয় আমার সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। অনুভূতি প্রকাশে পুরনো এক ঘটনায় ফিরে যান রুনা লায়লা। স্মৃতিচারণে বলেন, ১৯৭৪ সালের কথা। ভারতে গিয়ে প্রথম গাইলাম ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’ গানটি। ইএমআই গানটি রেকর্ড করল। অসম্ভব জনপ্রিয় হলো গানটি। কিছুদিন পর আবার কলকাতায় গেলাম। তখন ইমিগ্রেশনে থাকা এক দাদা আমার পাসপোর্টটি নিয়ে অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করে বললেন ‘আপনি কি সেই সাধের লাউ?’ উত্তরে বললাম, আমি সাধের লাউ নই তবে আমিই গানটা গেয়েছি। শিল্পীর মুখে এমন কথায় হাসির রোল পড়ে যায় মিলনায়তনজুড়ে। অনুষ্ঠানে রুনা লায়লাকে শুভেচ্ছা জানান আরেক বরেণ্য শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, এখন অনেক শিল্পীকেই কিংবদন্তি বলে আখ্যা দেয়া হয় যদিও সবাই কিংবদন্তি নয়। সত্যিকার অর্থে কিংবদন্তি শিল্পী হলেন রুনা লায়লা। উপমহাদেশের বাইরেও সারা বিশ্বের মানুষ তাঁকে চেনে। আমার সৌভাগ্য তাঁর কিশোরী বয়সেই আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মতো শিল্পী একদিনে তৈরি হয়নি। ভিত্তিটা মজবুত বলেই আজও সমান তালে গেয়ে যাচ্ছেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা বলেন, কোন শিল্পীকে যদি আইডল হিসেবে মানতে হয় তিনি হলেন রুনা লায়লা। এ কারণেই তার গায়কী, সময়জ্ঞান কিংবা আচরণ— সবকিছ্ইু শিক্ষণীয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে রুনা লায়লার গাওয়া বিভিন্ন জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান এই প্রজন্মের শিল্পী কোনাল। তিনি একে একে গেয়ে শোনান- ও আমার দেশ ও আমার বাংলাদেশ, আমার মন বলে তুমি আসবে, সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে, যখন থামবে কোলাহল, বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে, বন্ধুর তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম ও শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাবো গানগুলো। বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম গানটির গাওয়ার সময় শিল্পী রুনা লায়লাও তার বসার স্থানটি ছেড়ে উঠে গাইতে শুরু করেন। শিল্পী গানটির শেষ দিকেও একইভাবে কণ্ঠ মেলান রুনা লায়লা। পটুয়া কামরুল হাসান আর্ট স্কুলের চিত্রকলা প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী ॥ পটুয়া কামরুল হাসান আর্ট স্কুল আয়োজিত ৭ম জাতীয় শিশু চিত্রকলা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও চিত্রপ্রদর্শনী শুরু হয়েছে গতকাল। রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় শনিবার সন্ধ্যায় দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। ভাষাসৈনিক ও লেখক আহমদ রফিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পটুয়া কামরুল হাসান আর্ট স্কুলের চেয়ারম্যান ও শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কথাশিল্পী আতা সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন এ বি ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। জুরি কমিটির পক্ষে বক্তব্য দেন চিত্রশিল্পী মামুন কায়সার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পটুয়া কামরুল হাসান আর্ট স্কুলের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বাবু। বয়সভিত্তিক চারটি গ্রুপে ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে ৫২ জন। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ৬১ জনের চিত্রকর্ম। চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার পেয়েছে কিশোরগঞ্জের তš§য় রায়। সে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে দশ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড, গোল্ডেন ট্রফি, সনদপত্র, উত্তরীয় ও বই। ক গ্রুপ থেকে ঢাকার সৈয়দ ফাহিম মাহমুদ জয়, খ গ্রুপ থেকে ঢাকার সামাইলাহ সারোয়ার রাইশা, গ গ্রুপ থেকে ঢাকার হাসান মুশফিক শাবাব এবং ঘ গ্রুপ থেকে সামিয়া মল্লিক অর্পিতা ১ম স্থান অর্জন করেছে। তারা পেয়েছে দুই হাজার টাকার প্রাইজবন্ড, সনদপত্র ও বই। দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীরা পেয়েছে এক হাজার টাকার প্রাইজবন্ড, সনদপত্র, উত্তরীয় ও বই। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা পেয়েছে দুই শত টাকার প্রাইজবন্ড, সনদ ও বই। আজ সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘পায়ে উর্বর পলি’ ॥ সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় সাজানো আবৃত্তি প্রযোজনা ‘পায়ে উর্বর পলি’। শনিবার সন্ধ্যায় প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হলো সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে। আনিসা জামান চাঁপা গ্রন্থিত ও আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম নির্দেশিত প্রযোজনাটি নির্মাণ করেছে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। সোয়া ঘণ্টার এই আবৃত্তিসন্ধ্যায় গল্পচ্ছলে উঠে আসে সৈয়দ শামসুল হকের বাল্যজীবনসহ নানা বিষয়। সেই সঙ্গে কবির কবিতার আশ্রয়ে বর্ণিত হয় নারী-পুরুষের বেড়ে ওঠা, সামাজিক সংগ্রাম, স্বাধিকআর আন্দোলনসহ নানা বিষয়। এতে আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেন রফিকুল ইসলাম, তামান্না সারোয়ার নীপা, নাসিমা খান বকুল, অপু শহীদ, নূরজাহান আক্তার প্রমুখ। ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার’ ॥ ড. ভূপেন হাজারিকার ৫ম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার’ শীর্ষক সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভূপেন হাজারিকার গাওয়া আমি এক যাযাবর, মানুষ মানুষের জন্য, তোমরা গেইলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে, মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার, আয় আয় ছুটে আয় সজাগ জনতা, চোখ ছল ছল করে ওগো মা, শরতবাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে, মোরা যাত্রী একই তরণীরসহ বেশকিছু গান পরিবেশন করেন লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়াও ভূপেন হাজারিকার ৯০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ভূপেন হাজারিকার গানের কর্মশালায় অংশ নেয়া প্রশিক্ষণার্থীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনাÑ আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয় এবং ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে দোলা হে দোলাসহ বেশকিছু গান।
×