ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়কে সম্মানজনক পদে চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

জয়কে সম্মানজনক পদে চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চলমান কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বে সম্মানজনক পদে চাইছেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। দলের ২০তম কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় অংশে বিভিন্ন বিভাগীয় ও প্রবাসী নেতাদের বক্তব্যে এই দাবি উঠে আসে। তারা বলেছেন, নবীন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আগামী দিনের নেতা তৈরির লক্ষ্যে অবশ্যই সজীব ওয়াজেদ জয়কে এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্মানজনক পদে দেখতে চাই। তৃণমূল নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেন, আমাদের ফিউচার লিডার সজীব ওয়াজেদ জয়। তাকে নিয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে দ্বিতীয় পর্বে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামীকালের (রবিবার) অধিবেশনে শুধুমাত্র কাউন্সিলররা উপস্থিত থাকবেন। আজকে অনেক জেলার নেতা সাংগঠনিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও অনেকে জমা দেননি। আজকে যারা বক্তব্যের সুযোগ পাননি, দ্বিতীয় অধিবেশনে তারা তিন মিনিট করে সময় পাবেন। শনিবার জোহরের নামাজের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শুরু হয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন। অধিবেশেনে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগের জেলা নেতারা বক্তব্য রাখেন। অধিবেন সঞ্চালক দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ মাইকে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্মেলনে এসেছেন। রংপুর জেলার কাউন্সিলর হিসেবে অধিবেশনে যোগ দেন জয়। তিনি সম্মেলনস্থলে পৌঁছে কাউন্সিলরদের প্রথম সারিতে বসেন। তখন কাউন্সিলর-ডেলিগেট এবং অন্যান্য নেতাকর্মী একযোগে বলতে থাকেন জয়কে মঞ্চে চাই। সবার দাবির প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে মঞ্চে যেতে বাধ্য হন জয়। মঞ্চে যাওয়ার পর মা শেখ হাসিনা তাকে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বলে পরিচয় করিয়ে দেন। জয় সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে মঞ্চের পেছনের সারিতে বসতে উদ্যত হন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কেউই তাকে পেছনে বসতে দিতে রাজি নন। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জয়কে হাত ধরে তার পাশের আসনে বসার অনুরোধ করেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফও একই অনুরোধ করলে জয় সেখানে বসে পড়েন। কিন্তু বসার আগে তিনি বার বার যুক্তি তুলে ধরেন যে, এটি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সারি। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তিনি এখানে বসতে পারেন না। জয় বসার পর বিষয়টি সবাইকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, জয় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সারিতে বসতে চাচ্ছিল না। সে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং এটাকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু সবার অনুরোধে আর যেহেতু বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র তাই সামনের সারিতেই বসেছে। খুলনা বিভাগের পক্ষে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, আগামী দিনের নেতা তৈরির লক্ষ্যে অবশ্যই সজীব ওয়াজেদ জয়কে এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্মানজনক পদে দেখতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আরেক নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে মানি লন্ডারিং করে, বিদেশেও ধরা খায়। জেল হয়। আর আমাদের নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে এমন অভিযোগ তো দূরের কথা সারা বিশ্বেই তার সুনাম। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা পুরস্কার অর্জন করেন। জয় শুধু দেশের তরুণ সমাজের প্রতিনিধিই নন, বিশ্বের কোটি কোটি তরুণের প্রতিনিধি। কাজেই আগামীতে যে কমিটি আসবে সেখানে তাকে সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে চাই। তিনি বলেন, আমি ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গেছি। সেখানে সবাই জয়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি আইসিটি খাতের পাইওনিয়র। এ সময় তিনি উপস্থিত কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের উদ্দেশে বলেন, কী ভাই আপনারা চান কি না? এ সময় উপস্থিত সবাই হাত তুলে তাকে সমর্থন করেন। তিনি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে ফেলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের শত্রু অন্য কেউ না। নিজেরাই নিজেদের শত্রু। দলের ভেতরে কোন সমস্যা হলে সেটা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। তা না করে নিজেরাই নিজেদের সমালোচনা করি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু নিজেরা এগুলো প্রচার করি না। এসব উন্নয়ন প্রচার করা হলে, জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে আগামীতে আরও ২০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে ডিজিটাল বিপ্লব হচ্ছে এর রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়। আমরা তাকে নেতৃত্বে চাই। জয় নেতৃত্বে এলে দেশের তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দীন বলেন, রাজশাহী বিভাগের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখতে চাই। তিনি জানান, জয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসুক সেটা তৃণমূলের একান্ত দাবি। তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের জন্য কাজ করছেন। তাকে দলীয় নেতৃত্বে আনলে দল ও দেশ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, বগুড়া জেলাতে জঙ্গীবাদ সৃষ্টিকারী দল বিএনপি-জামায়াত কোন তৎপরতা সৃষ্টি করতে পারেনি। যখনই কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিরোধ করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুচ সালাম বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে চাই। তিনি বলেন, জননেত্রী আপনার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে আপনার রানিংমেট কে থাকবে সেই সিদ্ধান্ত আপনিই নেবেন। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধীরেন্দ্র নাথ সম্ভু বলেন, জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বাংলাদেশ। আমরা তাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চাই। ঢাকা বিভাগের পক্ষে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী ইমদাদুল হক, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকও একই দাবি জানান।
×