ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

শিল্পীর শৈল্পিক পরশে রূপ নিচ্ছে ‘দেবীদুর্গা’

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১ অক্টোবর ২০১৬

শিল্পীর শৈল্পিক পরশে  রূপ নিচ্ছে ‘দেবীদুর্গা’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আসন্ন। প্রতিমা তৈরির কারিগরপাড়ায় লেগেছে উৎসবের আগাম হাওয়া। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দিন গণনাও শুরু হয়েছে। দুর্গতিনাশিনী দেবীর আগমনী বার্তায় ভক্তকুলে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এরই মধ্যে। রাজশাহীর আলুপট্টি এলাকার পালবাড়িসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা শিল্পীরাও চরম ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শিল্পীর নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে কাদা-মাটি দিয়ে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমায় এখন ভরে উঠেছে ‘পালপাড়া’। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে শারদীয় উৎসবের আয়োজন। তাই এখন প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। প্রতিমা তৈরির পর শুরু হবে রূপায়নের কাজ। রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে দেবীর প্রতিকৃতি। তাই যেন ঘুম নেই পালবাড়িতে। মনের আনন্দে কাজের ছন্দে চলছে পার্বণের জোর প্রস্তুতি। রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িত কার্তিক চন্দ্র পাল। সব পূজার মূর্তি তৈরি করেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের। নগরীর আলুপট্টি এলাকায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গা প্রতিমা তৈরির অবকাঠামো কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। মূলত প্রতিবছর রাজশাহী শহর এলাকায় বেশিরভাগ পূজাম-পেই সেজে ওঠে পালবাড়ির প্রতিমায়। প্রতিমার সাজসজ্জা শেষে তুলে দেয়া হয় মহানগীরসহ জেলা ও রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন পূজাম-পে। প্রতিমা শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল জানান, বংশ পরম্পরায় এ পেশা পেয়েছেন তিনি। বাবা বাবু চন্দ্র পাল তার শৈল্পিক হাতে প্রতিমা তৈরি করতেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এগুলো দেখেই তার বেড়ে ওঠা। প্রতিমা তৈরির নেশা তাকে বইপত্রে মন বসাতে দেয়নি। তাই মাত্র দশ বছর বয়সেই দীক্ষা নেন বাবার কাছে। বাবার কাছেই শেখেন কাদা-মাটি আর কাঠ-খড় দিয়ে কিভাবে প্রতিমা গড়া যায়। কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, এবার আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তারা প্রতিমা তৈরি শুরু করেছেন, অবকাঠামো ও মূর্তির আকৃতি বানানোর কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু প্রতিমাগুলোর নকশা ঠিকঠাক করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দুর্গা প্রতিমাগুলোয় চূড়ান্ত রঙ লাগিয়ে পোশাক-পরিচ্ছদে সুসজ্জিত করা হবে। তারপর সময়মতো যাবে বিভিন্ন ম-পে। শুধু শিল্পী কার্তিক নয়, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজনে এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ম-পে ম-পেও শুরু হয়েছে কাজকর্ম। জেলার অনেক ম-পেই বসে প্রতিমা তৈরিও করা হয়। রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অনিল কুমার সরকার জানান, এবার রাজশাহীতে ৪১৮ ম-পে দুর্গাপূজার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় রয়েছে ৩৪৮ এবং মহানগর এলাকায় রয়েছে ৭০। পূজার নিরাপত্তা নিয়ে এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাজশাহী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুষ্ঠু ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বছর দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য সভায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পূজাম-পও সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। অক্টোবরের শুরু থেকেই শারদীয় উৎসবের আমেজ শুরু হবে। দেখা মিলবে বাহারী রঙে সাজানো ম-প। বাজবে পূজার বাদ্য।
×