ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানির লবণ ঈদের আগে আসছে না ॥ অস্থিরতা থাকছেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আমদানির লবণ ঈদের আগে আসছে না ॥ অস্থিরতা থাকছেই

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সরকার সঙ্কট মোকাবেলা ও মূল্যের উর্ধমুখী প্রবণতা রোধে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর সবই আসবে ভারত থেকে। তবে এটা নিশ্চিত যে, ঈদ-উল-আযহার আগে কোন অবস্থাতেই এগুলো দেশে পৌঁছুবে না। এছাড়া ঈদ-উল-আযহার পরবর্তী সময়ে কখন পৌঁছুবে তাও এখন সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে যারা লবণ আমদানির অনুমতি পেয়েছে তারা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিকে, পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে লবণের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে তা অব্যাহত রয়েছে। অপরিশোধিত লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে গত এক মাসের ব্যবধানে ৭৪ কেজির প্রতিবস্তা লবণের মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে। দেশে চাহিদার ৯০ শতাংশেরও বেশি লবণ উৎপন্ন হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ মেট্রিক টন। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত ২২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ থেকে পরিশোধন করে এ পরিমাণ লবণ বাজারজাত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বাড়তি লবণের প্রয়োজন হয় ৫ লক্ষাধিক মেট্রিক টন। এমন একটি সময়ে লবণের বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা যেমন ভোগান্তির কবলে পড়েছে, তেমনি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে লিপ্ত ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা আর্থিক ক্ষতি গুনবেন। চট্টগ্রামে লবণের মিল মালিক ও পরিশোধনে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানানো হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৭৪ কেজির প্রতিবস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকায়। পরবর্তী এপ্রিল ও মে মাসে তা ৮৫০ টাকায় উন্নীত হয়। জুলাইতে তা আরও বেড়ে ৯শ’ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর ঈদ-উল-আযহার পূর্বে সে লবণ বিক্রি হচ্ছে এখন ১৩ থেকে ১৪শ’ টাকা দরে। উল্লেখ্য, কয়েক শ্রেণীর লবণ রয়েছে। এরমধ্যে আয়োডাইজড লবণ অন্যতম। প্রসঙ্গত, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, মাতারবাড়ি, টেকনাফ ও উখিয়ায় এবং জেলার বাঁশখালীতে মূলত চাহিদার অধিকাংশ লবণ উৎপন্ন হয়। এ লবণ মিল মালিকদের কাছে সরবরাহ হয় অপরিশোধিত আকারে। কক্সবাজারের ইসলামপুর, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা ও শহরের মাঝিরঘাট এলাকায় লবণ পরিশোধনের মিলগুলোর অবস্থান। শনিবার মিল মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের মওসুম শেষে প্রান্তিক পর্যায়ে চাষীরা লবণ মজুদ করেছে। যে কারণে সরবরাহ হয়েছে কম। আর যারা সরবরাহ দিচ্ছে তারা চড়ামূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে, সরকার গেল বছর একলাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমোদন দিয়েছিল। এবার দিয়েছে দেড়লাখ টন। এসব লবণ আমদানি করবে নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, পটিয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের যেসব স্থানে লবণ মিল রয়েছে তাদের মালিকরা। কিন্তু এদের সঙ্গে ভুয়া মিল মালিকদেরও লবণ আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে, ভিন্ন পণ্যেও গুদামকে লবণ মিল হিসাবে দেখিয়ে কেউ কেউ লবণ আমদানির লাইসেন্স পেয়ে গেছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর গোমাতলী উল্লেখ করে ন্যাশনাল আয়োডাইজড সল্ট নামে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে বিসিক। অথচ, ওই স্থানে এ নামে কোন লবণ মিলের অস্তিত্ব নেই। এ ধরনের অস্তিত্বহীন লবণ মিল দেখিয়ে প্রচুর প্রত্যয়নপত্র হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিসিক সূত্রে জানানো হয়, কক্সবাজার অঞ্চলে ৫২টি লবণ মিল রয়েছে। এরমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১০টি। বিসিক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাড়ে তিন শ’রও বেশি লবণ মিল রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে অবস্থিত। অতীতে লবণের মূল্য এত উর্ধে কখনও যায়নি বলে চট্টগ্রামের লবণ মিল মালিকদের সূত্রে জানানো হয়েছে। তবেসরকার যে লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে তা ঈদের আগ মুহূর্তে বা পরবর্তী স্বল্পতম সময়ে এসে পৌঁছুলে ভোক্তা ও চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের কাজে লাগত। কিন্তু এক্ষেত্রে খুব বিলম্বে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। আবার এ সিদ্ধান্তও দেয়া হয়েছে একসপ্তাহের মধ্যে লবণের বাজার মূল্য না কমলে আরও একলাখ টন আমদানির সুযোগ দেয়া হতে পারে।
×