ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ল্যান্ডফোনে চালু হচ্ছে ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ল্যান্ডফোনে চালু হচ্ছে ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি

ফিরোজ মান্না ॥ আগামী বছর ল্যান্ডফোনে চালু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি। বিটিসিএল ১৭১ কেএল বা এক লাখ ৭১ হাজার নামের প্রকল্পের মাধ্যমে এ সেবা দেবে। প্রথম দফায় দুই লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহক ‘একের ভেতর তিন’ এ সুবিধা পাবেন। পরে আগামী দুই বছরের মধ্যে সব গ্রাহককে এ সেবার আওতায় আনা হবে। বিটিসিএল দেড় বছর আগে সেবাটি সীমিত আকারে চালু করলেও পরে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বিটিসিএল তখন ব্যাখ্যা দিয়েছিল কারিগরি ত্রুটির কারণে সেবাটি চালু রাখা যায়নি। এখন সব সমস্যা দূর করে নতুনভাবে সেবাটি গ্রাহকের কাছে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) জানিয়েছে, ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগের সুবিধা দেবে ল্যান্ডফোন। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির সুইচ বোর্ডের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবার গ্রাহক প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বেশি হয় বলে কপার কেবল ব্যবহার করা হয়নি এ প্রকল্পে। এনজিএনভিত্তিক সফট-সুইচের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা যাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ সেবা যেমন ফাইবার টু দ্য বিল্ডিং, ফাইবার টু দ্য হোম ও ফাইবার টু দ্য অফিস সেবা দেয়া সহজ হবে। ফলে গ্রাহকরা একই সঙ্গে ভয়েস, ভিডিও এবং ডাটা সেবা সুবিধা পাবেন। সুইচের পরীক্ষামূলক ব্যবহারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা, গুলশান, শেরেবাংলা নগর, রমনা, মগবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এক লাখের বেশি টেলিফোনে এ সেবা চালু করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ফাইবার অপটিক বসানো শেষ হলেই গ্রাহক সেবা দেয়া শুরু হবে। গ্রাহকদের এসব সেবা নিতে আলাদা আলাদা বিল দিতে হবে। ভয়েসের জন্য এক ধরনের বিল, ইন্টারনেট ও ডিশ টিভির জন্য আরেক ধাপ বিল থাকবে। গ্রাহকরা ইচ্ছা করলে যে কোন সেবা নিতে পারবেন। একসঙ্গেই যে তিনটি সেবা নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সেবাগুলোর জন্য বিটিসিএল প্যাকেজ দেবে। গ্রাহক সুবিধামতো প্যাকেজ নিতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে টেলিফোন নম্বরের আট ডিজিটে পরিবর্তন এনে মিরপুর ডিওএইচ এলাকায় সেবা চালুর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার টেলিফোনগুলো প্রস্তুত করা হবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের পুরনো টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে সেবাটি পুরোপুরি চালু হবে। এর আগে সেবা চালুর জন্য স্থাপনকৃত যন্ত্রগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলবে। কারণ এর আগে সীমিত আকারে সেবাটি চালু করার পরপরই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রকল্পের কোন কাজে কোন রকম ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। সেবাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নানা দিক থেকে নানা প্রশ্ন উঠেছিলÑ কেন সেবাটি বিটিসিএল বন্ধ করে দিল। এখানে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর) ও কেবল অপারেটরদের কোন যোগসাজশ ছিল কি-না। বছরজুড়েই বিটিসিএল এ অপবাদ শুনে এসেছে। এবার বিটিসিএল এটা শুনতে রাজি নয়। ‘ট্রিপল প্লে’ সার্ভিস চালু হলে রাজধানী ঢাকা তারমুক্ত শহর হবে। ল্যান্ডফোনের লাইন মাটির নিচ দিয়ে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু ডিশ লাইন ও আইএসপিদের লাইন মাটির ওপর দিয়ে গ্রাহক পর্যন্ত গেছে। এতে রাজধানীজুড়ে কেবল তার আর তার। কোন কোন জায়গায় তারের কু-লী বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় এসব তারের কু-লী সড়কের ওপর পড়ে পথচারীদের পায়ে জড়িয়ে যায়। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ট্রিপল প্লে প্রকল্পের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি প্রতিবেদন বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। বিটিসিএল কমিটির প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করেছে। এ কাজে মোট আটটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছিল। এখান থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে শীঘ্রই বিটিসিএল ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করবে। কাজটি দ্রুত করা হবে। আগামী বছরের শুরুতেই ট্রিপল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন ল্যান্ডফোন গ্রাহকরা। রাজধানীর মিরপুর ও বারিধারায় সীমিতসংখ্যক গ্রাহক বর্তমানে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী বছরের শুরুতে গ্রাহকরা ডিশ সুবিধা পাবেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায় এ সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সাত ডিজিটের ফোন নম্বরের বদলে আট ডিজিট করা হয়েছে। উত্তরা এক্সচেঞ্জের ৮৯১ এবং ৮৯২ গ্রুপের সাত হাজার পুরনো টেলিফোন নম্বর আট ডিজিট করার কাজ শেষ হয়েছে। শেরেবাংলা নগর ও গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় আট হাজার নম্বর পাল্টে যাবে। মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় সাত হাজার টেলিফোন আট ডিজিটে করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার সর্বত্র অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন হওয়ার আগে সব এলাকায় এ সেবা পাওয়া যাবে না। উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান, রমনা, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় এক লাখ গ্রাহকের টেলিফোন নম্বর আট ডিজিটে পরিবর্তন করার কাজ চলছে। রাজধানীর পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন (১৭১ কেএল) প্রকল্পটি বিটিসিএল পরিচালনা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। বিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রাহকদের আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×