স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ আটটি উপজেলায় সরকারী ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে ধান সংগ্রহের কোটি টাকার ভর্তুকি লুটে নেয়ার অভিযোগ করেছে নিরীহ কৃষক। ইউএনওর নেতৃত্বাধীন ধান সংগ্রহ কমিটি ও মিল মালিক সিন্ডিকেট যোগসাজশ করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার আশ্বাসে টিপ-সই নিয়ে মিল মালিকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারী নির্দেশনা না মেনে ফড়িয়া, ব্যবসায়ী ও দালালদের কাছ থেকে ধান কিনছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারী ভর্তুকির টাকা কৃষকের পরিবর্তে চলে যাচ্ছে মিল মালিকের পকেটে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে গত মে মাসে মাঠে মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে উৎসব চলে। তবে এ উৎসবে কৃষকের মুখ ছিল মলিন। প্রতি একর জমিতে ধান চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মোটা চিকন প্রকার ভেদে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে উৎপাদন মেটাতে পারছে না। এ অবস্থায় অনেক কৃষক লোকসান দিয়েই বিক্রি করছে ধান। এদিকে মিল ও চাতাল মালিকরা ধান কিনতে শুরু না করায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বাজারে ধান কিনছে না। আর চাতাল মালিকরা বলছে, চাল কেনার বরাদ্দ দেখে তারা ধান কিনবে। এবার ২৩ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ ৯শ’ ২০ টাকা মণ দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনবে সরকার। সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদফতরের অধীনে এ বছর আট হাজার ১৬৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে ধান ক্রয় অভিযান শুরু করার কথা থাকলেও জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় বলে জানান কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শাহ জামাল। তিনি জানান, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহের পাশাপাশি ধান সংগ্রহ কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যে ইউনিয়নভিত্তিক প্রান্তিক চাষীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্ডধারী কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকার বাইরে ফড়িয়া, ব্যবসায়ী ও দালালদের কাছ থেকে ধান না কেনারও সরকারী নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি। জুলাই শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চার হাজার টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়া উপজেলায়। চকরিয়ার চিরিংগা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মিল মালিক ফজল করিম উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটিকে প্রভাবিত করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নানা তালবাহানার মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে মিল মালিক ফজল করিমের কাছ থেকে সমুদয় ধান কিনে নিয়েছে। তারপর সিন্ডিকেট ধান বিক্রেতা কৃষকদের তালিকা করে ধানের বিপরীতে উল্টো কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে মর্মে মিথ্যা ধান কেনার আশ্বাস দিয়ে টিপ-সই আদায় করে তালিকার কৃষকদের হাতে ৫শ’ থেকে এক হাজার করে টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ কৃষকদের। সহজ-সরল কৃষকরা টিপ-সই দেয়ার পর আঁচ করতে পারেÑ তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে। এমনকি ধান বিক্রি করতে না পারায় একদিকে কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি হচ্ছে, অন্যদিকে ধান সংগ্রহে সরকারের দেয়া ভর্তুকির লাখ লাখ টাকা পকেটে চলে যাচ্ছে মিল মালিক সিন্ডিকেট ফড়িয়া, কমিটির লোকজনের হাতে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: