স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামিরা আমার বাবাসহ ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর তারা গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৭ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার।
সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ সোলায়মান। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা, গ্রাম গুরুই, থানা-নিকলী, জেলা-কিশোরগঞ্জ। আমি লেখা পড়া করি নাই। আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালেও আমি কৃষিকাজ করতাম। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের ২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারা দুটি নৌকা ও একটি লঞ্চ যোগে আমাদের গ্রামের ইচব আলীর বাড়ির ঘাটে আসে। এ ঘটনা দেখে আমি দৌড়ে বাবাকে তা জানাই। এর কিছুক্ষণ পরই আমি বসু বাহিনী এবং পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা হটে এক কিলোমিটার দূরে নেড়াঝুড়ি হাওড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়।
সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, এরপর ঐ দিন বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা পুনরায় লঞ্চ ও নৌকাযোগে ইচব আলীর বাড়ির ঘাটে আসে। এরপর তাদের সঙ্গে বসু বাহিনীর পুনরায় গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় আমি খালেকের বাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘিতে দলের ভেতর লুকাই। কিছুক্ষণ গোলাগুলি থেমে গেলে বুঝতে পারি বসু বাহিনী পিছু হটে গেছে। এরপর দেখি রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানসহ অন্য রাজাকাররা ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বাবাসহ আমাদের পাড়ার কিছু লোককে ধরে খালেকের বাড়ির সামনে জড়ো করে গুলি করে হত্যা করে। তাদের সঙ্গীয় রাজাকারদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছিল। এরপর রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মিরা দক্ষিণ দিকে চলে যায়। তার কিছুক্ষণ পর আবার গোলাগুলির শব্দ পাই। গোলাগুলি থেমে গেলে দিঘিরদলের মধ্য থেকে বের হয়ে খালেকের বাড়ির উঠানে যাই। সেখানে আমার বাবার লাশসহ ১০ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখি। এদের মধ্যে আমার বাবা ছাড়াও প্রতিবেশী আবু, ফুল মিয়া এবং অন্যরা ছিল। এরপর রেহমত আলীর বাড়ির পাশে বটতলায় আরও ১৬টি লাশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। ১৬ জনের মধ্যে আফতাব উদ্দিন, জিন্নত আলী, সুরুজ আলী এবং অন্য যারা ছিল তাদের নাম এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। এই ১৬ জনই আমাদের গ্রামের বাসিন্দা ছিল।
সাক্ষী সোলায়মানের জবানবন্দী
হোসাইন ও মোসলেম আমার বাবাসহ ২৬ জনকে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: