ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী-পুরুষের আড্ডা এখন যমুনা পাড়ে

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১৬ জুলাই ২০১৬

নারী-পুরুষের আড্ডা এখন যমুনা পাড়ে

বর্ষায় উত্তাল উন্মাদনায় প্রমত্তা যমুনা এখন অস্থির। এই বর্ষায় যমুনার রূপ উথাল-পাথাল করছে। সর্বাঙ্গে জেগে উঠেছে যৌবন। পরিবার পরিজন নিয়ে সেই রূপ উপভোগ করার এখনই সময়। যমুনার হার্ডপয়েন্ট এসবই পর্যটককে টানে। পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, কিংবা বাঙালীর চিরায়ত যে কোন উৎসবে সিরাজগঞ্জের যমুনাপাড়ের হার্ড পয়েন্ট উৎসবে মেতে ওঠে। দিন শেষে পড়ন্ত বিকেলে শিশু নারী-পুরুষের ঢল নামে। মনে হয় উজান থেকে নেমে আসা পানিতে পাড়েও ফিরেছে যমুনার যৌবন। নানা বয়সী নারী-পুরুষের আড্ডায় হার্ড পয়েন্ট পরিণত হয় মিলনমেলায়। প্রতিদিন হাজারো শিশু-নারী-পুরুষ আসে যমুনা নদীর তীরে। রিক্সা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকারে চেপে তারা আসে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও গ্রামাঞ্চল থেকেও মানুষ আসে হার্ড পয়েন্টে। পয়লা বৈশাখে কিংবা যে কোন উৎসবে এই হার্ড পয়েন্ট অন্য দিনের চেয়ে ভিন্নভাবে মেতে ওঠে। তরুণ-তরুণীরা বাংলার চিরায়ত রূপ খুঁজে বেড়ায় যমুনায়। সিরাজগঞ্জে বেড়াতে এলে আরও আকর্ষণ করবে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের ইকো পার্ক। এখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালিসহ চিত্রা হরিণ, ময়ূর, বানর, সজারু আর নানা পশুপাখি। শহরের কাছে পুরনো জেলখানার ঘাটে হার্ড পয়েন্টে দাঁড়ালে দূর থেকে মনে হয় যমুনার বুকে অসংখ্য তারা জ্বল জ্বল করছে। আসলে এগুলো আকাশের তারা নয়, বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপর। যাতায়াত করছে দ্রুতগামী যানবাহন। সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ড পয়েন্টে দাঁড়ালে এই মনোরম দৃশ্য যে কোন পর্যটককে আকর্ষণ করে। আবার হার্ড পয়েন্টের কাছেই যমুনা ক্রোধে ফুঁসে উঠছে। প্রচ-গতিতে ঢেউ এসে আঘাত হানছে। কিন্তু যমুনার ক্রোধ পরাস্ত হয়ে নুয়ে পড়ছে পাড়ে। যমুনার বিশাল জলরাশি ছল ছল শব্দ করে ঢেউ খেলে মিলিয়ে যাচ্ছে। নির্মল বায়ু সেবনের আমেজে নানা বয়সী মানুষ আড্ডায় মেতেছে। হার্ড পয়েন্টে এমন অনেক দৃশ্য চোখে পড়ে। প্র্রাকৃতিক এসব দৃশ্য দেখে মন আলোড়িত হয়। যমুনা নদীর তীর এখন চমৎকার অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অথবা কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের মতো হরেক রকম সুবিধা না থাকলেও সিরাজগঞ্জ শহর বরাবর যমুনা নদীর তীরে এখন ভ্রমণবিলাসীদের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। পৌরসভা গড়ে তুলেছে শহীদ শেখ রাসেল পার্ক। শিশু-কিশোর ও নারীদের চিত্ত বিনোদনের আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে যমুনার তীরে। এ যেন শিশু-নারী-পুরুষের মিলনমেলা। পড়ন্ত বিকেলে যমুনার পানিতে অস্তগামী সূর্যের লাল আভা অবলোকন করা যায়। গা জুড়ানো বাতাস উপভোগ আর কিছুটা সময় ভিন্ন পরিবেশে অবস্থান করাই হচ্ছে নদীতীরে মানুষের মিলনমেলা জমে ওঠার প্রধান কারণ। প্রতিদিন হাজারো শিশু-নারী-পুরুষ আসছে যমুনা নদীর তীরে। রাক্ষুসী যমুনার ভয়ঙ্কর ছোবলের হাত থেকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার জন্য নির্মিত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ হার্ড পয়েন্টে শিশু-নারী-পুরুষের মিলনমেলায় রূপ নেয়। হার্ড পয়েন্টে রয়েছে তিনটি কান্ট্রিবোটঘাট ও একটি লঞ্চঘাট। কুঁচিপাথরে ঢালাই করা সিঁড়িতে এবং হার্ড পয়েন্টের উপরিভাগে বেঞ্চের মতো দেখতে গার্ডারের ওপর অনায়াসে বসে চুটিয়ে আড্ডা দেয় ভ্রমণবিলাসীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড রাস্তার পাশেই নির্মাণ করেছে বসার জন্য পাকা বেঞ্চ। কয়েকটি ছাতাও নির্মাণ করা হয়েছে। এখানেও মানুষ বসে আড্ডা দেয়। নবদম্পতি-যুবক-যুবতী এমনকি প্রেমিকযুগলও বসে নদীর কিনারে ভাসমান বাঁশের চালায়। সবুজ ঘাসেও বসে অনেকে। শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি পৌর শিশু পার্কে রয়েছে নাগরদোলা। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। বর্তমানে শহীদ শেখ রাসেল পার্ক আরও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×