ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাখালী খালে ৬ বছরের শিশু নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৬

মহাখালী খালে ৬ বছরের শিশু নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার মহাখালী খালে পড়ে যাওয়া ছয় বছরের কন্যা শিশু সানজিদা আক্তার বুধবার দিবাগত রাত বারোটা পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। টানা নয় ঘণ্টা অভিযানের পরেও ফায়ার সার্ভিস শিশুটির সন্ধান পায়নি। রাত বারোটায় উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। আজ সকাল ছয়টায় আবার অভিযান শুরু করার কথা রয়েছে। খালের পাড়ে রাস্তা না থাকায় উদ্ধার অভিযানের সরঞ্জাম বহন করা সম্ভব না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। স্থানীয়রা বলছেন, খালের নোংরা পানিতে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হওয়াই স্বাভাবিক। এদিকে মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সানজিদার পরিবার। সানজিদার মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। খালের পাড়ে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানী ঢাকার মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল লাগোয়া পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিতে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সানজিদার মা গৃহিনী রুবি আক্তার (৩৯)। বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানাধীন দক্ষিণ বেপারী পাড়ায়। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে পাশের বাসার তামিনের সঙ্গে বাসার সামনেই খালের পাড়ে খেলছিল। খেলতে খেলতেই দু’জনে খালের পানিতে পড়ে যায়। তামিন পুরোপুরি খালের ভেতরে পড়েনি। কাছেই পড়েছিল। সে কোনমতে মাটি খামচে উপরে ওঠে। সে-ই বাসায় এসে আমাকে সানজিদা খালের পানিতে পড়ে গেছে বলে জানায়। খালটির দুই পাড় পাকা। পানির গভীরতা ১৪ থেকে ১৫ ফুট। পানিতে যথেষ্ট স্রোতও দেখা গেছে। নোংরা পানিতে পড়েই সাঁতার না জানায় সানজিদা ডুবে যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুঁজতে থাকে। এরপর দুপুর তিনটায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যার পর জেনারেটরের সাহায্যে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে টানা রাত বারোটা পর্যন্ত অভিযান চালায়। কিন্তু হদিস মেলেনি সানজিদার। খালের পাড়ে যাওয়ার মতো কোন রাস্তা নেই। পুরো এলাকার সমস্ত ময়লা সেই খালের পানিতে ফেলা হয়। রাস্তা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা অন্তত আধাকিলোমিটার পর্যন্ত অভিযান চালাতে পারে। এরপর অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। আজ সকাল থেকে আবার অভিযান চালাবে তারা। এদিকে এমন খবরে খালের পাড়ে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। তাদের সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। সানজিদার পিতা শাহ আলম (৪৮)। বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন জাম্বুরা পাড়ায়। তিনি মহাখালী বাস টার্মিনালের ভ্যানচালক। মহাখালী দক্ষিণপাড়া বস্তিতে মাসিক আড়াইহাজার টাকা ভাড়ায় একটি কক্ষ নিয়ে বসবাস করছেন। বড় ছেলে রুবেল অষ্টম শ্রেণী, রাসেল চতুর্থ শ্রেণী আর শান্তা ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। তিন ভাই বোনই মহাখালী আমতলা প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সানজিদাকে আগামী জানুয়ারিতে স্কুলে ভর্তি করার পরিকল্পনা ছিল। সবার ছোট সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক সানজিদার পিতামাতা, ভাইবোনসহ প্রতিবেশীরা। সবার মুখেই একই আলোচনা। স্থানীয়রা জানান, খালটি মহাখালী রামপুরা হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মিশেছে।
×