ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপশক্তি রুখে দাঁড়ান ॥ বিশিষ্টজনদের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ জুলাই ২০১৬

অপশক্তি রুখে দাঁড়ান ॥ বিশিষ্টজনদের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদসহ অপশক্তি মোকাবেলায় দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, অপশক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবানী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এমন বাস্তবতায় কতিপয় বিপথগামীর কাছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ পরাস্ত হতে পারে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়- ‘সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক জঙ্গী হামলায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ নিরীহ দেশী-বিদেশী ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ইতোপূর্বে তারা বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, মত ও পেশার দেশী-বিদেশী নাগরিক হত্যা করে এসেছে। এবার তাদের আক্রমণ হয়েছে আরও ভয়াবহ। আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের ভূমিকার জন্য সাধুবাদ এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের জন্য বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ বিশিষ্টজনরা বলেন, আমরা উপলব্দি করি, ধর্মীয় জঙ্গীবাদ বৈশ্বিক সমস্যা এবং নানান নামে তাদের চিন্তাধারার অনুসারীরা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন চেষ্টায় ধারাবাহিক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, সাম্প্রতিক হামলায় হত্যাকারীদের অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ সচ্ছল পরিবারের সন্তান। হত্যাকা-ের অর্থ যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীরা তাদের ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যায় দীক্ষিত ও আচ্ছন্ন করেছে। আধুনিক ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত করে আত্মহননের পথে প্ররোচিত করেছে। আমরা মনে করি, একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে দক্ষতা ও এ ধরনের অভিযানে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, অপরদিকে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মমত্ব ও মানবিকতাবোধ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা ধর্মের নামে সারাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল- এ কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজ ৪৫ বছর পর নতুন আন্তর্জাতিক পটভূমিতে তারা পবিত্র ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ সকল ধর্ম শান্তি, মানবতা ও সৌহার্দ্যরে জয়গান করে এবং কোন ধর্ম এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের আরও লক্ষ্য জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকির বার্তা পৌঁছে দেয়া। এর মধ্য দিয়ে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জাতীয় অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করতে চায়। তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবানী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দেশের অগণিত মানুষ ধর্মের অবমাননা ও ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতা মেনে নেবে না। তারা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বদ্ধপরিকর। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা এ জাতীয় কর্তব্য সম্পন্ন করা সম্ভব নয়- প্রয়োজন একাত্তরের মতো সমাজের শক্তির ঐক্যবদ্ধ উন্মোচন ও সক্রিয়তা। আমরা দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষদের কাছে আহ্বান জানাই, আসুন আমরা সমবেতভাবে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। কতিপয় বিপথগামীর কাছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ পরাস্ত হতে পারে না।’ বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ড. কাজী খলীকুজ্জমান, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অজয় রায়, কামাল লোহানী, ড. অজয় রায়, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. ফরাসউদ্দিন, ড. অনুপম সেন, ডাঃ সারওয়ার আলী, এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, রামেন্দু মজুমদার, আলী যাকের, রাশেদা কে চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, গোলাম সারওয়ার, আবেদ খান, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, সেলিনা হোসেন, আয়শা খানম, মমতাজ বেগম, এম এম আকাশ, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন্নবী, আবুল মোমেন, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, হারুনুর রশীদ ও কাজী সালাউদ্দিন।
×