ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে বঞ্চিত কৃষক

বোরো সংগ্রহে কারসাজি

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৭ জুন ২০১৬

বোরো সংগ্রহে কারসাজি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ গৌরনদী উপজেলা খাদ্যগুদামে বোরো ধান সংগ্রহে চরম কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও গোপনে সরকারী দলের কতিপয় স্থানীয় নেতার মাধ্যমে ধান নিয়ে খাদ্যগুদাম ভরে ফেলা হয়েছে। সূত্রমতে, গৌরনদী খাদ্যগুদামে ৫০ টন ধান কারসাজির মাধ্যমে প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠেছে। গোডাউনে জায়গা না থাকার অজুহাতে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। জানা গেছে, গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। ইউনিয়নভিত্তিক প্রান্তিক চাষীদের তালিকা তৈরি করে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্রধারী কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম রয়েছে খাদ্য অধিদফতরের পরিপত্রে। প্রতিকেজি ধান ২৩ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের কথা সরকারের। কৃষকদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে ধান নিচ্ছে না গৌরনদী খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। নেপথ্যে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন হাওলাদার এবং গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার খাদ্য কর্মকর্তারা। ওই প্রভাবশালী নেতার কারসাজিতে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করে পরে একই মিলারের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হবে বলেও কৃষকরা উল্লেখ করেন। এমনকি মানসম্মত ধান না হওয়ার অজুহাতেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে হাট-বাজারে প্রতিমণ ধান ৬শ’ থেকে ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছেন। গৌরনদী খাদ্যগুদাম পরিদর্শক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, তার গোডাউনে যে ধান উঠছে তা রাখার জায়গা নেই। তাই গত ৩-৪ দিন ধরে ধান সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। আগৈলঝাড়া খাদ্যগুদামের পরিদর্শক মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, তার খাদ্যগুদাম থেকে গত দুই দিনে ৫০ মেট্রিক টন ধান চাল করার জন্য গৌরনদীর বার্থী এলাহী অটো রাইস মিলে পাঠানো হয়েছে। নওগাঁয় খাদ্যগুদামে ধান ঢোকাচ্ছে কারা? নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, ট্রাক্টরচালক জালাল। বাড়ি বর্ষাইল। খাদ্যগুদামের সামনের রাস্তায় ধানবোঝাই ট্রাক্টরের ওপর নিজ আসনে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। এভাবে পাঁচ দিন ধরে শহরের প্রধান সড়কের ওপর অপেক্ষা করছেন তিনি। তার মতো অনেকেই রাস্তার দুই ধারে ধানবোঝাই ট্রাক দাঁড় করিয়ে অন্তত ১৫ দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। এদিকে রাস্তায় দুই ধারে সারি করে ট্রাক রাখার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকছে প্রধান এ সড়কে। গত ১৫-২০ দিন ধরে প্রতিদিনের তীব্র এ যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শহরবাসী। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নওগাঁ খাদ্যগুদামের সামনের রাস্তায় সরেজমিন দেখা যায়, শহরের কাজীর মোড় থেকে মুক্তির মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দুই ধারে সারি করে অর্ধশতাধিক ধানবোঝাই ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি, ভটভটি দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস্ততম সড়কের দুই ধারে রাস্তা দখল করে ট্রাক দাঁড় করে রাখার জন্য রিক্সা, ইজিবাইক, পিকআপ গাড়িসহ অন্যান্য গাড়ি যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। খাদ্যগুদামের ভেতরেও অন্তত ৩০টি ট্রাক আনলোড হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খাদ্যগুদামের ভেতর প্রবেশ করে দেখা যায়, বেশকিছু তরুণ কৃষকের কার্ড নিয়ে গুদামে ধান দিতে এসেছেন। তারা কোন সিরিয়াল মানতে রাজি নন। পরে এলেও তাদের ধান বিশেষ সুবিধায় আগে নিতে হবে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে প্রবশ করতেই নজরে পড়ল অন্তত অর্ধশত যুবকের ভিড়। সকলের দাবি ‘আমার ধান আগে নিতে হবে’। কর্মকর্তাদের বক্তব্য, যে আগে এসে সিরিয়াল দিয়েছে তার ধান আগে নেয়া হবে। এমন নিয়মের কথা তারা যেন মানতে নারাজ। শামীম নামে এক যুবক বলেন, ‘আমি এবার মেম্বার হয়েছি। আমার ধানের গাড়ি আগে নিতে হবে। না হলে এখনি এমপিকে ফোন করে ধান কেনা বন্ধ করে দেব।’ পাশ থেকে আরেকজন বলেন, ‘আমার সিরিয়াল পরে হলেও গাড়ি ঢুকিয়েছি। আমার ধান আগে না নিলে এখনি ব্যারিকেড দেব।’ কোন কোন নেতা নামধারী আবার ওসিএলএসডিকে তার ধান আগে না নিলে ‘দেখে নেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।’ এসব কথা কোন কৃষকের নয়। প্রকৃত কৃষকরা ওই সব যুবকদের দাপট দেখে কোণঠাসা। জানা গেল, শুধু রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কৃষি অফিস থেকে কৃষক কার্ড সংগ্রহ করে আবার কেউ কেউ দরিদ্র কৃষকের কার্ড ম্যানেজ করে সরকারী গুদামে ধান দিতে এসে এমন দাপট দেখিয়ে চলেছেন। কৃষক সামছুর রহমান, জাহিদুর ম-ল ও রফিকুল ইসলামসহ ছয়-সাত কৃষক অভিযোগ করেন, সাত থেকে আট দিন ধরে তাদের ট্রাক গুদামের বাইরের রাস্তায় পড়ে আছে। অথচ অনেকে আছেন যারা পরে এসে রাজনৈতিক ও পেশীশক্তির প্রভাব খাটিয়ে তাদের ট্রাক আনলোড করে চলে যাচ্ছেন। এসব কৃষক একে অপরের কাছে জানতে চানÑ ‘ধান দিতে আসা যুবক ওরা কারা?’ এলএসডি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুণ কুমার প্রামাণিক বলেন, প্রতিদিন গড়ে এক শ’ মেট্রিক টন ধান গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। স্বাভাবিক গতিতেই ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও ৩০টি ট্রাক গুদাম চত্বরে ঢুকেছে।
×