ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সঙ্কেত

চট্টগ্রামের পথে মৌসুমী বায়ু, লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৪ জুন ২০১৬

চট্টগ্রামের পথে মৌসুমী  বায়ু, লঘুচাপের  প্রভাবে সাগর উত্তাল

শাহীন রহমান ॥ দুয়ারে প্রবেশ করেছে বর্ষা। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুও কক্সবাজার পার হয়ে এখন চট্টগ্রামের পথে। অপরদিকে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে চলে গেছে। তবে এর প্রভাবে এখানও সাগর উত্তাল রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট সঞ্চারণশীল মেঘমালার কারণে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সমুদ্রবন্দর এলাকায় তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সাগরে অবস্থানরত নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, লঘুচাপের কারণে সমুদ্রে আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। কখনও মনে হচ্ছে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আবার পরক্ষণে সৃষ্টি হচ্ছে গভীর মেঘমালার। যে কারণে সমুদ্রবন্দর এলাকায় সতর্ক সঙ্কেত বহাল থাকছে। কারণ লঘুচাপ দুর্বল হয়ে পড়লেও দেশের কক্সবাজার উপকূল দিয়ে ইতোমধ্যে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অপরদিকে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করেছে। ফলে দুই প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই যে কোন সময় আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে এখনও সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। ঢেউগুলো উঁচু হয়ে স্থলে আছড়ে পড়ছে। এ কারণে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে সমুদ্রে যেতে অনুমতি দেয়া হলে যে কোন সময় বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করলেও মূলত লঘুচাপের প্রভাবেই সারাদেশে ভারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আগামী দু’একদিন এ অবস্থা বিরাজ করবে। তবে মৌসুমী বায়ু দেশের ভেতরে প্রবেশ করার কারণেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ইতোমধ্যে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও অগ্রসর হয়ে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে দেশের অভ্যন্তরে অগ্রসর হবে। তবে সারাদেশে মৌসুমী বায়ু বিস্তৃত হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। তবে মৌসুমী বায়ুর কারণে সারাদেশে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক থাকবে। হয় তা কোথাও একটু বেশি আবার কোথাও কম হতে পারে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে সারাদেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হতে একটু সময় নেবে। কারণ পশ্চিমা লঘুচাপ দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হবে না। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সারাদেশে গত কয়েক দিন ধরে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তা মূলত সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণেই। এ কারণে মূলত দেশে বর্ষা মৌসুম আসার আগে সারাদেশে ঘটা করে বৃষ্টির দাপট রয়েছে। কোথাও ভারি বৃষ্টি আবার কোথাও বজ্রবৃষ্টিসহ কালবৈশাখীও বয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ৬ জুন থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জুন সকাল ছয়টা থেকে ১২ জুন সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ১২ মিলিমিটার। এছাড়াও সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। সবচেয়ে বেশি বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালের খেপুপাড়ায় ১০৯ মিলিমিটার। এছাড়াও টাঙ্গাইলে ৩০ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ৪৮, মাদারীপুরে ৪২, চাঁদপুরে ২৯, মাইজদী কোর্টে ৫৪, হাতিয়ায় ২৫, কক্সবাজারে ৪৪, টেকনাফ ৪৫, রাজশাহীতে ৬৮, ঈশ্বরদীতে ৩২, বগুড়ায় ২৯, বদলগাছীতে ৩৮, তাড়াশে ৭৫, খুলনায় ৬৮, মংলায় ৮৯, চুয়াডাঙ্গায় ২৫, বরিশালে ৪৩, পটুয়াখালীতে ৬০ ও ভোলায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবারের মধ্যে দেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের পূর্বাংশে আরও এগিয়ে আসতে পারে। অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ উপকূল পর্যন্ত চলে এলেও বৃষ্টি হচ্ছে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হলে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে। এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হলেও সারাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মৌসুমী বায়ু আষাঢ় আসার আগে গত শনিবারই দেশে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করেছে। এটি আরও অগ্রসর হয়ে আজকের মধ্যে তা চট্টগ্রাম বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবে তা নির্ভর করছে বায়ুটির কোন অবস্থায় রয়েছে তার ওপর। তারা বলেন, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হলে অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার দুর্বল হতে তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করলে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বায়ু সক্রিয় হতে আরও সময় লাগবে। এ হিসাবে জুন মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পরে গিয়ে দেশজুড়ে বর্ষার বিস্তার ঘটবে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার বর্ষার শুরুতে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উত্তর-মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করতে পারে। এ সময় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
×