ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুষ না পেয়ে রাজধানীর স্বাস্থ্যকর খাবার দোকান তুলে দিচ্ছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৪ জুন ২০১৬

ঘুষ না পেয়ে রাজধানীর স্বাস্থ্যকর খাবার দোকান তুলে দিচ্ছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাস্তাঘাটে খাওয়ার রেওয়াজ সারাবিশ্বেই আছে। তবে ঢাকার রাস্তার খাবার খাওয়া বেশ অস্বাস্থ্যকর। রাজধানী ঢাকাবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে (উত্তর ও দক্ষিণ) ১৬০টি নিরাপদ পথখাবারের (স্ট্রিট ফুড) দোকান দিয়েছে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। ফুটপাতের প্রশিক্ষিত খাবার বিক্রেতা ও কর্পোরেশনের ট্রেডলাইসেন্সধারী হকারদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এসব খাবার গাড়ি বিতরণ করেছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে স্বাস্থ্যকরভাবে খাবার বিক্রি করছেন। রাজধানী জুড়ে অসংখ্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান দিব্যি চালিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনকারী এসব দোকানই ধরে ধরে তুলে দিচ্ছে পুলিশ! এমনকি কোথাও কোথাও করপোরেশনের এসব ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের এমন আচরণের প্রতিকার চেয়ে দুই সংস্থার মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ‘দোকানগুলোতে চা-নাস্তার দোহাই দিয়ে জঙ্গীরা সংগঠিত হতে পারে এমন অভিযোগ দিয়ে পুলিশ তাদের ব্যবসা করতে দিচ্ছে না। অথচ পুলিশ অন্যান্য খোলা দোকানগুলো ঠিকই বসিয়ে রেখেছে।’ এর পেছনে পুলিশের চাঁদাবাজিকেই দায়ী করছেন তারা। পুলিশের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ খোদ সংস্থার দুই মেয়র। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন নিজেই ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়র সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমানকেও ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। মেয়রের নির্দেশ পেয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান ডিএমপি বরাবরে একটি পত্র দেন। এতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গবেষণায় লব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দক্ষিণ সিটির মেয়র নিরাপদ খাবার বিক্রির জন্য জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত নির্বাচিত পথখাবার বিক্রেতাদের মধ্যে গাড়িগুলো বিতরণ করা হয়।’ অথচ শাহবাগ থানার সামনেই অনেক ফুড কার্টবিহীন পথখাবার বিক্রেতারা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় শাহবাগ, কোতোয়ালি ও রমনা থানাধীন এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করেন। জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘নগরবাসী যখন বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসেন তখন কম দামে নিরাপদ খাবার পান না। সে বিষয়টি চিন্তা করে আইসিডিডিআরবি এবং ডিএসসিসি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া পথ খাবার বিক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি এসব পথ খাবার বিক্রির গাড়ি দেয়া হয়েছে। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাবার খেয়ে নগরবাসী পেটের পীড়াসহ নানাবিধ রোগাক্রান্তের হাত থেকে রেহাই পাবে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা আমাদের এই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিচ্ছে না। তারা এদের উঠিয়ে দিয়ে অস্বাস্থ্যকর যেসব দোকান আছে সেগুলোকে বসিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মেয়র মোহদয় চরম ক্ষুব্ধ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে।’ সিটি কর্পোরেশনের দেয়া এসব গাড়ির প্রতিটিতেই দাতাসংস্থার ব্যয় হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। কমদামে নগরীর ফুটপাত থেকে সুন্দর ও মানসম্মত এসব গাড়ির খাবার খেতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নগরবাসী। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি স্থানেই চোখে পড়ছে সিটি কর্পোরেশনের এ ভাসমান খাবার গাড়িগুলো।
×