ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে রবীন্দ্র সঙ্গীত সন্ধ্যা, মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ মে ২০১৬

ছায়ানটে রবীন্দ্র  সঙ্গীত সন্ধ্যা,  মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিভৃতচারী শিল্পী বটে। চমৎকার কণ্ঠ। রবীন্দ্রনাথকে বুকে ধারণ করেন। এ কারণেই হয়ত তার গাওয়া গান স্বতন্ত্র অনুভূতির জন্ম দেয়। মনকে জাগায়। শিল্পী মকবুল হোসেন মুকুলের এখানেই বিশেষত্ব। শনিবার শিল্পীকে আরও নিবিড়ভাবে জানা হলো। গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন তিনি। এদিন তার নতুন এ্যালবাম ‘মিলন মেলা’র আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিও রবীন্দ্রপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। সঙ্গীতাঙ্গনের তারকা শিল্পীদের উপস্থিতিতে এ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তপন মাহমুদ ও সাদী মহম্মদ। শিল্পীকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুুফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ্যালবামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আরিফুর রহমান। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা কণ্ঠশিল্পী মকবুল হোসেনের নানমুখী প্রতিভার কথা তুলে ধরেন। নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, আমি অনেকের গান শুনি। সময়ে-অসময়ে গান শুনি। তবে মন খারাপ হলে মুকুলের কাছেই যাই, তার গান শুনে আমার মন ভাল হয়ে যায়। সত্যিকার অর্থে গানে তার প্রতিভা আমাকে মুগ্ধ করে। নাসির উদ্দীন ইউসুুফ বলেন, মুকুল চমৎকার গান করেন। রবীন্দ্রনাথের গান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তার এই এ্যালবাম ভূমিকা রাখবে। রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী তপন মাহমুদ বলেন, আমরা যারা ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে গান করছি তাদের সবার গলাই পড়তির দিকে। অন্যদিকে মুকুলের গলা উঠতির দিকে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শিল্পী স্বকণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তার গাওয়া ‘আমার একটি কথা’, ‘অনেক কথা যাওযে বলে’, ‘হার মানা হার’, ‘আরও একটু বসো’ গান মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে শ্রোতাদের। ধর্ষণবিরোধী নাটক ॥ হত্যা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে নাট্য অভিযাত্রায় নির্মিত হয়েছে পথনাটক শিকারী। পথনাটক পরিষদের প্রযোজনাটি শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় পরিবেশিত হয়। মান্নান হীরা রচিত ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্দেশিত প্রযোজনাটিতে অভিনয় করেছেন ঢাকার নাট্যচর্চায় নিবেদিত বিভিন্ন দলের নাট্যকর্মীরা। তপ্ত দুপুর শেষে বৈশাখী বিকেলে বকুলতলার সামনের ধুলিধূসর উঠোনটি হয়ে ওঠে নাট্যমঞ্চ। পেছনে দৃশ্যমান নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু, কল্পনা চাকমা ও পূর্ণিমা রাণী শীলের ছবি যেন কথা বলে। সাজানো প্রতিকৃতিগুলোর ভেতর থেকে উচ্চারিত হয় ধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণের বিচারের দাবি। নির্মম-নিষ্ঠুরতার শিকার তিন নারীর পাশে মাদার তেরেসার ছবিতে বিপন্ন মানবতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয় মানবতারই জয়গান। এরই মাঝে বেজে ওঠে বাঁশির সুর ও ড্রামের বাজনা। বাদ্যযন্ত্রের সামনে এবং ডানে-বাঁয়ে আসন করে নেন কুশীলবরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই নারী শিল্পীরা নাচের তালে তালে গেয়ে ওঠে ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ...। নাচের মাঝেই আবির্ভূত হয় মানুষরূপী হায়েনার দল। পুরুষ শিল্পীরা ধারণ করেন নারী ধর্ষণকারী খেলোয়াড়ের পরিচয়। ধর্ষণের অভিপ্রায়ে তারা খুঁজতে থাকে শিকার। ৬ থেকে ৬০ বছরের শিশু-কিশোরী, তরুণী, যুবতী, পরিণত নারী কিংবা বৃদ্ধা; যে কেউ হতে পারে ধর্ষকদের শিকার। নৃত্যরত নারী অথবা হিজাবে আবৃত তরুণী কেউই রেহাই পায় না শিকারীদের কবল থেকে। অবিরাম চলতে থাকে ধর্ষণ নামের খেলা। এই খেলাতেও আছেন রাষ্ট্রের রূপক হিসেবে এক রেফারি। তবে বাঁশিতে ফুঁ দেয়া ছাড়া তার কোন ক্ষমতা নেই। তাই রেফারির সামনেই ঘটতে থাকে একের পর এক বীভৎস ঘটনা। শিকারীরা বলে যায়, যেসব মেয়ে নাচ-গান করে, ছলাকলা করে অভিনয় করে কিংবা মাথা উঁচু করে চলে তাদের শিকার করা জায়েজ। এমন সংলাপে দর্শক হৃদয়ে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি পর্দানশীন বা হিজাবী নারী শিকারের উর্র্ধে? উত্তরে এক শিকারী জবাব দেয়, তার পছন্দ পর্দানশীন নারী। এর পর ওই শিকারীর সামনে আসে পর্দানশীন এক নারী। টান দিয়ে সে খুলতে চায় তার হিজাব। আকুতি করে মেয়েটি বলে, হিজাব খুলো নাÑএটা পরা আমার পিতা-মাতার নির্দেশ। একপক্ষ যখন আত্মসম্ভ্রম রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টারত, অপরপক্ষ তখন শিকারের নেশায় মত্ত। এমন সময় আবহে ভেসে আসে সংলাপÑ কন্যা তোমার পর্দা খোলো, কন্যা তোমার হিজাব খোলো, দেখি তোমার বদনখানি...। অতঃপর শিকারীর শিকার হয় পর্দানশীন নারীও। এমন সময় ফের রেফারির আগমন ঘটে। ধর্ষককে জানায়, এবারের শিকার হয়েছে তারই বড় বোন। তথ্যটি জেনে চমকে ওঠে শিকারী। পাপের অনুশোচনায় আর্তচিৎকার করে বিধাতার কাছে মৃত্যুর আরজি জানায়। আত্মদহনে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, আমারে কেউ কবর দ্যান। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কবর...। যেখানে আমি রাখতে পারি আমার পাপ। শেষ দৃশ্যে রেফারি বলে যায়, ধর্ম কিংবা শিক্ষা কোনটিই নারীকে বাঁচতে দেয় না শিকারীর হাত থেকে। কারণ, আমি ব্যর্থ রেফারি। আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। আমার মতো ব্যর্থ রেফারি না হয়ে, প্রতিবাদ করে রক্ষা করুন মা-বোনকে। পথনাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঙ্গীতা, লিটা, জুঁই, ঋতু, প্রিয়ন্তী, শোভন, ফুয়াদ, মাসুদ, শরীফ, সৌদ, কামাল, সম্রাট, আসাদ ও ফয়সাল। পথনাটকটি উদ্বোধনী মঞ্চায়ন শেষে অতিথির বক্তব্য রাখেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক আবদুস সালাম, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। এছাড়াও প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে কথা বলেন নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও নাট্যকার মান্নান হীরা। সঞ্চালনা করেন পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। জাদুঘরে সুস্মিতা পাত্রের রবীন্দ্র সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার হলো পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী সুস্মিতা পাত্রের রবীন্দ্র সঙ্গীতসন্ধ্যা। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জাতীয় জাদুঘর ও রবীন্দ্র একাডেমি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। সভাপতিত্বে করেন জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও রবীন্দ্র একাডেমির সভাপতি এম আজিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী। শিল্পী পরিচিতি তুলে ধরেন মাহিন আহমেদ। ‘নতুন চলচ্চিত্র নতুন নির্মাতা চলচ্চিত্র উৎসব’ ॥ ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত দেশের চলচ্চিত্রের বছরব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক উৎসব ‘নতুন চলচ্চিত্র নতুন নির্মাতা চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৫-১৬’। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উৎসবের তিনটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র বিভাগে জহির রায়হান শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র পুরস্কার, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র বিভাগে আলমগীর কবির শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে বাদল রহমানকে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সমাপনী আয়োজনের পুরস্কার বিতরণ ও সম¥াননা প্রদান শেষে উৎসবে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত তিনটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্রকার ও উৎসবের জ্যেষ্ঠ জুরি সদস্য সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, আলোকচিত্র শিল্পী ও চলচ্চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন এবং চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক আলোচনা করেন উৎসব পরিচালক ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উৎসবটি ২০১৫ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল। ১২ মাসের এই প্রদর্শনীতে গত এক বছরে ২২০ চলচ্চিত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে জুরি কমিটির বিবেচনায় নির্বাচিত ১৩৯ চলচ্চিত্র প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার প্রদর্শিত হয়েছে। বছরব্যাপী এ উৎসবে বাংলাদেশের ১৯৫ চলচ্চিত্রকার অংশগ্রহণ করেছেন।
×