ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বর্ষা শুরুর আগেই পাহাড় খেকুদের নতুন কৌশল

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

কক্সবাজারে বর্ষা শুরুর আগেই পাহাড় খেকুদের নতুন কৌশল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নতুন কৌশল নিয়ে পাহাড় খেকুরা অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে শহর ও শহরতলীসহ জেলার চকরিয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উপরিভাগে মাটি কেটে দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পানি পড়লে যাতে মাটি নরম হয়ে পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের লিংকরোডের বিসিক শিল্প নগরীর দক্ষিণ মুহুরিপাড়া, রামুর চেইন্দা, কলাতলী ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় বড় বড় পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে ইতোমধ্যে। বন বিভাগ, পরিবেশ কর্মকর্তা ও পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে পাহাড় কেটে ডাম্পার ভর্তি মাটি বিক্রি করলেও এ বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের পরামর্শে অবৈধ মাটি বিক্রেতারা গাড়িভর্তি মাটির উপর ঢাকনা স্বরূপ একটি কাল কাপড় টেনে দিয়ে প্রতিদিন মাটি সরবরাহ করছে। এভাবে কলাতলী, স্বরণ সমিতি, ঘোনারপাড়া, দরিয়ানগর, ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি চাইন্দা পূর্ব ছরারকুল এলাকার একাধিক পাহাড়,কেটে সমতল করে ফেলেছে ভূমিদস্যুরা। সমতল হওয়া বনবিভাগের জায়গাগুলো তারা প্লট আকারে বিক্রি করছে মোটা অং্কের টাকায়। লিংকরোড, মিঠাছড়ি ও কলাতলীর স্থানীয় আ’লীগের তিন নেতার ইন্ধনে বিসিক শিল্প নগরীর দক্ষিণ মুহুরিপাড়া, চেইন্দা ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি, লাইট হাউস এলাকা ও আশেপাশের একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে ভূমিদস্যুরা। পাহাড় কেটে দিনভর ডাম্পার দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। পথিমধ্যে প্রশাসনের লোকজন ওসব গাড়ি থামানোর পরক্ষণে মুঠোফোনে গাড়ি ছেড়ে দিতে ধান্ধাবাজ নেতাদের সুপারিশ আসে। কোথাও গাড়ি প্রতি বা সাপ্তাহিক চূক্তি আবার কোন কোন সময় নেতাদের দাপটসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা মাটি যাচ্ছে নির্ধারিত জায়গায়। পরিবেশবাদীরা জানান, পাহাড় কাটার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে পাহাড়ের পাদদেশের বসতি গুলো। ঘুষ নিয়ে পাহাড় খেকুদের মদদ দেয়ার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন কক্সবাজার সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছে তারা। এদিকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আরা হক এমপির মাধ্যমে শনিবার স্মারকলিপি প্রদান করেছে কক্সবাজার সোসাইটি নেতৃবৃন্দ। ওসময় কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন, কলিম উল্লাহ, জুয়েল চৌধুরী, সাংবাদিক মো: আমান উল্লাহ, আনোয়ার হাসান চৌধুরী, এ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ, নুরুল আবছার ও সোহরাব হোসাইন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ কক্সবাজারের পরিবেশ ধ্বংসের মূলহোতা দুর্নীতিবাজ সরদার শরিফুল ইসলামের অপসারণ দাবি করে ওসময় তার নানা কুকর্ম তুলে ধরেন। পরিবেশ কর্মকর্তা সরদার শরিফুল ইসলামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা জুড়ে অবৈধ ভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন, বাঁকখালি নদী দখল-দূষণ ও ভরাট, ভুমিদস্যুদের সঙ্গে গোপন আঁতাত এবং মাটি কেটে পরিবেশ ধ্বংসে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মিঠাছড়িতে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ডাম্পার জব্দ করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয় দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি গুলো বিক্রি করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
×