ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পড়েই থাকে-

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

পড়েই থাকে-

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে ১৩ মাস লেগেছে। তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সঞ্জিত সরকার। মামলার চার্জশীট দিতে কেন দেরি হচ্ছে জানতে চেয়ে তাকে শো’কজ করা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেরিতে পাওয়া বিচারে দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ফরেনসিক বিভাগে পড়ে থাকে মাসের পর মাস। এই সুযোগে আলামত নষ্ট করে পার পেয়ে যায় অপরাধী। বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে নিভৃতে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের গাফিলতি, তদন্ত কর্মকর্তার অজ্ঞতা বা প্রভাবিত হওয়া এবং মর্গের সুযোগ সুবিধার অভাবই বিলম্বের কারণ দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগে খুনের মামলা থেকে শুরু করে নানা দুর্ঘটনায় তিন শতাধিক মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পড়ে আছে। আদালতের নির্দেশও আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। রিপোর্ট না পেয়ে স্বজনরা বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনে পার করছেন বছরের পর বছর। চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকার খুন, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৮ শতাধিক লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। গত বছর ছিল ২ হাজার ৩৯৪। এদের মধ্যে ৬শতাধিক বেওয়ারিশ লাশ। এস আই সঞ্জিত সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলে আমার পক্ষে আদালতে চার্জশীট দেয়া তো সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট শেরে বাংলা নগর থানার আনন্দ সিনেমার হলের পাশে মোগল হোটেলের গলি থেকে অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ওই দিনই ওই লাশের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কাজী এমডি আবু সামাহ। প্রায় ১৩ মাস পর গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর ওই মহিলার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। এমন শতাধিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট রয়েছে তার কাছে। তাকে মানিকগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে বদলি করা হয়। আদালত থেকে বার বার নির্দেশ দিলেও রিপোর্টগুলো জমা দেয়া হচ্ছে না। রিপোর্ট পাওয়ার জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগে বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় অনেক পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি খোঁয়ানোর আতঙ্কে রয়েছেন। বাঁশের মাচায় নথিপত্র ॥ সরেজমিন তদন্ত করে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ পুরনো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণ করা হচ্ছে বাঁশের তৈরি মাচা ও রান্নাঘরের সেলফে। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রতিদিন একাধিক হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও বয়স নির্ধারণের সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সুচারুভাবে সংরক্ষণের জন্য এ বিভাগে পৃথক কক্ষ, আলমারি কিংবা সেলফ নেই। এজন্য পুরনো নথিপত্র যেখানে-সেখানে অযতেœ অবহেলায় ফেলে রাখতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য বিভাগীয় প্রধান বার বার আবেদন জানিয়েও কোন ব্যবস্থা করতে পারেননি। দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের যে কক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় সেই কক্ষের দরজার বাইরে বাঁশের মাচা তৈরি করে ফাইল রাখা হয়েছে। ধুলো ময়লায় ফাইলগুলো ঢেকে গেছে। ঠিক তার পাশেই মিনি কিচেন রুম। ওখানে ফাইল রাখা হয়েছে মেঝেতে। ভাঙা একটি আলমারিতেও রয়েছে কিছু পুরনো ফাইল। এসব ফাইলেই রয়েছে অপরাধীকে শনাক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এমন অবহেলায় এসব তথ্য হয়ত গায়েব হয়ে যাবে। পার পেয়ে যাবে অপরাধী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরেনসিক মেডিসিনের একাধিক শিক্ষক জানান, উন্নত বিশ্বে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে গুরত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ হয়। ফলে কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করেই বহু বছরের প্রতিবেদনও সেকেন্ডেই পাওয়া যায়। ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নথিপত্র সংরক্ষণের ন্যূনতম সুব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন মামলা ও পারিবারিক সহায় সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দালিলিক প্রমাণ হিসেবে অনেক সময় পুরনো নথিপত্রের প্রয়োজন হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকায় আবেদন করে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল সকালে কলেজ প্রিন্সিপ্যাল ১৯৮৫ সালের একটি প্রতিবেদন খুঁজে বের করে দেয়ার রিকুইজিশন পাঠিয়েছেন। সকাল থেকে সারা দিন খুঁজেও ফাইলটি পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের সুব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও বাস্তবতা হলো স্থানাভাবে ফাইলপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সুরতহাল রিপোর্টে দুর্বলতা ॥ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আরও একটি দুর্বল দিক পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট। এই রিপোর্ট হচ্ছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তি। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী কোন অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে অপরাধীকে শনাক্ত করতে হয়? অনেক ক্ষেত্রেই আসল অপরাধীকে শনাক্ত করতে না পারায় বিচার কাজ একটা স্থানে এসে থেমে যায়? অপরাধ করার সময় ভিক্টিমের দেহের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন ভালভাবে পরীক্ষা করে সুরতহাল প্রতিবেদনে লিখে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ভিক্টিমের জামা-কাপড়, হাত বা নখের নিচে অপরাধীর রক্ত লেগে থাকতে পারে? সেগুলোর ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে সহজেই শনাক্ত করা যায়? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানান, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার অজ্ঞতা, দায়িত্বে অবহেলা অথবা প্রভাবিত হওয়ার কারণে যথাযথ সুরতহাল রিপোর্ট পাওয়া যায় না। এতে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বোর্ডকে আদালত পর্যন্ত জবাবদিহি করতে হয়। তাই সুরতহাল রিপোর্টে অসংলগ্নতা থাকলে তারা ময়নাতদন্ত করতে চান না। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ফিঙ্গার প্রিন্টারের নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণের সুপারিশ করেছেন তারা। সূত্র জানায়, আঘাতজনিত লাশের ক্ষেত্রে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে গরমিল দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট করতে গিয়ে এই গরমিল ধরা পড়ে। মৃতদেহের ছিদ্রের (গুলির চিহ্ন) জায়গায় লেখেন ফাঁটা অথবা ফাটা। এছাড়া ঝুলন্ত লাশের ক্ষেত্রে পুলিশের অদক্ষতা আরও বেশি। ঝুলন্ত লাশের ক্ষেত্রে পুলিশের গ্লাভস ব্যবহার, মৃতদেহ উদ্ধারের স্থানে দরজা বন্ধ কি না, দরজা ভাঙতে হলে আশপাশের লোকজনের সাক্ষ্য নেয়া, দরজার লক থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া, ঝুলন্ত লাশের ছবি, ঘরের ভেতরে কোন আলমত থাকলে তা জব্দ করা, ঝুলন্ত রশিসহ মরদেহটি ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পাঠানো উচিত। এমনকি অনেককে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে অচেতন করে তার অচেতন দেহে রশিতে ঝুলিয়ে রাখতে পারে। এই কারণে মৃতদেহের ঝুলন্ত রশিতে কোন আলামত (চিহ্ন) থাকতে পারে। তাকে কি হত্যা করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, নাকি সে আত্মহত্যা করেছে। এমন বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে এসব আলামত সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় না। অনেক মরদেহের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন থাকে। অনেক সময় পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা ভেবে কোন লাশ তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়। এটিও পুলিশের একটি অদক্ষতা। পুলিশ মৃতদেহ ভালমতো দেখেনও না। অনেক সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে খুনের ঘটনা হতে পারে। এরকম বহু মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আনার পর তার পরিবারের অনিচ্ছার কারণে ময়নাতদন্ত না করেই তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এসব লাশ বেশিরভাগ রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোর। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, লাশের ঘটনাস্থলে পুলিশকে দ্রুত সেখানে পৌঁছতে হবে। এই ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে চারপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে। কোন সাধারণ মানুষকে মৃতদেহের আশপাশের ঢুকতে দেয়া যাবে না। পুলিশকে এজন্য গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। সেখানে ফিঙ্গার প্রিন্টসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিভাগে পাঠাতে হবে। তারপরও পুলিশ দেরিতে মরদেহ নিয়ে ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে আসেন। দুই থানা পুলিশের টানাটানিতে অনেক সময় দেরিতে লাশ মর্গে আনা হয়। এজন্য তারা পুলিশের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেন। এতে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। ময়নাতদন্তে যা লেখা হয় ॥ আমাদের দেশে কোন লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ লেখার পাশাপাশি ধরনও লেখেন। বিশ্বের অনেক দেশেই চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ লেখেন। মৃত্যুর ধরন বের করার দায়িত্ব থাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থার অভাবের কারণেই চিকিৎসকরা ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ ও ধরন দুটোই লেখেন। তবে ময়নাতদন্তে চিকিৎসকদের মৃত্যুর কারণ লেখাই মূল কাজ। মৃত্যুর পর বাহ্যিকভাবে লাশের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে ভিসেরা রিপোর্টে সেই তথ্য উঠে আসে। পুলিশের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে লাশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিভিন্ন দিকের বর্ণনা থাকতে হয়। শরীরের কোন অঙ্গটি কীভাবে পাওয়া গেছে, কোন আঘাত বা দাগের চিহ্ন আছে কি না প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এতে মৃতদেহের বিবরণ ছাড়া আর কিছুই লেখার নিয়ম নেই। তারা জানান, এসব প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে যেমন মূল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তেমনি এ ধরনের প্রতিবেদন অনেক সময় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরীক্ষা ও জবাবদিহিতা ॥ অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক মৃত্যু এবং বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে মেডিক্যাল কলেজ মর্গে প্রতিবেদন রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এ সময় মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে হয় দেশের একমাত্র পরীক্ষাগার মহাখালীতে। এরপর চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিসেরা সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও তা আধুনিক ও দীর্ঘমেয়াদী সময়ের বিবেচনায় উপযোগী নয়। আর স্থানীয় পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও বিকল্প সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই। ফলে রাসায়নিক পরীক্ষাগার মহাখালীর বিশেষজ্ঞদের হাতেই থাকে সব ক্ষমতা। সারাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞদের অনেকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। আর মহাখালী পরীক্ষাগারে পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কিত ঘটনাতো ‘ওপেন সিক্রেট’। এর কারণ জবাবদিহিতা না থাকা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়িত্ব পাওয়া। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব যেন নির্ধারিত বিষয়। আর এ কারণেই অসাধু বিশেষজ্ঞদের জবাবদিহিতা নেই বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। স্পর্শকাতর ঘটনায় অপরাধী শনাক্ত করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ ল্যাব থাকলেও রাসায়নিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। রাসায়নিক ল্যাব থাকলে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া যেত। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ সহকারী সেকান্দার জনকণ্ঠকে জানান, অন্যান্য উন্নত দেশের মত মর্গ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের অধীনে মর্গে আধুনিক তিনটি অটোপসি টেবিল, লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লাশ রাখার পাঁচটি ফ্রিজ আনা হয়েছে। যাতে প্রতিটি ফ্রিজে বিশটি করে লাশ রাখা যায়। জেলা পর্যায়ের কোন হাসপাতালেই ময়নাতদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। নিয়মিত কাজের বাইরে অন্যান্য চিকিৎসক অনেকটা দায়সারাভাবেই লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেন। জেলার সব হাসপাতালে একজন করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। হাসপাতাল থেকে অনেক দূরে গিয়ে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ময়নাতদন্ত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মর্গ সহকারীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ময়নাতদন্ত করে থাকেন। বেশিরভাগ চিকিৎসক লাশ ধরেও দেখেন না। পচা-গলা লাশ হলে ফোনের মাধ্যমে ডোমকে নির্দেশ দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করেন।
×