সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ গল্প নকল করে চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মুরাদ পারভেজ পরিচালিত ‘বৃহন্নলা’র ২০১৪ সালের তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাতিল করেছে সরকার। সরকারী অনুদানে নির্মিত ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত কোনটিই আর জুটছে না চলচ্চিত্রটির ভাগ্যে। শুধু তাই নয় সৃষ্টিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় মুরাদ পারভেজের কাছ থেকে ‘বৃহন্নলা’ নির্মাণের জন্য সরকারী অনুদানের ২৪ লাখ টাকা সুদে-আসলে জরিমানা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে নির্মাতা আবেদন করলে হয়ত জরিমানার অর্থে কিছুটা ছাড় দেয়া হতে পারে। অন্যদিকে ‘বৃহন্নলা’র পুরস্কার বাতিল হওয়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাসুদ পথিকের ‘নেক্কাবরের মহাপ্রয়াণ’ হতে যাচ্ছে ২০১৪ সালের সেরা চলচ্চিত্র। আর সেরা কাহিনীকার হচ্ছেন ‘মেঘমল্লার’ চলচ্চিত্রের জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও একই চলচ্চিত্রের জন্য জাহিদুর রহিম অঞ্জন পাচ্ছেন সেরা সংলাপ রচয়িতা পুরস্কার। আর বাকি সব ঘোষিত পুরস্কার ঠিকই থাকছে। জানা গেছে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর অন্যের গল্প অনুকরণ করে বৃহন্নলা চলচ্চিত্রটি নির্মাণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ কে এম নেছার উদ্দিন ভূইয়াকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করে তথ্য মন্ত্রণালয়।
এই তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ‘বৃহন্নলা’র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনটি বাতিল করল। ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রের কাহিনীর স্বত্ব হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের নাম ব্যবহার এবং তার পরিবারকে দেড় লাখ রুপী দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে চিঠিও দেন পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও দেবেশ রায়। এছাড়া সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ একাডেমির সচিব সৈয়দ হাসমত জালালও একই বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে আলাদা চিঠি দিয়েছিলেন। চুরির অভিযোগ ওঠায় এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিক রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে জুরি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে কয়েক দফা সভা হয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে জুরি বোর্ডের এক সভায় ফেরদৌস ও সোহানা সাবা অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্রটির তিনটি পুরস্কারই বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে পরিচালক মুরাদ পারভেজের বিরুদ্ধে
চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জুরি বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কেবল মৌলিক গল্পের চলচ্চিত্রকেই দেয়া হয়। মুরাদ পারভেজ অন্যের গল্প নিজের বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন। সচেতন দর্শকদের তৎপরতায় পুরস্কার প্রদানের আগেই তিনি ধরা পড়েছেন। তাই তার চলচ্চিত্রের তিনটি পুরস্কারই বাতিল করা হয়েছে। এর আগে গত বছর ভারতের জয়পুর চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রটি পুরস্কৃত হওয়ার পর এর নির্মাতার বিরুদ্ধে ভারতীয় সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোট গল্প ‘গাছটি বলেছিল’ অনুকরণের অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোট ছেলে সাংবাদিক অমিতাভ সিরাজ দাবি করেছেন তার বাবার গল্প অনুকরণ করে ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
