ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্বাভাবিক গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ এপ্রিল ২০১৬

অস্বাভাবিক গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

শাহীন রহমান ॥ গত ২৮ মার্চ থেকে আজ ১২ এপ্রিল সময়ের ব্যবধান মাত্র ১৫ দিনের। ২৮ মার্চ সারদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মাত্র ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে সেখানে তাপমাত্র এসে দাঁড়িয়েছে ৪০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। অর্থাৎ ১৫ দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ৮ ডিগ্রীর বেশি। শুধু কি তাই? এ কয়দিনে আবহাওয়া বিচিত্র রূপ পাল্টে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরুতে যেখানে সারাদেশে আবহাওয়ায় ছিল শীতের আমেজ। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রকৃতি তার উল্টো রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তের কারণে আবহাওয়ার এই বিচিত্র রূপ। কয়েকদিনের ব্যবধানে এখন চলছে প্রকৃতির দাবদাহ। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ওপর বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের প্রভাবেই বাড়ছে উত্তাপ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কয়েদিন চলতে পারে। এ সময় গরম বৃদ্ধির পাশাপাশি সারাদেশের ওপর তাপপ্রবাহের বিস্তার ঘটবে ব্যাপকভাবে। এদিকে সোমবার দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আগের দিন রবিবার যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস সেখানে তাপমাত্রা সোমবার আরও বেড়ে ৪০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। এছাড়া সারাদেশে আর তিনটি এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী অতিক্রম করেছের। এর মধ্যে ঈশ্বরদীতে সোমবার তাপমাত্র ছিল ৪০ ডিগ্রী, যশোরে ৪০.২ ডিগ্রী। এর বাইরে রাজধনীর তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে। সোমবার ৩৬.৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে চলে গেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণ ৩৭ ডিগ্রী তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বাইরে তাপমাত্র উঠে গেলে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে গণ্য হয়। আবহাওয়া অফিসের খবরে বলা হয়েছে, দেশের কুষ্টিয়া, যাশোর, পাবনা, অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা অঞ্চলের পাশাপাশি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছে। এদিকে অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারাদেশে জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক গরমে প্রকৃতিতে হাঁসফাঁস অবস্থা চলছে। চারদিকে বিরাজ করছে এক অস্বাভাবিক পরিবেশ। প্রচ- গরমে জনসাধারণে দুর্ভোগের যেন কোন অন্ত নেই। রেহাই পচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধরাও। ঘরে বসে থেকেও যেন তাদের কোন নিস্তার নেই গরমের হাত থেকে। রাজধানীসহ গ্রাম বাংলায় এর প্রভাব বিরাজ করছে। বিশেষ প্রয়োজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরের বের হচ্ছে না। একটু গরমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। বাইরে বের হওয়া লোকগুলো খুঁজে নিচ্ছে ছায়া নিবিড় শান্ত পরিবেশ। প্রকৃতিতে এখনও আসেনি বৈশাখ। অতীতে আবহাওয়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে চৈত্রে শেষ সময়ে এ ধরনের তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। এমনকি আবহাওয়া অফিস থেকে এবারের তীব্র তাপপ্রবাহের আভাস থাকলেও তা এত তাড়াতাড়ি শুরু হবে তাও অনুমান করতে পারেনি। তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসের শেষে দিকে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যাবে। আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আগামী এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনি তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে বজ্রসহ মাঝারি ও কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মে মাসে প্রয়োজনের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত ও গরমের অনুভূতি বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এই পূর্বানুমান ভুল প্রমাণ করে এপ্রিলের প্রথম দশকেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে উঠে গেছে। সোমবার সারাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা গত রবিবারে একই এলাকায় ছিল ৪০.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার পাশাপাশি রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়ে চলছে। সোমবার রাজধানীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬. ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া ময়মনসিংহে ৩৫.৩, টাঙ্গাইলে ৩৮.৮, ফরিদপুরে ৩৯.৬, মাদারীপুরে ৩৬.২, গোপালগঞ্জে ৩৬.৮, চট্টগ্রামে ৩৩.২, সন্দ্বীপে ৩২.২, সীতাকু-ে ৩৩, রাঙ্গামাটিতে ৩৫.২, কুমিল্লায় ৩৩, চাঁদপুরে ৩৫.২, মাইজদীকোর্টে ৩৪.৫, ফেনীতে ৩৩.৫, হাতিয়ায় ৩২.৭, কক্সবাজারে ৩৩, কুতুবদিয়ায় ৩৩.২, টেকনাফে ৩৪, সিলেটে ৩৪.৪, শ্রীমঙ্গলে ৩৪.৭, রাজশাহীতে ৩৯.৭, ঈশ্বরদীতে ৪০, বগুড়ায় ৩৮.৪, বদলগাজীতে ৩৭, তাড়াশে ৩৮.৪, রংপুরে ৩৮, দিনাজপুরে ৩৬.৮, সৈয়দপুরে ৩৬.৮, ডিমলায় ৩৪.৬, রাজারহাটে ৩৪.৫, খুলনায় ৩৭.৮, মংলায় ৩৮.২, সাতক্ষীরায় ৩৯, যশোরে ৪০.২, চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬, কুমারখালীতে ৩৯.৫, বরিশালে ৩৫.৯, পটুয়াখালীতে ৩৫.৬, খেপুপাড়ায় ৩৫ এবং ভোলায় ৩৪.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি এমনকি বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ও হতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে প্রায় ১৬ দিন সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে। সেখানে ৩০০ থেকে ৩৭০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আট থেকে ১০ দিনে ১৪০ থেকে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে এক-দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। গত ১৫ দিনে আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকেই সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতিকে শীতের আমেজ বিরাজ করেছে। এ কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ চৈত্র মাসে লেপ মুড়ি দিয়ে রাত পার করেছে। বৃষ্টির কারণে শীতের পাশাপাশি প্রকৃতিতে বর্ষার আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। অথচ মাত্র কয়েকদিনে ব্যবধানে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর এই সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে তা চরভাবাপন্ন হয় না। সাধারণ বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে তাপপ্রবাহ বেড়ে যেতে থাকে। জ্যৈষ্ঠে তা তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু এবার এই বিরূপ আবহাওয়া আগের প্রকৃতি এসে জনজীবন উল্টেপাল্টে দিয়েছে।
×