ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানা ও আবুল কাশেমকে;###;ওএসডি ব্যাংকিং সচিব এম আসলাম ;###;নতুন গবর্নর নিয়োগ

আতিউরের পদত্যাগ ॥ রিজার্ভ হ্যাকিং বিষয়ের সব কাজের নৈতিক দায় কাঁধে নিলেন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ মার্চ ২০১৬

আতিউরের পদত্যাগ ॥ রিজার্ভ হ্যাকিং বিষয়ের সব কাজের নৈতিক দায় কাঁধে নিলেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে ৮শ’ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। অবশ্য এই পদত্যাগ অনেকটা স্বেচ্ছায় এবং নৈতিক দায় থেকেই দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ড. আতিউর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনাটিকে ‘জঙ্গী হামলা’ এবং ‘ভূমিকম্পের’ মতো উল্লেখ করে এটি যথাসময়ে উর্ধতন মহলে না জানানোর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করে আতিউর রহমান ‘সৎ সাহসের’ পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গবর্নরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তিনি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গবর্নর ও ব্যাংকিং সচিবকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন গবর্নরও। অন্যদিকে আলোচিত এই ঘটনায় মতিঝিল থাকায় মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে সরকার। সেই সঙ্গে কমিটির কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ডলার লোপাটের বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে ড. আতিউর রহমান মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের আতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন। আমি অপেক্ষা করছি, প্রধানমন্ত্রী কী বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাল হয়, দেশের ভাল হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নেই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের চার মাস পেরিয়ে ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গবর্নর হিসেবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন আতিউর রহমান। এরপর তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আতিউর রহমানের মেয়াদকালে দেশে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েকগুণ বেড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করে আতিউর রহমান ‘সৎ সাহসের’ পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গবর্নরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে গবর্নরের পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গবর্নর আতিউর রহমান সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাত করে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আতিউর রহমানের এই পদত্যাগ একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা নৈতিক মনোবল ও সৎ সাহসের বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ড. আতিউর রহমানের সংবাদ সম্মেলন ॥ মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগ করে বিকেলে রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে ড. আতিউর রহমান বলেন, নৈতিক দায় থেকেই আমি পদত্যাগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার হাতে আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি। রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনা দেরিতে জানানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিকম্প যেমন বারে বারে আসে, যে কোন মুহূর্তে আসতে পারে, এটার দেয়াল দেয়ার চেষ্টা আমি করেছি। যখন পরিস্থিতি খানিকটা আমার নিয়ন্ত্রণে এসেছে তখন আমি এনএসআইকে যুক্ত করেছি, র‌্যাবকে যুক্ত করেছি, ফায়ারআইকে তো আগেই যুক্ত করেছি। তিনি বলেন, যখন এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটল ঠিক তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনাটি ঘটল। এক সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে আরেক সেন্ট্রাল ব্যাংকের এমওইউ আছে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। যখন আমরা বুঝতে পেরেছি টাকাগুলো আনা সম্ভব হবে, তখন আমি সরকারকে জানিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে লিখিত দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তার আগে আমার সাবধানতা আনতে হলো যেন যে ক’টা টাকা আছে সেগুলো যেন নিরাপদ থাকে। একটু সময় লেগেছে আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু এই সময়টা আমি নিয়েছি দেশের স্বার্থে। এই অর্থগুলো যেন নিশ্চিতভাবে দেশে ফেরত আনা যায় তার স্বার্থে এবং বড় রকম আর কোন সঙ্কট আছে কিনা তা দূর করার স্বার্থে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। এটা একটা সাইবার অ্যাটাক। কোথা থেকে এটা এসেছে তা আজও আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি র‌্যাবকে বলেছি, ভেতরে কেউ যদি এতে জড়িত থাকে, যে কোন সময় তাদের তুলে ধরে নিয়ে যেতে পার। আমার দিক থেকে কোন অসুবিধা থাকবে না। ভবিষ্যতে যাতে করে এ রকম না ঘটে সে জন্য এ লাইনে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যারা তাদের যুক্ত করেছি, ফায়ারওয়াল দিচ্ছি। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলোকেও বলেছি যে, তোমরা ফায়ারওয়াল সৃষ্টি কর। আর একটি প্রশ্ন উঠেছে যে, আমি বিদেশে কেন গিয়েছি এই সময়। আমি বলতে পারি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইএমএফের যৌথ নেতৃত্বে একটি সভা ছিল, ওই সভায় মাননীয় অর্থমন্ত্রীরও যাওয়ার কথা ছিল এবং শেষ মুহূর্তে তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে যেতে পারেননি। আমি যথাযথ অনুমতি নিয়ে, মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে সেখানে গিয়েছি। ওই সভায় আইএমএফের প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের গবর্নররা এসেছিলেন। সেখানে দুটি প্যানেলে আয়োজকরা আমাকে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সেখানে কীভাবে অর্থ উদ্ধার করা যায়, সিকিউর করা যায় এই বিষয়গুলো তাদের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার ফিন্যান্স মিনিস্টার ও গবর্নরকে আমি ধন্যবাদ দিয়েছি টাকাটা ফেরত পাওয়ার জন্য, হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। দেশের বাইরে আমি সারাক্ষণই অনলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি এবং অফিস করেছি। সুতরাং আমি যা কিছু করেছি সব দেশের স্বার্থে। ড. আতিউর রহমান বলেন, আমি যখন যাচ্ছি তখন রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন রিজার্ভ ছিল সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার। আমি পুরোপুরি সফল হয়েছি বলব না, তবে ব্যাংকের নতুন একটি ধারা তৈরি করেছি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকগুলো। সব ব্যাংক আমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সেক্টরের ব্যাংকগুলো যেভাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেত কাজ করেছে তার জন্য আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সমস্যা আছে। আমি সে সব সমস্যা সমাধানেও চেষ্টা করেছি। সবগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে পেরেছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলো যেন আরও বেশি সুযোগ পায় সে ব্যবস্থায় সরকার আরও নজর দেবে বলে আশা করি। বাংলাদেশ ব্যাংকে যে ঘটনাটি ঘটল তা আমাদের বুঝে ওঠার আগেই হয়ে গেছে। এ ধরনের বিষয় থেকে আমাদের তৈরি হওয়ার ব্যাপার আছে। সাইবার এ্যাটাক সারা বিশ্বের সমস্যা, এটি বেশ জটিলও। কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ মিলিয়নের ঝামেলা হয়েছিল। নিজেকে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ নন দাবি করে ড. আতিউর রহমান বলেন, রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনার পর আমি দিল্লীতে গিয়েছিলাম। সেখানে অরুণ জেটলি সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্যে দু’দিন ছুটি ছিল, আমি সব সময় অনলাইনে কাজ করেছি। কিন্তু এটাকে বড় একটি ঘটনার মতো করে ব্যাখার কোন কারণ ছিল না। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও ওপরে নিয়ে যাবেন বলেই আশা। আমি আমার সন্তানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে আগলে রেখেছি। আমি একটি ওপেন বুক। আমি, কোথা থেকে কোথায় এসেছি তা সবার জানা। আপনাদের সহযোগিতা না পেলে আমার মতো গরিবের ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর হতে পারত না। ড. আতিউর রহমান বলেন, এই দেশেটা আমাদের মা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যে কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি সেটা যেন চলে। আমার উত্তরসূরি সেটা যেন এগিয়ে নেন। দেশটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন বলে আশা। আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আবারও দেখা হবে রানিং শিক্ষক হিসেবে। শেষ পর্যন্ত আবার শিক্ষকতায় ফিরছি। ভেবে ভাল লাগছে এখন আমি আরও বাস্তবতা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারব। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি, আমি গত ত্রিশ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি যেহেতু আমাকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন, তার কাছেই পদত্যাগপত্র দিয়েছি। তিনি পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে কেঁদেছেন। বলেছেন, আপনি যেটা করে দেখালেন সেটা কেউ করেনি। এটা একটি দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী আরও যা বলেছেন সেটা আপনারা জানতে পারবেন। অর্থ লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা ॥ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থ লোপাটের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক জানান, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে মানি লন্ডারিং আইনে মামলাটি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৩। তবে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে অর্থ লুটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তভার পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত হাতে পেয়েই সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (অর্গানাইজড ক্রাইম) কাজ শুরু করেছে। সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী রাতে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটির তদন্ত ভার পেয়েছে সিআইডি। মামলাটি যেহেতু বিশেষ মামলা এ জন্য সিআইডির একটি বিশেষ স্কোয়াড মামলাটির তদন্ত করবে। স্কোয়াডের সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা থাকবে অন্তত পাঁচ জন। তবে সার্বিক বিষয়াদি বিচার বিশ্লেষণ করে স্কোয়াডে সদস্য সংখ্যা বাড়ান হতে পারে। বিশেষ স্কোয়াড তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গবর্নরকে অব্যাহতি ও ব্যাংকিং সচিব ওএসডি ॥ রিজার্ভ চুরি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে গবর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানা ও আবুল কাশেমকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। মঙ্গলবার আতিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র দিয়ে আসার পর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক প্রাক বাজেট আলোচনায় গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দুই ডেপুটি গবর্নরকে অব্যাহতি ও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে ওএসডি দেয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গবর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই দুই পদে শীঘ্রই নতুন নিয়োগ দেয়া হবে। এই দু’জন বাদ পড়ায় এখন ডেপুটি গবর্নর পদে আছেন আবু হেনা মোঃ রাজী হাসান ও এস কে সুর চৌধুরী। ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানার চাকরির মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হওয়ার পর তা চলতি বছরের ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। আবুল কাশেমের চাকরির বাড়তি মেয়াদও আগামী আগস্টে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৭ বিষয়ে তদন্ত করবে কমিটি ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা লুটের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে সরকার। সেই সঙ্গে কমিটির কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত সরকারী প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে তদন্ত কিমিটিকে সাতটি বিষয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোকুল চাঁদ দাস এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোঃ কায়কোবাদ। প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটি চাইলে বিশেষজ্ঞদের সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সরকার প্রয়োজনে কমিটিতে অতিরিক্ত সদস্যও নিয়োগ করতে পারবে। কমিটির সভা বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অথবা কমিটির আহ্বায়কের নির্ধারিত স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রজ্ঞাপনে কমিটির কর্মপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন কীভাবে ও কার বরাবর গেল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের পর্যাপ্ততা, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রাখার যৌক্তিকতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা এবং গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা, অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে।
×