ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গারোদের প্রধান ভাষা মান্দি ॥ উপ-ভাষা আচিক

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৫ মার্চ ২০১৬

গারোদের প্রধান ভাষা মান্দি ॥ উপ-ভাষা আচিক

গারোদের প্রধান ভাষা মান্দি। এটি চীনা তিব্বতীয় ভাষা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ী এলাকার আদিবাসীদের প্রধান ভাষা। বাংলাদেশের গারোদের মধ্যেও এই মান্দি ভাষা প্রচলিত আছে। গারো ভাষা লাতিন লিপিতে লেখা হয়। এর বাইরে গোত্রভেদে গারোদের মধ্যে আলাদা উপ-ভাষাও আছে। আচিক হচ্ছে গারোদের এ রকম উপ-ভাষা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের শেরপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে বসবাসরত গারো আদিবাসীদের উপ-ভাষা হচ্ছে আচিক। বাঙালীদের মাতৃভাষা যেমন বাংলা, তেমনি গারোদের মাতৃভাষা আচিক। গারোদের ভাষায় আচিক শব্দের অর্থ পাহাড়। গোত্রভেদে আচিক উপ-ভাষা ছাড়াও আবেং, আতং, নিগাম, দোয়াল বা কচ্চু ভাষাতেও গারোরা মনের ভাব আদান প্রদান করে থাকে। ভারতীয় সীমান্ত-বর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার গারোরা আচিক ভাষার পাশা-পাশি আবেং ভাষাতেও কথা বলতে পারে। আবেং আঞ্চলিক ভাষা আচিকের মতোই। এটি গারোদের কমন ভাষা। বাংলাদেশে বস-বাসরত গারো আদিবাসীদের সবাই কমবেশি আবেং ভাষায় কথা বলতে পারে বলে দাবি করেছে স্থানীয় গারোরা। তবে নতুন প্রজন্মের গারো আদিবাসীদের মধ্যে এখন ব্যাপকভাবে আচিক ভাষার চর্চা চলছে। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার স্কুলগুলোতে বাংলা ও ইংরেজী ভাষার সঙ্গে এখন আচিক পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এই আচিক ভাষার স্বীকৃত কোন লিখিত রূপ বা বর্ণমালা নেই! ফলে গারো আদিবাসীরা মুখে মুখে আচিক ভাষার চর্চা করলেও লেখার ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজী ও রোমান বর্ণমালাকে প্রাধান্য দিতে বাধ্য হয়। এটি গারো আদিবাসীদের শিক্ষা চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে দাবি ফাদার শিমন হাচ্ছার। বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক মাহবুবুল হাসানের মতে, গারোদের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষার নাম ‘আচ্ছিক কাথ্যা’। ‘আচ্ছিক বলতে বোঝায় গারো যারা পাহাড়ে বাস করে, আর কাথ্যা শব্দের অর্থ ভাষা। গারোরা প্রধানত ও মূলত পাহাড়ে বসবাস করে এবং তাই আচ্ছিক কাথ্যার মানে গারোদের ভাষা। এটা গারোদের মৌখিক ভাষা এবং তারা এখনো লিখিত ভাষার উদ্ভব ঘটাতে পারেনি। কোন কোন শিক্ষিত গারো এই আচিক ভাষার লিখিত নমুনা যা দেখতে ছবির মতো, উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। বর্ণমালা তথা লেখ্যরূপের অভাবে গারো সম্প্রদায়ের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। মান্দী সমাজের বদ্ধমূল ধারণা ও বিশ্বাস, আদিতে আচিক ভাষার বর্ণমালা তথা লেখ্যরূপ ছিল। কিন্তু তৎকালীন মহা-দুর্ভিক্ষে সেসব লেখ্য সাহিত্য-ইতিহাস বিলীন হয়ে যায়। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও গবেষক রেভারেন্ড মনীন্দ্রনাথ মারাক লিখেছেন, ‘গারো-দের অলিখিত ভাষার সাহিত্য যেমন- গল্প কাহিনী, লোক-সাহিত্য, কাব্য, বীরত্বগাথা, সঙ্গীত, প্রবাদ প্রবচন, ধাঁধা, ছড়া সবই ছিল। সতী সাবিত্রীর মতো নারী চরিত্র গারো কথা সাহিত্যের নায়িকা সিংউইলে দেখা যায়। মহুয়া-মলুয়ার মতো দুর্জয় নারীর প্রেম দেখা যায় সেরেনজিংয়ে। স্বদেশ প্রীতির প্রকাশ দেখা যায় সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভা-ারে। ইতোমধ্যে সেরেনজিং লুপ্ত হতে বসেছে। সত্তর দশকে জন তুশিং রিছিল, নব্বই দশকে দানিয়েল, মার্টিন রেমা এবং অরুণ রিছিল অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গবেষণা করে আচিক বর্ণমালা উদ্ভাবন করেন। Ñবাবুল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে
×