ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২ মার্চ ২০১৬

সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে  লড়বে

আরাফাত মুন্না ॥ ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে (ঢাকা বার) নিরঙ্কুশ জয়ের পর এবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতেও (সুপ্রীমকোর্ট বার) জয় চায় আওয়ামী লীগ ও সমমনা আইনজীবীদের পাঁচটি সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। এর আগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পায় তারা। বিগত কয়েক বছর নিজেদের অন্তর্কোন্দলে সুপ্রীমকোর্ট বারে সমন্বয় পরিষদের ভরাডুবি হলেও এবার কোন কোন্দল নেই বলেই জানিয়েছেন সমন্বয় পরিষদের অনেক নেতা। সমন্বয় পরিষদ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে ২০১৬-১৭ বর্ষের জন্য সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করেছে বারের নির্বাচন উপকমিটি। আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ দু’দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জয় লাভের জন্য হেবিওয়েট প্রার্থী ঠিক করতে মঙ্গলবার রাতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের জ্যেষ্ঠ নেতারা। বৈঠকের উপস্থিত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, উপস্থিতদের সর্বসম্মতিক্রমে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। তবে সম্পাদক পদে চারজনের নাম শোনা গেলেও প্রাথমিকভাবে আবদুন নূর দুলাল এবং আজাহারুল্লাহ ভূইয়ার নাম ঠিক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইনমন্ত্রী এ দুইজনের মধ্যে এক জনকে সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের গুলশানের চেম্বারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, এ্যাটর্নি জেনারেলে মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহারা খাতুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সুজন, বশির আহমেদ, শ ম রেজাউল করিম এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রমুখ। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা বৈঠকস্থানে উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি বলেই সূত্রটি জানিয়েছে। এর আগে এবার নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি ও সম্পাদক পদে চার জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানা গিয়েছিল। তবে তারা মনোনয়ন না পেলেও সমন্বয় পরিষদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছে। সভাপতি পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন, তারা হলেন- সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এসএম মুনির এবং সুপ্রীমকোর্টের আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শহিদুল করিম সিদ্দিকী। সম্পাদক পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তারা হলেন- আজাহারুল্লাহ ভূইয়া, রবিউল আলম বুদু, আব্দুন নূর দুলাল এবং শেখ মোঃ মোরসেদ। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনজীবী এস এম মুনির জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোপূর্বে কিছু সমস্যার কারণে সুপ্রীমকোর্ট বারে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে এবার সেই পরাজয় নেই বললেই চলে। সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন পেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জানিয়ে এস এম মুনির বলেন, আমি নিজেও সভাপতি পদে নির্বাচন করতে চাই। তবে সমন্বয় পরিষদ যদি আমাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব না। সমন্বয় পরিষদ যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব। তিনি বলেন, প্রথমে বার কাউন্সিল এবং পরে ঢাকা বার, সব জায়গায়ই এবার আমাদের জয় হয়েছে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে এবার সুপ্রীমকোর্ট বারেও জয় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন সরকার সমর্থক এই আইনজীবী নেতা। সমন্বয় পরিষদের সম্ভাব্য সম্পাদক প্রার্থী আইনজীবী রবিউল আলম বুদু জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই এবার নির্বাচন করব। আমি নিজে সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চাই, তবে দলের সিনিয়ররা যদি আমাকে মনোনয়ন না দেয় তাতে আমি কষ্ট পাব না। এবার যে কোনভাবে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতেও আমাদের জয় আনতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে, জয় আসবেই বলে মন্তব্য করেন রবিউল আলম বুদু। এর আগে গত বছর আগস্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ প্যানেল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পায় সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। বার কাউন্সিলের ১৫ পদের মধ্যে ১৪ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সরকার সমর্থকরা পায় ১১টি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা পায় ৩ পদ। রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা পদাধিকার বলে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে থাকে। এরপর গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বারের ২৭ পদের ২১টিতেই জয় পায় সমন্বয় পরিষদ। আর বাকি ৬টি পদ পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। বিবেধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সুফল হিসেবেই এই জয় পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমন্বয় পরিষদের নেতারা। নির্বাচনের তফসিল ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সুপারিনটেন্ডেন্ট নিমেষ চন্দ্র দাস জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবার বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ। এ বছর নির্বাচনে ৫ হাজার ২৮ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ২৩ ও ২৪ মার্চ সকাল ১০টা থেকে মাঝে ১ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তিনি আরও জানান, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪ পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সম্পাদকীয় ৭ ও নির্বাহী সদস্যের ৭টি পদ রয়েছে। ১ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল এবং ১৩ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ধার্য করা হয়েছে বলে জানান নিমেষ চন্দ্র দাস।
×