ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন মন্ত্রণালয়ের প্রবল আপত্তি

সংরক্ষিত বন কেটে টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় বিপিসি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সংরক্ষিত বন কেটে টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় বিপিসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল (এসপিএম) নির্মাণ করতে মহেশখালীর ১৯১ একর জমির সংরক্ষিত বন কেটে উজাড় করতে চায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। অভিযোগ উঠেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এর মধ্যে ওই জমি কব্জায় নিতে দেন-দরবারও শুরু করেছে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বলছে আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বন ইজারা দেয়ার কোন বিধান নেই। গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরাসরি জ্বালানি তেল সরবরাহে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এটি নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ঠিকাদার হিসেবে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপ লাইন ব্যুরোকে (সিপিপি) মনোনীত করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। জ্বালানি বিভাগ বলছে এতে সরকারের প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হবে। তবে মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ জমি থাকলেও বনের জমির দখল চাওয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে গোল বেঁধেছে। বন বিভাগ বলছে জ্বালানি বিভাগ যে ভূমি চাইছে তা পাহাড়ী এলাকায় এখানে প্রাকৃতিক বন রয়েছে। এখানে গত বছরই বন বিভাগের সিআরপিএআর প্রকল্পের আওতায় ২০ হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। বাকি জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই বনভূমি রয়েছে। এখানে চলতি অর্থবছরে নতুন বৃক্ষরোপণের কর্মসূচীও হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। এই এলাকায় বন বিভাগের ঝাপুয়া বিট অফিসও রয়েছে। যেখান থেকে এই এলাকায় ম্যানগ্রোভ বাগান ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। বন বিভাগ সূত্র বলছে দেন-দরবার করা ১৯১ একর বা প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে প্রাকৃতিক বন থাকায় বনে বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল গড়ে উঠেছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অপরিহার্য। বন ভূমি ইজারা দিলে বৃক্ষ এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে কোন ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- চালালে তরল জ্বালানির দূষণে ভূমি ক্ষয়, ভূমি ধস ছাড়াও মাটি এবং পানিতে দূষণের পাশাপাশি প্রকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথমে বিপিসি বন বিভাগের কাছে জমি ইজারা চাইলে তারা লিজ প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে বিদ্যুত জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপিসির প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে পরিবেশ এবং বনমন্ত্রীর কাছে আধা সরকারী পত্র (ডিও লেটার) দেন। বন এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বার বার ফিরিয়ে দেয়ার পরও জ্বালনি বিভাগ থেকে জমি কব্জায় নিতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সংরক্ষিত বনভূমি ইজারা দেয়ার কোন বিধান না থাকার কথা বলা হলেও তারা তা শুনতে চাইছেন না। পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালের বননীতি অনুযায়ী দেশের সংরক্ষিত বনভূমি সরকার প্রধানের অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেয়ার বিধান নেই। এ ছাড়া সুপ্রীমকোর্ট এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিভিন্ন আদেশেও সরকারী বনভূমি ইজারা না দেয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যর একটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের সিভিল পিটিশন ১৪৫৭ এবং ১৪৫৮ নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালে সরকারী জমি ইজারা দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চীন ও বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মাদার ভেসেল থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরবরাহ করা যাবে। ফলে জ্বালানি তেল চুরি রোধ এবং পরিবহন ব্যয় বাঁচবে বিপিসির। এখন ২০ হাজার টনের একটি জাহাজ বাংলাদেশে আসার পর তেল খালাস করতে ২১ দিন সময় লাগে। টার্মিনাল নির্মিত হলে এ কাজে সময় লাগবে ১২ দিন। এতে প্রতি টন তেল হ্যান্ডলিংয়ে পাঁচ ডলার সাশ্রয় হবে। মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ ফাঁকা জমি থাকলেও বিপিসি বনের জমি চেয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে জটিলতা সৃষ্টি করেছে, যা এসপিএমের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেবে।
×