ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে হবে, স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য আসে না

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে হবে, স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য  আসে না

রহমান শোয়েব, চবি ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘তরুণ প্রজন্মই জাতির প্রাণশক্তি ও সমাজ পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। কারণ স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য আসে না।’ রবিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন। চবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রী প্রদান করেন। তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনকারীদের মধ্যে প্রফেসর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ, শুকলা রক্ষী ও আব্দুস সালেক মোল্লাকে নিজ হাতে ডিগ্রী প্রদান করেন। চবির চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। এছাড়াও সমাবর্তনে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চবির সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ চসিক সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপরই স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এরপর রাষ্ট্রপতি ডিগ্রী প্রদান করেন। বক্তব্য শেষে সমাবর্তন বক্তা ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান রাষ্ট্রপতি ও উপাচার্য। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান চবি উপাচার্য। তারপর রাষ্ট্রপতি চবিকে ক্রেস্ট দেন, যা গ্রহণ করেন চবি উপাচার্য। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে উচ্চ শিক্ষায় গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উচ্চশিক্ষার পরিধিও আজ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে আমাদের অবিরাম তৎপরতা চালাতে হবে। বাড়াতে হবে গবেষণার ক্ষেত্রও।’ তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে চবির অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনিবার্য নাম। ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা-সব কিছুর এমন মেলবন্ধন সহজে লক্ষ্য করা যায় না।’ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও নাস্তিক আখ্যা দিয়ে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক ও অন্যান্য হত্যাকা-ের ঘটনায় ক্ষোভ ঝরে পড়ে ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জ্ঞানচর্চার পরিবেশ যেসব কারণে বিঘিœত হতে যাচ্ছে, তার একটি হলো সহনশীলতা ও উদারতার অভাব।’ তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে আমরা দেখছি, ব্লগার হত্যা করা হচ্ছে তাদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে। আবার যেসব প্রকাশক ব্লগারদের বইপত্র প্রকাশ করছে তাদেরও হত্যা করা কিংবা হত্যার প্রচেষ্ট নেয়া হচ্ছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান ও চবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শিক্ষার ক্রমবর্ধমান স্ফীতি ও চাহিদার কারণে সামনের দিনে হয়তো উচ্চশিক্ষা আরও কষ্টসাধ্য ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। স্বাগত বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ যে সনদ তুলে দেয়া হলো সেটি আসলে দায়িত্ব- দায়িত্বই তাকে অর্পণ করা হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। এদিক থেকে দেখতে গেলে তার সনদ একটা পত্রবিশেষ আর তার যোগ্যতাকে কিছু সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করে দেয়া হয়।’
×