ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

নেত্রকোনার ননী ও তাহেরের মামলার রায় এ মাসেই হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

নেত্রকোনার ননী ও তাহেরের মামলার রায় এ মাসেই হতে পারে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চলতি মাসে আরও একটি মামলার রায় আশা করছে প্রসিকিউশন পক্ষ। নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের নেতা ওবায়দুল হক তাহেরের মামলার রায় চলতি মাসেই হতে পারে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীলের আমৃত্যু কারাদ- রায়ে খালাস চেয়ে চলতি সপ্তাহেই রিভিউ করবে বলে জানা গেছে। এর আগে ১২ জানুয়ারি সাঈদীর সাজা বৃদ্ধি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ৬ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির শীর্ষ নেতা আলবদর বাহিনীর প্রধান বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেশ বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, ‘ক্লায়েন্ট যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মীর কাশেম আলীর আপীল শুনানির জন্য ২ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জনকণ্ঠকে বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে বর্তমান একটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। আমি আশা করছি চলতি মাসেই নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের নেতা ওবায়দুল হক তাহেরের মামলার রায় হতে পারে। ১০ জানুয়ারি বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে নতুন-পুরনো মিলে আরও ৩২টি মামলা রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে তারকাখচিত আসামিদের বিচার শেষ হয়েছে। বর্তমানে জেলা ও থানা পর্যায়ের মামলা আসছে। এ সমস্ত মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কিছু মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মৌলবীবাজারের আলাউািদ্দন চৌধুরী, লালমিয়া, মোঃ মতিন মিয়া, নেত্রকোনার মহসীন হায়দার চৌধুরী, সালামত উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর পাচাইয়া রাজাকার, আব্দুল খালেক তালুকদার, আলবদর কমান্ডার সামছুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার ইউনুস মৌলবী, ভালুকাজানের রাজাকার আজিজ হাবলু, রাজাকার আব্দুল মতিন, রাজাকার আজিজ হাবলু, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, গাইবান্ধার আবু ছালেহ মোঃ আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া আজিজ, হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী, ঢাকার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন হোসেন, গোপালগঞ্জের এনায়েত মোল্লা, নোয়াখালীর আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, পটুয়াখালীর আয়নাল খাঁ, মোঃ আশ্রাব আলী খাঁ, বাহ্মণবাড়িয়ার এমদাদুল হক, যশোরের সাখাওয়াত হোসেন, সাতক্ষীরার আব্দুল খালেক ম-ল, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী, জামালপুরের আশরাফ হোসেন, কিশোরগঞ্জের এটিএম নাসির, ময়মনসিংহের এম এ হান্নান, শামসুল হোসেন তরফদার, মোঃ এছাহাক সিকদার, সোলায়মান মোল্লা ও আহম্মেদ আলী। নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৩ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধের অভিযোগে ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ॥ রাষ্ট্রপক্ষের পরে চলতি সপ্তাহে আপীল মামলার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানাবেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এ রিভিউ আবেদনে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও খালাসের আরজি জানানো হবে। এর আগে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ- জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা বৃদ্ধি অর্থাৎ মৃত্যুদ- চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছে। ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনসহ ৬৫৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসি পুনর্বহালে ৫টি যুক্তি দেয়া হয়েছে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেন। এর ফলে সাঈদীকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। দেড় বছর পর গত ৩১ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে। মানবতাবিরোধী মামলায় প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর সাঈদী আপীল করলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে রায় দেয়, তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ প্রদান করেন।
×