ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মবিরতিতে অচলাবস্থায় প্রতিটি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

কর্মবিরতিতে অচলাবস্থায় প্রতিটি ক্যাম্পাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেল ইস্যুতে শিক্ষকদের ডাকা কর্মবিরতিতে চারদিন ধরে অচল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আগের দিন দিনের মতো বৃহস্পতিবারও স্থবির ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। অনুষ্ঠিত হয়নি ক্লাস। সেমিস্টার/কোর্স ফাইনাল ছাড়া কোন ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী ও আন্দোলনরত শিক্ষকরা শীঘ্রই সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সমাজে শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে। সরকার শিক্ষকদের মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অত্যন্ত আন্তরিক। শিক্ষক নেতারা বলছেন, আশা করি শীঘ্রই শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ এবং সম্মানজনক সমাধান হবে। শিক্ষকদের কর্মবিরতির চতুর্থ দিন নায়েমে কলেজ অধ্যাপকদের জন্য প্রণীত প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন জাতীয় বেতনস্কেলে বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল ব্যবস্থা বিলোপ হওয়ায় উপরের ধাপে উন্নীত হওয়ার ইস্যুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকরা কর্মসূচী দিয়েছেন। শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল ব্যবস্থা বিলোপের ফলে বেতনস্কেলের উপরের ধাপে উন্নীত হওয়া সংক্রান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। তিনি বলেন, সমাজে শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে। সরকার শিক্ষকদের মান মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অত্যন্ত আন্তরিক। নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সচিব মোঃ মঞ্জুর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষক নেতা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের কলা ভবন সংলগ্ন বটতলায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে চমৎকার আইডিয়া রয়েছে। আমরা তাদের ক্লাসের ক্ষতি পুষিয়ে দেব। চলমান সঙ্কটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানেরও আশা প্রকাশ করেন তিনি। শিক্ষাজীবনের ক্ষতি বিষয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বলেন, আমরা এ ব্যাপারটা নিয়ে কনসার্ন। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষতির সম্মুখীন করতে চাই না। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়। আমরা আমাদের ক্লাস রুমে ফেরত যেতে চাই। আমাদের শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করে সেশনজট দূর করেছে। আমরা চাই না আবার সেশনজট ফিরে আসুক। এজন্য আমরা দ্রুত সমাধান চাই। আন্দোলন চলবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক। আলোচনা-আন্দোলন এক সঙ্গে চলবে। এদিকে চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে প্রতিটি ক্যাম্পাস। এদিনও বন্ধ ছিলো কর্মসূচীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস। সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া অন্য সকল পরীক্ষাও এদিন অনুষ্ঠিত হয়নি। কলাভবন, ব্যবসা অনুষদ এবং কার্জন হলসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দিচ্ছেন। গান-গাইছেন এবং ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম চললেও ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ আবারও বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে সেজন্য অর্থমন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন। শিক্ষকদের দায়ী করা যাবে না। কারণ শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য মাসের পর মাস আমরা অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে এখন ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কর্মসূচীর কারণে যদি দীর্ঘমেয়াদে সেশনজট হয় তাহলে আমাদের (শিক্ষকদের) করার কিছু থাকবে না। কারণ আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েই কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না, ততদিন কর্মবিরতি চলবে। ঢাকা ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষকরা। হয়নি কোন ক্লাস পরীক্ষা। প্রশাসনিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও খুব নগন্য। তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ। চলতে দেখা যায়নি জবির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। পাঠকশূন্য অবস্থায় রয়েছে জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। যাত্রীশূন্য অবস্থায় যাতায়াত করছে জবির পরিবহন। সরকার ও রাজনীতির ছাত্র রায়হান বলছিলেন, কর্মবিরতির কারণে আমাদের পরীক্ষা ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। পরীক্ষা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি, জানি না কবে শেষ হবে পরীক্ষা। জবি শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, জবি শিক্ষক সমিতি সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। দৃশ্যমান কোন ফলাফল ব্যতীত কর্মবিরতি বন্ধ হবে না। এছাড়া শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় একই রকম ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এবং মিডটার্মসহ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও বন্ধ ছিল। শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বেও কর্মবিরতি পালন করছেন। কার্যত অচল হয়ে আছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের পদমর্যাদা, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি চলছে। কর্মবিরতির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্লাস, মিডটার্ম পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো বন্ধ থাকছে। গত ২ জানুয়ারি ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষকরা।
×