ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নেই চিকিৎসা উপকরণ, বেশির ভাগ ডাক্তার ওএসডি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

নেই চিকিৎসা উপকরণ, বেশির ভাগ ডাক্তার ওএসডি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ৯ জানুয়ারি ॥ অধিক জনসংখ্যা অধুষিত হলেও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাস্তবে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই। রাজধানী সংলগ্ন ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এর মধ্যে পুরুষ ও মহিলা বেডের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ ও ২০টি। অপারেশন থিয়েটার রয়েছে ২টি। এর মধ্যে একটি পরিবার পরিকল্পনা রুম। হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর অভাব থাকলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কমতি নেই। হাসপাতালটিতে ১৮ জন চিকিৎসক বরাদ্দ থাকলেও আছেন ২৫ জন। তবে, এদের অধিকাংশই ওএসডি। ওএসডিরা কর্মস্থলে না আসায় সঙ্গত কারণেই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। আর অন্যান্য চিকিৎসকদের ওপর চাপ পড়ছে বেশি। রোগীদের সামাল দিতে তাদের অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়। হাসপাতালটিতে ইউএইচও, আরএমও, ইএমও, প্যাথলজি, দন্ত, অন্তর্বিভাগ এ একজন করে ও বহির্বিভাগে ২ জন চিকিৎসক দায়িত্বে আছেন। কনসালটেন্ট ১০ জনের মধ্যে আছেন ৮ জন। মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে কোন কনসালটেন্ট নেই। মেডিক্যাল অফিসারকেই অতিরিক্ত হিসেবে এ দুটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাসপাতালটিতে এ্যাম্বুলেন্স মাত্র ১টি। সেটারও আবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার মতো অবস্থা। ইউএইচও’র জন্য সরকারী কোন গাড়ি বরাদ্দ নেই। তাই প্রয়োজনে রোগীদের পরিবর্তে একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সই ব্যবহার করতে হয় তাকে। নার্সের সংখ্যা ১৫ জন হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এদের মধ্যে কয়েকজন আবার ইচ্ছে মাফিক চলে থাকেন। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক আয়া-সুইপার। কর্মরত আছে মাত্র ৩ জন সুইপার ও ৩ জন আয়া। নাইট গার্ড ২ জন থাকলেও দিনের বেলায় ডিউটির জন্য নেই কোন গেটম্যান। রোগীদের রান্নার জন্য কোন বাবুর্চি বরাদ্দ নেই। টিকেট কাউন্টারে কোন লোক নেই। মালি আমিনুল ও ঝাড়ুদার আয়েশাকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অপারেশন করার ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয়। জেনারেটর থাকলেও নেই কোন তেল বরাদ্দ। রাতের বেলায় বিদ্যুত গেলে রোগীদের তখন মোমবাতিই একমাত্র ভরসা। গরমের দিনে বিদ্যুত না থাকলে রোগীদের অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি- আমিনবাজার ও বিরুলিয়ায় সাব-হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে আমিনবাজার সাব-হেলথ কেয়ার সেন্টার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও খাদ্য বরাদ্দ, আয়া-সুইপারসহ অন্য কোন সুবিধা না থাকায় শুধু এখানে বহির্বিভাগ চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে আরএমও একজন, ইএমও একজন ও ছয়জন কনসালটেন্ট রয়েছেন। বিরুলিয়ায় আছেন শুধু একজন ইএমও। ইউনিয়নগুলোতে নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় ফ্যামিলি প্ল্যানিং ভবনে কাজ করা হয়। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা হেলথ কমপ্লেক্সেই বসে থাকেন। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আমজাদুল হক বলেন, এ উপজেলার লোকসংখ্যা অনেক বেশি। অথচ সরকারীভাবে সকল হাসপাতালেই একই বরাদ্দ। লোকসংখ্যা অনুসারে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমন হয়েছে, অপারেশন থিয়েটারে রোগী নেয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতও চলে গেছে। আর বিদ্যুত কখন যায়, কখন আসে- তার কোন ঠিক নেই। জেনারেটর থাকলেও তেলের কোন বরাদ্দ নেই। একটিমাত্র এ্যাম্বুলেন্স, তাও অধিকাংশ সময়েই বিকল হয়ে থাকে। আর প্রয়োজনের তুলনায় অন্যান্য সেকশনের জনবলের স্বল্পতার কারণে তাদের রোগীদের সেবা দিতে অনেক বেগ পেতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও সঠিক সেবা দিতে পারেন না। ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, বিভিন্ন ক্লিনিক ও ল্যাররেটরির দালালচক্র যাতে রোগীদের সেবা প্রদানে কোন বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে- সেদিকে সব সময় নজর রাখা হচ্ছে।
×