ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন কাজে বাধা দিয়ে মানুষকে ভোগাবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

উন্নয়ন কাজে বাধা দিয়ে মানুষকে ভোগাবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটারদের ‘কুকুর’ বলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে বলেছেন, রাজাকার-আলবদর ও পাকিস্তানের হয়ে কথা বলেন, এটা জনগণ বরদাস্ত করবে না। দেশের মানুষকে ‘কুকুর’ বলার মতো ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর এমন ঔদ্ধত্য, নোংরা মন্তব্য দেশের জনগণ মুখ বুঝে সহ্য করবে না। এ জন্য বাংলার জনগণের কাছে খালেদা জিয়ার তওবা ও ক্ষমা চাইতে হবে। মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা ও ভোটারদের কুকুর বলার জবাব দেশের জনগণের কাছে দিতে হবে। আর মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশের জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস দেখাতে না পারে। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার যায়নি, শুধু পুলিশ আর কুকুর ছিল’- এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে নিয়ে এতবড় নোংরা কথা বলার অধিকার খালেদা জিয়াকে কে দিয়েছে? এতবড় নোংরা ও জঘন্য কথা উনার মুখে সাজে। উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কেউ যায়নি। ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর শুয়ে ছিল। ভোট দিলে কুকুরই দিয়েছে, মানুষ ভোট দেয়নি।’ এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন বানচালের নামে শত ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যাখ্যান করে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ ভোটার সাহসের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এ নির্বাচনে শুধু ভোটারই নন, বিপুল সংখ্যক নির্বাচনী অফিসার, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরাও দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ উনি (খালেদা জিয়া) সবাইকে কুকুর হিসেবে দেখেছেন? উনার দৃষ্টিতে সব কুকুর হয়ে গেল! কী অডাসিটি (ঔদ্ধত্য) তাঁর? মানবসন্তান ও ভোটারদের কুকুর হিসেবে দেখলেন। দেশের মানুষকে কুকুর বলার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে? তিনি বলেন, একমাত্র জলাতঙ্ক রোগ হলেই নাকি মানুষের চোখে কুকুরের বাচ্চাই দেখে। এ কারণে উনি (খালেদা জিয়া) এখন সবাইকে কুকুর দেখছেন। উনাকে কোন কুকুর কামড়িয়েছে? তাঁর মতো নেত্রীর মুখেই দেশের মানুষকে এমন গালি দেয়া সাজে। সরকার উৎখাত ও নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি নেত্রী শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। ড্রাইভার-হেলপার, শিশু-বৃদ্ধ কেউই তাঁর আগুন সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। কী অপরাধ ছিল এসব নিরীহ মানুষের? উনি আন্দোলনের নামে ঘরে বসে থেকে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সতীশ চন্দ্র রায়সহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রাথমিকভাবে আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের সম্ভাব্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সম্মেলন সফল করতে প্রস্তুতি কমিটি, বিভিন্ন উপ-কমিটিও গঠন করা হয়। এছাড়া বৈঠকে পৌর নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়। সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সরকার উৎখাতের নামে গত বছর ৯২ দিন ধরে নাশকতা চালিয়ে বিএনপি নেত্রী ৬৮ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। হত্যার শিকার এসব নিরীহ মানুষের পরিবারের কী দুরবস্থা কেউ কি তা ভেবে দেখেছে। আর যারা পোড়া শরীর নিয়ে এখনও দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে, তাদের এ অবস্থার জবাব কে দেবে? তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াতের নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, নাশকতা, সহিংসতা ও দেশকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র অতীতে দেশের মানুষ কখন দেখেনি। অতীতে এমন রাজনীতি কখনও হয়নি। তিনি বলেন, উনি আমাকে গালি দেয় দিক। কিন্তু আমাকেও গালি দেয়ার আগে তাঁর (খালেদা জিয়া) আয়নায় নিজের চেহারা আগে দেখা উচিত। ভেতন-ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবারে ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধির ইতিহাস বিশ্বের কোন দেশে নেই। বিশ্বের কোন দেশই একসঙ্গে এতবেশি বেতন বৃদ্ধি করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের অবস্থা হয়েছে, বেশি পেলেই নিজেদের প্রেস্টিজ, মর্যাদা ও সম্মানের কথা মনে পড়ে। বেতন এতবেশি বাড়িয়েছি বলেই এখন প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি। কম বেতনের টানাটানির সময় এসব তাদের মনে পড়ত না। এত কিছু করার পরও কিছু কিছু মহল কেন তুষ্ট হলো না তা জানি না। কিন্তু চাকরির ডিসিপ্লিন কারোর ভঙ্গ করা উচিত হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের বিরোধিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কল্যাণ ও সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করছি। অনেক স্থানের সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই সেখানে একটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। আর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে রেললাইন ছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়েই ট্রেন চলেছে, তখন তো কেউ বাধা দেয়নি। এখন মেট্রোরেল যাবে উপর দিয়ে, এখানে বাঁধা কেন? তিনি বলেন, হঠাৎ করেই কিছু জায়গায় থেকে বিরোধিতা করে বলা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ হলে নাকি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষতি হবে! তিনি বলেন, পড়াশুনা করতে চাইলে বাস-ট্রেনে চলতে চলতেও করা যায়। শুধুমাত্র এ অজুহাত দিয়ে বিরোধিতা করা সরকারের উন্নয়ন বন্ধ করতেই করা হচ্ছে কি না তা জানি না। উন্নয়নে বাধা দেয়া হলে উন্নয়ন হবে কীভাবে? শিক্ষার্থীরা তিন-চার বছর পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে কর্মজীবনে ফিরে যায়। আর দেশের মানুষের স্থায়ী সমস্যার সমাধান করতেই এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি সবার প্রতি অনুরোধ করব সরকারের উন্নয়ন কাজে দয়া করে বাধা দেবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শিকার করবেন না। ১৯৯১ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচন নিয়ে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দেন। বাস্তবে ওই নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তখন জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামীর সমর্থন নিয়ে আমরা (আওয়ামী লীগ) সরকার গঠন করতে পারতাম। নির্বাচনের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ আমাকে বঙ্গভবনে ডেকেছিলেন। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি, তাই কারোর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করব না। বিরোধী দলেই থাকব। এরপর জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতা গিয়েছিল। এককভাবে নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী জাতি বিজয়ী জাতি। আমরা কখনও মাথা নিচু করে চলব না। আমরা যে দেশের উন্নয়ন করতে পারি তা প্রমাণ করেছি। দেশকে সর্বক্ষেত্রে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্বাবলম্বী করে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দেশ এখন খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। বিশ্বমন্দা মোকাবেলা করে আমরা দেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আর দেশ কেন এগিয়ে যাচ্ছে, কেন দেশের উন্নতি হচ্ছে- এ কারণে অশান্তিতে ভুগছেন বিএনপি নেত্রী। তিনি বলেন, আজ দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে, রফতানিও বেড়েছে। সব সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই তাদের ছিটমহল নিয়ে হানাহানি ও যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু আমরা স্থল সীমানা চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করেছি। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এ কারণে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বীকৃতি দিচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেল বলছে। এটা বিএনপি নেত্রীর সহ্য হচ্ছে না বলেই দেশের জনগণকে নোংরা ভাষায় গালি দেয়ার মতো ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই- কেউ এই অগ্রযাত্রার গতিরোধ করতে পারবে না। বাঙালী জাতি নিম্ন আয়ের দেশে থাকবে না। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যবিত্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবেই ইনশাল্লাহ।
×