ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মওকুফের জন্য নানা মহলে দেনদরবার

মোবাইল অপারেটররা ট্যাক্সের তিন হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২ জানুয়ারি ২০১৬

মোবাইল অপারেটররা ট্যাক্সের তিন হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না

ফিরোজ মান্না ॥ সাড়ে তিন বছর ধরে দেশের চার শীর্ষ মোবাইল অপারেটর তিন হাজার কোটি টাকার বেশি সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স দিচ্ছে না। এনবিআর এই ট্যাক্স আদায়ের জন্য অপারেটরদের চিঠির পর চিঠি দিলেও অপারেটররা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। তারা এই ট্যাক্স মওকুফের জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় যাচ্ছে। এর আগে তারা অর্থমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েও ট্যাক্স মওকুফ করাতে পারেনি। এবার তারা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে। গত মাসের গোড়ারদিকে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অপারেটররা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা দ্রুত তাদের সমস্যার সমাধান চান। যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে এই সেক্টরে তারা বড় ধরনের বিনিয়োগে যাবে না। তবে বিটিআরসি জানিয়েছে, মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাওনা টাকা নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। বিটিআরসির পক্ষ থেকেও টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। সূত্র জানিয়েছে, তিন বছর ধরে সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স হিসেবে এনবিআর চারটি অপারেটরের কাছে মোট তিন হাজার দশ কোটি টাকা পাওনা দাবি করেছে। গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা এক হাজার ৫৬২ কোটি, বাংলালিংকের কাছে ৭৬২ কোটি, রবি’র কাছে ৬৪৭ কোটি ও এয়ারটেলের কাছে ৩৯ কোটি টাকা এনবিআর পাওনা দাবি করে আসছে। কিন্তু এই টাকা অপারেটররা দিতে রাজি নয়। তারা বলছে, সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স দিয়েই তারা গ্রাহকদের সিম দিচ্ছে। এখানে নতুন করে আবার ট্যাক্স দিতে হলে একই সিমের জন্য দু’দফা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হলেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি। এখন অপারেটরদের এই জটিলতা দূর না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে টুজি (দ্বিতীয় প্রজম্মের ফোন) ও থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের ফোন) স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ নিলামে তারা অংশ নেবে না। এদিকে এই চার অপারেটরের মূল কোম্পানিগুলোও জানিয়েছে, কয়েক বছরের পুরনো এ সমস্যার সমাধান না হলে তারা আর বড় ধরনের বিনিয়োগে যাবে না। নতুন করে মোবাইল সেক্টরে যন্ত্রপাতি বসাবে না। অথচ আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন না করলে এই সেক্টরে গ্রাহক সেবার মান অনেক কমে যাবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বরাবর চিঠিও দিয়েছে তারা। গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনর, বাংলালিংকের মূল কোম্পানি ভিম্পেলকম, রবি’র মূল কোম্পানি আজিয়াটা এবং এয়ারটেলের মূল কোম্পানি ভারতীয় এয়ারটেল যৌথভাবে এই চিঠি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও কোন ফল হয়নি। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট সব দফতরেই গেছে। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীসহ আরও ওপর মহলে তুলে ধরা হবে। প্রতিমন্ত্রী সমস্যার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে একটি সারসংক্ষেপ নিয়েছেন। অপারেটরদের সমস্যা জিইয়ে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন। অন্যদিকে এনবিআর বলছে, মোবাইল অপারেটরদের বদলে দেয়া সিমের ৭৯ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত হয় না। একজনের সিম আরেকজনকে দেয়া হচ্ছে। আর এজন্য প্রতিটি সিমের ওপর তারা ছয় শ’ টাকা হারে ট্যাক্স দাবি করেছে। বর্তমানে সিমপ্রতি ট্যাক্স তিন শ’ টাকা। মোবাইল অপারেটররা এনবিআরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলছে, ২০১০ সালের আগে সিম নিবন্ধনের জন্য সরকারের দিক থেকে কোন নির্দেশনাই ছিল না। ফলে সঠিক নিবন্ধন না হওয়া বা অন্য কোন কারণে একজনের সিম অন্যজনের কাছে গিয়ে থাকলে তার দায় তাদের হতে পারে না। এই সমস্যার কারণে গত তিন বছরে তাদের কম করে হলেও তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে গেছে। এই বিনিয়োগ করতে পারলে গ্রাহক সেবার মান আরও বাড়ত। সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স মওকুফসহ এই সেক্টরে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর না হলে মোবাইল সেক্টরে বড় ধরনের ধস নামতে পারে। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন যে হারে বেড়েছে-একই হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অপারেটররা জানিয়েছে, এই সেক্টরে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করতে হয়। কারণ প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে পারলে গ্রাহক সেবার মান কমবেই। বিষয়টি মাথায় রেখে মোবাইল অপারেটরদের সমস্যার সমাধান করা জরুরী বলে তারা মনে করছে। বিটিআরসির উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই টাকা যাতে না দিতে হয় সেজন্য অপারেটররা আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আমরা এসব মামলা লড়ছি। আশা করা যাচ্ছে এই টাকা আদায় হবে।
×