বিডিনিউজ ॥ প্রতিটি পথশিশুর পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এ দুই মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিচ্ছি, একটি শিশুও আবাসন ছাড়া থাকবে না। মানবেতর জীবনযাপন করবে না। ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে, এই শিশুদেরও খাওয়াতে পারব।”
একটি বেসরকারী সংস্থার প্রতিবেদনে ‘৩৪ লাখ শিশুর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর’ তথ্য এসেছে জানিয়ে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন।
শিশু অধিকার সপ্তাহের ছয়দিনের কর্মসূচী উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করানোর ওপরও জোর দেন।
দেশের প্রতিটি শিশুর মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন যারা শিশু, আগামীতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দেবে।
আগামীদিনের শিশুদের জন্য বাসযোগ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে দিয়ে যেতে চাই। আমাদের বর্তমান আমরা আগামীদিনের শিশুদের জন্য উৎসর্গ করছি।
সম্প্রতি দেশে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, অনেকে শিশুদের বাড়িতে নিয়ে আসে কাজ করতে। তাদের লেখাপড়ার অধিকার আছে। ওই শিশুটা ফ্রিজ থেকে একটা মিষ্টি খেলে এভাবে মারে.. এটা মেনে নেয়া যায় না।
শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রীকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুর প্রতি অভিভাবক ও সহপাঠীদের সংবেদনশীল হওয়ার অনুরোধও জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জন্ম থেকে কেউ কানা হয়, খোঁড়া হয়, চিন্তাশক্তির সমস্যা থাকে। এটা তাদের অপরাধ না।”
মিলনায়তনে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের টিজ করবে না- এটা অপরাধ। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ কাউন্সিলিং করানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাতে করে একসময় তারা অন্য শিশুদের সঙ্গে মিলে যেতে পারবে।
স্কুলে ভর্তির পদ্ধতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের নিজ নিজ এলাকার স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে বলেন।
তারা যদি লেখাপড়া শিখে ছাপানো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে তাহলে আর স্কুল কি শেখাবে? প্রাক-প্রাইমারি বা প্রাইমারি তাদের কি শেখাবে? বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিশুরা যে এলাকায় বসবাস করে সে এলাকার স্কুলে ভর্তি হওয়া তাদের অধিকার। সরাসরি তাদের আগে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটা যেন সমন্বয় করা হয়, তারা যেন লক্ষ্য রাখে কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।
শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা না চাপানোর তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি সব স্কুলে খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ও বিজয়ের ইতিহাস প্রতিটি শিশুকে এখন থেকেই জানতে হবে। না হলে তারা জীবনযুদ্ধে জয়ের অনুপ্রেরণা পাবে না।”
এছাড়া সারা দেশে স্কুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্কুল ছুটির পর শিশুদের রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার, আজিমপুর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ছাত্রী সানজিদা আফরোজ স্মৃতি এবং মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সুবিধাভোগী প্রকল্পের আওতায় মহাখালীর আব্দুল হালিম বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হাশেম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম।