ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি আরব ঐক্য ভাঙ্গনের পথ ধরে হাঁটছে? মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে আরব ঐক্য গড়ে তোলার আশা-আকাক্সক্ষা অত্যন্ত নৈরাশ্যজনক হয়ে পড়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর ও ইরাক-ইরান সীমান্তের মধ্যবর্তী বিশাল অঞ্চলের ব্যাপক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরবভাষীদের রাষ্ট্র্রগুলোর মধ্যে একটি কনফেড়ারেশন গড়ে তোলার ধারণা আজ এক বিভ্রমে পরিণত হয়েছে। অথচ আরব অঞ্চলে এ কনফেডারেশন গঠিত হলে এর সম্পদ রাজনৈতিক শক্তি ও সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগত এ অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হতো। লন্ডনে ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার এক সংবাদপত্রে এ মন্তব্য করা হয়েছে। ভাষ্যকার লিখেছেন, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে আরব বন্ধুদের কাছ থেকে যে প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি, সেগুলো এখন অনুধাবন করা যায় এবং তা হচ্ছে গ্রিসের কি অন্যায় হয়েছে? তা কি গ্রিসের দুর্নীতি? দেশটির সামন্তবাদী সম্পদও দারিদ্র্যের মিশ্রণ? তা কি দেশটির ভাগ্য নিরূপণের সিদ্ধান্ত অন্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা? এগুলো তো আরবের জন্য যুক্তিসঙ্গত নয় সম্ভবত এবং কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এটা কি ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে নির্বিঘেœ মেশার জন্য ইউক্রেনের যে প্রচ- ইচ্ছে রয়েছে, তাকে প্রশ্রয় দেয়ার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেয়ার প্রস্তুতি? কিন্তু একই সঙ্গে এ ইউনিয়নের মধ্যে গ্রিক সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থ সরবরাহে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় সম্প্রদায়। আয়ারল্যান্ড তার অর্থনৈতিক সঙ্কট কিভাবে কাটিয়ে উঠেছে অথচ গ্রিস তা পারলো নাÑ এ কথা অনেকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে আমাকে। এ কথা অবশ্য স্বীকার করব। আয়ারল্যান্ডের ওপর ব্রিটেনের ৮শ’ বছরের নির্যাতনের ব্যাপারে আমি অনেক বলেছি। আমি গ্রিসের ব্যাপারে ভীত। শিল্প, দর্শন, এ্যারিস্টোটলীয় আদর্শের ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও ২০ শতকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশে পরিণত হয়েছে গ্রিস।
ইউরোপীয় নেতারা শিশিরসিক্ত চোখে ১৯৮১ সালে গ্রিসকে যখন ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত করে তখন তারা এশিয়া মাইনরের আক্রমণ, ব্যাপক জনসংখ্যা বিনিময়, শতাব্দীব্যাপী দুর্নীতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি দখলদারিত্ব, গৃহযুদ্ধ, কর্নেলের একনায়কত্ব, সাইপ্রাস আক্রমণ ও অন্যান্য বিষয় এড়িয়ে গেছেন। গত কয়েক বছর ধরে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ তিনটি দেশ স্পেন, পর্তুগাল, ও ইতালির ব্যাপারে আমি শঙ্কিত। দেশগুলো নাৎসি জার্মানির চেয়ে অধিক সময় ভোগ করেছে ফ্যাসিবাদী শাসন। গ্রিসের সহযোগী নেতাদের অন্যতম স্টাইরিয়স গোৎজা মানিজ এক ‘নতুন ইউরোপ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার বার্লিন প্রভু হিটলারের জন্য এক দীর্ঘ লেখা লিখেছেন। যা হিটলারের ন্যাশনাল সোস্যালিজমের চেয়ে ব্যাপক। গোৎজা মানিজ এ নতুন ইউরোপ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল পরবর্তী ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে উদ্ভট সাদৃশসুলভ। ইউরোপীয় অর্থ ব্যবস্থা, একটি মাত্র শুল্ক ব্যবস্থা ও দ্বিনাগরিকত্ব ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘নতুন ইউরোপে’। প্রতিবেদনের লেখক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, গোৎজা মানিজ হিটলারের ‘নিউ অর্ডার’ বা নতুন বিধিবিধানের একজন সমালোচক ছিলেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: