ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপুল পাসপোর্ট, জাল ভিসা, বিমান টিকেট উদ্ধার

মানবপাচার চক্রের আরও চার সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৪ জুন ২০১৫

মানবপাচার চক্রের আরও চার সদস্য গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মতিঝিল থেকে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আনা চার জন উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৮৫০টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের জালভিসা, বিমান টিকেট, সাগরপথে পাচারের জন্য শিপিং লাইনের ৪০টি ডিসচার্জ সনদপত্র, বিভিন্ন দূতাবাসের জাল সিল, প্যাডসহ নানা সরঞ্জাম। এদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়াদের মধ্যে ৫৮ জনকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে। এরমধ্যে বুধবার রাতে ৪১ জনকে থাইল্যান্ড থেকে এবং ১৭ জনকে মঙ্গলবার রাতে ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফেরত আনার কথা রয়েছে। গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্ব¡র সংলগ্ন শাপলা ভবনে অভিযান চালায় সিআইডি পুলিশ। অভিযানে গ্রেফতার হয় মহিদুল ইসলাম (৪৫), হিম্মত আলী (৩৮), মোঃ রাসেল (২৩) ও মোঃ উজ্জল খান (২০)। তাদের কাছ থেকে জাল পাসপোর্ট, সাগরপথে মানব পাচারের শিপিং লাইনের ডিসচার্জ জাল সনদপত্র, ইরাক, দুবাই, লিবিয়া, মোজাম্বিক, মিসর, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, ইথিওপিয়া, মালয়েশিয়া, নাইরোবিসহ বিভিন্ন দেশের জালভিসা, এয়ার টিকেট, বিভিন্ন বিমানবন্দরের এরাইভ্যাল, ইমিগ্রেশন জাল সিল, বিভিন্ন দূতাবাসের জাল সীল, প্যাড ও কালি উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, মোঃ আশরাফুল ইসলাম (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৩৫), আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও মোঃ সাইফুল ইসলামকে (২৪) উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ জানান, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচার করে আসছে। তারা আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। টাকার বিনিময়ে তারা জাল পাসপোর্ট ও ডিসচার্জ জাল ভিসা বানিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের প্রধান টিপু সুলতান, মজিবর রহমান ও ইসমাইল হোসেন এবং গ্রেফতারকৃত চারজনসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মানবপাচারের সঙ্গে বিভিন্ন সিন্ডিকেট জড়িত। বিশেষ করে পাচারচক্রের সঙ্গে বিমানবন্দরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীরসহ সিআইডির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পাচারের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৪১ জন বাংলাদেশীকে থাইল্যান্ড থেকে বুধবার রাতে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত সাইদা তাসনিম মুনা। মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি আরও জানান, পাচারের শিকার হওয়াদের এক মাসের মধ্যে দেশে ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে তাদের ফেরত আনা হচ্ছে। এছাড়া আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আরও প্রায় ২৩০ জনকে কয়েক ধাপে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরত আনা হবে। এর আগে দুই ধাপে থাইল্যান্ড থেকে ৮৭ জন ও ১১৭ জনকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সাল থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯৪ জন বাংলাদেশীকে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করে থাইল্যান্ড পুলিশ। এর মধ্যে ৯১৯ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ মিশন। বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়াদের মধ্যে আরও ১৭ জনকে ইন্দোনেশিয়া থেকে মঙ্গলবার গভীররাতে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে তাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। ফেরত আসা বাংলাদেশীদের সমূদ্রপথে পাচার করা হয়েছিল। পাচারের পর তাদের আন্দামান সাগর থেকে উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়া সরকার। ফেরত আনা সতেরো জনকে উদ্ধারের পর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে রাখা হয়েছিল। কিভাবে, কারা তাদের পাচার করেছিল তা জানতে, ফেরত আসার পর ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে সিআইডির। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য মোতাবেক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারে অভিযান শুরু হবে।
×