ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি

বাউফলের সাথী এখন শুধু ফ্রেমে বাঁধা ছবি

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

বাউফলের সাথী এখন শুধু ফ্রেমে বাঁধা ছবি

কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল ॥ বাউফলের অজপাড়াগাঁয়ের মেয়ে সাথী, স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে এখন শুধু ফ্রেমে বাঁধা একটি ছবি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকার হন তিনি। সেই থেকে আজ অবধি তিনি নিখোঁজই রয়ে গেলেন। সাথীর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের দাশপাড়া গ্রামে। স্বামীর নাম খোকন মাতবর। এ ঘটনার চার বছর আগে বিয়ে হয় তাঁদের। ফারজানা নামের পাঁচ বছর বয়সের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁদের। একটি অভাবী পরিবারের সুখ ফিরিয়ে আনতে জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে সাভার যান সাথী। সেখানে ইমান্দীপুর চৌরাস্তার কাছে আব্বাস মিয়ার বাড়িতে একটি বাসা ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজের খোঁজে নামেন। কাজও পেয়ে যান। ওই এলাকায় রানা প্লাজার চতুর্থ তলার একটি গার্মেন্টস সেকশনে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে হেলপার পদে চাকরি নেন তাঁরা। দু’জনের এ স্বল্প বেতনের টাকা দিয়ে কোনরকম সংসার চলছিল। রানা প্লাজা ধসের ৫-৭ দিন আগে সাথীর স্বামী খোকন মাতবর অন্য একটি গার্মেন্টসে বেশি বেতনে চাকরি পেলে ওই চাকরিটি ছেড়ে দেন। কিন্তু সাথী আর চাকরিটি ছাড়েননি। তিনি রানা প্লাজায়ই কাজ করছিলেন। ঘটনার দিন (২৪ এপ্রিল) সাথী তাঁদের একমাত্র সন্তান ফারজানাকে খাবার খাইয়ে শাশুড়ির কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই একসঙ্গে বাসা থেকে বেড় হয়ে যান। এরপর ঘটল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। সারা দুনিয়ায় সংবাদের প্রধান শিরোনাম হয়ে যায় রানা প্লাজা। খবর পেয়ে স্ত্রী সাথীর খোঁজে ঘটনাস্থলে চলে যান খোকন। ধ্বংসস্তূপের ভয়াবহতা দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া জীবন্ত মানুষের বাঁচার আকুতি তাঁকে আরও ব্যাকুল করে তোলে। এ বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে কোথায় খুঁজবেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী সাথীকে। এরপর উদ্ধার অভিযান শুরু হলে আশায় বুক বেঁধে দিনরাত কাটান সেখানে। কত মানুষকে জীবিত বের করে আনা হচ্ছে, আবার কত মানুষের লাশ বের হয়ে আসছে। কিন্তু তার মধ্যেও তিনি স্ত্রীকে খুঁজে পাননি। সেই থেকে আজও নিখোঁজ রয়ে গেলেন তিনি। সাথীর স্বামী খোকন মাতবর জানান, রানা প্লাজা ধসের ১০-১২ দিন আগে তিনি স্ত্রী সাথী ও মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে সাভারের ইমান্দীপুর চৌরাস্তায় একটি স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তোলেন।
×